Header Ads Widget

চিয়া বীজ : পুষ্টিগুণ, উপকারিতা এবং কীভাবে খাবেন



চিয়া বীজ : পু্টিগুণ, উপকারিতা এবং কিভাবে খাবেন

এই ব্লগ পোস্টে আমরা বাংলায় চিয়া বীজ কি, চিয়া বীজের পুষ্টিগুণ, চিয়া বীজ খাওয়ার উপকারিতা এবং যদি চিয়া বীজ খাই তাহলে কতো পরিমাণ খাবেন এবং কিভাবে খেতে পারেন এই সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো ।

আজ সারা দুনিয়ায় কোটি কোটি স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ এই ছোট্ট দানাগুলিকে একটি সুপারফুড হিসাবে মেনে নিয়েছে এবং এগুলিকে গ্রহণ করে তাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাচ্ছেন । কিন্তু তা সত্তেও বলতেই সেই সংখ্যাটি অত্যন্ত কম । কারণ বেশিরভাগ মানুষ এখনো চিয়া বীজ আসলে কি, সত্যিই এর পুষ্টিগুণ কতোটা, এটি খাওয়ার ফলে সত্যিই কি আমরা কোন স্বাস্থ্য লাভ পেতে পারি আর যদি বা পাই তাহলে সেগুলি কি অথবা চিয়া বীজ কতোটা কিভাবে খেতে হবে ইত্যাদি সংশয় এবং দ্বিধাগ্রস্ততায় ভোগেন । আর তা্ই আজ আমরা এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে চিয়া বীজ সম্পর্কে সেই সব সংশয় ও দ্বিধাগুলিকে দূর করার চেষ্টা করবো ।

চিয়া বীজ কী? 

চিয়া হলো উদ্ভিদজগতের মিন্ট পরিবারের একটি উদ্ভিদের বীজ, যা মূলত: মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার মেক্সিকো ও গুয়াতেমালা নামক দেশে বেশি পরিমাণে জন্মায় । মায়ান, অ্যাজটেক ও ইনকাদের প্রাচীন সংস্কৃতিতে এটিকে দীর্ঘকাল ধরে শক্তি ধরে রাখার জন্য একটি খাবার হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে । আর সম্ভবত: সেই কারণেই এই সমস্ত প্রাচীন সভ্যতার যোদ্ধাদের এগুলি খাবার হিসাবে পরিবেশন করা হতো ।

  • চিয়া বীজ সাধারণত: কালো, সাদা বা ধূসর রঙের হয় ।
  • বীজগুলি সাধারণভাবে ২ মি.মি-র চেয়ে ছোট এবং আকারে গোলাকার হয় ।
  • এটি সাধারণত: স্বাদহীন, আর সেই জন্য যেকোন ধরনের খাবারের সাথে মিশিয়ে এটিকে খাওয়া যেতে পারে ।

চিয়া বীজের পুষ্টিগুণ

প্রতি ১০০ গ্রাম এবং ২৮ গ্রাম (১ আউন্স) পরিমাণ চিয়া বীজে উপলব্ধ পুষ্টি-উপাদানের পরিমাণ একটি চার্টের মাধ্যমে দেখানোর চেষ্টা করা হলো -

পুষ্টি-উপাদান

প্রতি ১০০ গ্রামে

২৮ গ্রাম (১ আউন্স)

% দৈনিক মূল্য (২৮ গ্রাম)

ক্যালোরি

৪৮৬ কিলোক্যালরি

১৩৮ কিলোক্যালরি

৭%

প্রোটিন

১৬.৫ গ্রাম

৪.৭ গ্রাম

৯%

ফ্যাট

৩০.৭ গ্রাম

৮.৭ গ্রাম

১৩%

ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড

১৭.৮ গ্রাম

৫ গ্রাম

৫০০%

কার্বোহাইড্রেট

৪২.১ গ্রাম

১২ গ্রাম

৪%

ডায়েটারি ফাইবার

৩৪.৪ গ্রাম

১১ গ্রাম

৪৪%

ক্যালসিয়াম

৬৩১ মিলিগ্রাম

১৭৭ মিলিগ্রাম

১৮%

আয়রন

৭.৭ মিলিগ্রাম

২.২ মিলিগ্রাম

১২%

ম্যাগনেসিয়াম

৩৩৫ মিলিগ্রাম

৯৫ মিলিগ্রাম

২৪%

ফসফরাস

৮৬০ মিলিগ্রাম

২৪৪ মিলিগ্রাম

২৪%

জিঙ্ক

৪.৬ মিলিগ্রাম

১.৩ মিলিগ্রাম

৯%

ভিটামিন বি১ (থিয়ামিন)

০.৬২ মিলিগ্রাম

০.১৮ মিলিগ্রাম

১৫%

সূত্র : ইউ.এস.ডি.এ জাতীয় পুষ্টিকর ডাটাবেস

বিশেষ বিশ্লেষণ :

ওমেগা ৩ : মস্তিষ্ক, হৃদপিণ্ড এবং শরীরের জয়েন্টগুলিকে সুস্থ রাখতে ওমেগা-৩ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে । কিন্তু ওমেগা-৩ খুঁজে পাওয়ার একমাত্র উপায় সামুদ্রিক খাবার খাওয়া নয়, ভেগান বা অন্যান্যদের জন্য চিয়া বীজ ওমেগা-৩ য়ের একটি দুর্দান্ত উৎস ।

ফাইবার :  আমাদের শরীরে খাবার হজম এবং শোষণ করার জন্যে ফাইবার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান । এটি শুধু আমাদের হজমশক্তিতে সাহায্য করা ছাড়াও দীর্ঘক্ষণ পেট ভরার অনুভূতি দিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করতে দেখা যায় । বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ ডায়াটেশিয়ান এবং ডায়াবেটিক স্পেশালিস্টরা ডায়াবেটিক রোগীদের ফাইবার যুক্ত খাবার খাওয়ার জন্যে পরামর্শ দেন । সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, চিয়া বীজের উচ্চ ফাইবার কন্টেন্ট আমাদের শরীরের দৈনিক চাহিদার প্রায় ৪৪% অবধি পূরণ করতে পারে ।

ক্যালসিয়াম : ক্যালসিয়ামের জন্য অনেকেই দুধ বা দুগ্ধজাত খাবরের উপর নির্ভর করেন । তাদের জন্য চিয়া বীজ একটি সমাধান হতে পারে, কারণ উপরের চার্ট লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন যে দুধের তুলনায় এই ছোট্ট দানার চিয়া বীজের থেকে আমরা প্রায় ৫ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম পেতে পারি । যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন অস্থি বা অস্থিসন্ধিগুলির খেয়াল রাখতে বিশেষ সাহায্য করতে পারে ।

চিয়া বীজের উপকারিতা

চিয়া বীজ খাওয়ার উপকারিতা

) বিপাক বৃদ্ধি পায় এবং ওজন হ্রাস পায়

চিয়া বীজে থাকে প্রচুর ফাইবার, যা পেটে যাওয়ার পরে জলের সঙ্গে মিশে একটি জেলী জাতীয় পদার্থ তৈরী করে । যা আপনাকে অনেকক্ষণ ধরে পেট ভরার অনুভূতি দেয় । যা আপনাকে বাড়তি ক্যালোরি বার্ণ করতে উৎসাহিত করে । ২০১৭ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রায় ছয় মাস ধরে দৈনিক চিয়া বীজ খাওয়ার ফলে প্রায় ৩০% পর্যন্ত পেটের চর্বি কম করতে সাহায্য করতে পারে ।

২) হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে পারে

আমাদের শরীরে ওমেগা-৩ এবং ফাইবার খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমাতে এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়াতে সাহায্য করে । যেহেতু চিয়া বীজ এই দুটি উপাদান দ্বারাই সমৃদ্ধ তাই সামগ্রিকভাবে এটি হার্টকে ভালো রাখতে এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে ।

৩) ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো খাবার

বর্তমান দিনে ডায়াবেটিক রোগীদের ডাক্তাররা এবং পুষ্টিবিদেরা উচ্চ ফাইবার সম্পন্ন খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন । কারণ, ফাইবার উপাদান খাবার হজম করতে সাহায্য করার পাশাপাশি রক্তে গ্লুকোজের শোষণের হারকে কমিয়ে দিতে পারে । যেহেতু চিয়া বীজ একটি উচ্চ ফাইবার সম্পন্ন খাবার তাই ডায়াবেটিক রোগীরা এটি পরিপূরক হিসাবে গ্রহণের মাধ্যমে তাদের ফাইবারের চাহিদা পূরণ করতে পারেন ।

৪) হাড় এবং দাঁতের ক্ষতি এড়াতে সাহায্য করে

চিয়া বীজের মধ্যে উচ্চ পরিমাণ ক্যালসিয়াম (প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৬৩১ মিলিগ্রাম) এবং সেইসঙ্গে ফসফরাসের উপস্থিতির জন্য এটি হাড়ের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি দাঁতকে শক্তিশালী করে তুলতেও সাহায্য করে ।

৫) বার্ধক্য রোধ করে এবং ত্বকে উজ্জ্বলতা আনে

আমাদের শরীরে ফ্রি-র‌্যাডিক্যালসের মারাত্মক প্রভাব গুলির মধ্যে ত্বাকের সমস্যা অন্যতম । আর এই ফ্রি-র‌্যাডিক্যালসগুকি শরীর থেকে বার করে দেওয়ার জন্য প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টগুলি দারুণভাবে সাহায্য করে । চিয়া বীজের মধ্যে উপলব্ধ দু’টি অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট (কোয়ারসেটিন এবং ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড) এই কাজে ব্যাপকভাবে সাহায্য করতে সক্ষম । আর সেই কারণেই চিয়া বীজের গ্রহণের সুদূরপ্রসারী ফল হিসাবে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বজায় রাখা এবং দ্রুত বার্ধক্য রোধে সাহায্য করে ।

৬) মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে

ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড উপাদান মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিশেষত: মস্তিষ্কের নিউরোনাল যোগাযোগ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে । যেহেতু চিয়া বীজ প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ, এটি গ্রহণের ফল হিসাবে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করার সঙ্গে সঙ্গে  অ্যালঝাইমারের মতো সমস্যা প্রতিরোধেও সাহায্য করে ।

কত পরিমাণে এবং কিভাবে চিয়া বীজ খাওয়া উচিত?

পরিমাণ :

  • প্রতিদিনের খাবার হিসাবে এটিকে আরম্ভ করার প্রথম দিকে দিনে ১ চা চামচ (প্রায় ৫ গ্রামের মতো) চিয়া বীজ দিয়ে শুরু করা উচিত ।
  • প্রতিদিন, ১-২ টেবিল চামচ যুক্ত করে (১৫-৩০ গ্রাম) অবধি করে রোজ সেই পরিমাণ গ্রহণ করা অভ্যাস করুন ।
  • যদি কোন ব্যক্তি প্রচুর পরিমাণে শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করেন, তাহলে তার ক্ষেত্রে ৭-৮ টেবিল চামচ (প্রায় ৩৫-৪০ গ্রাম) চিয়া বীজ খাওয়া চলতে পারে ।

সময় :

  • সকালে যখন আপনার পেট খালি থাকবে তখনই এটা খাওয়ার সেরা সময় ।
  • যারা সকালে এক্সারসাইজ বা ওয়ার্কআউট করেন, তারা এক্সারসাইজ শুরু করার ৪০-৪৫ মিনিট আগে চিয়া বীজ খেয়ে নেওয়ার পরে এক্সারসাইজ করলে ভালো লাভ পাবেন ।

খাওয়ার উপায় :

১) খুব ভালো হয় যদি এক কাপ জল অথবা এক কাপ দুধে এক চামচ মতো চিয়া বীজ ভিজিয়ে রাখা যায় । যদি সম্ভব না হয়, তাহলে অন্তত: আধ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে দই অথবা কলা বা ওটস সহযোগে স্মুদি বানিয়ে নিন এবং গ্রহণ করুন ।

২) বাজার থেকে নিয়ে আসা শুকনো চিয়া বীজ গ্রাইন্ডারে গুঁড়ো করে একটি বায়ুনিরোধী কন্টেনারে রেখে দিতে পারেন । অবশ্য এখন অনেক প্রস্তুতকারক বায়ুনিরোধক কন্টেনার সহযোগেই পরিবেশন করছেন । এরপরে আপনার সুবিধামতো এবং পছন্দমতো স্যালাড বা স্যুপের সঙ্গে, ডাল বা তরকারিতে যোগ করে, স্মুদিতে অথবা প্রোটিন শেকের সঙ্গেও যোগ করে এটাকে খেতে পারেন ।

৩) আগের রাত থেকে ভিজিয়ে রাখা চিয়া বীজকে গ্রাইন্ডারে দিয়ে স্প্রেডারের মতো বানিয়ে নিন । তারপরে ভেজ স্যান্ডউইচ বা এগ স্যান্ডউইচের মধ্যে এটিকে স্প্রেডারের মতো করে লাগিয়ে খাওয়া যেতে পারে ।

সতর্কতা :

হাইড্রেশন : চিয়া বীজ প্রচুর তরল শোষন করে, সুতরাং এটা খেলে প্রচুর পরিমাণে জল পান করা উচিত, নয়তো এটি আপনার শরীর থেকে তরল পদার্থ শোষণ করে নেবে্এবং ডি-হাইড্রেশনের সম্মুখীন হতে পারেন ।

অ্যালার্জি : খুব অল্প পরিমাণে খাওয়া শুরু করে খেয়াল রাখতে হবে যে কোনরকম অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া লক্ষণ করা যাচ্ছে কিনা । যদি কোন প্রতিক্রিয়া না দেখা দেয় তাহলে পরিমাণ বাড়াতে পারেন, নয়তো বন্ধ করে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন ।

চিয়া বীজের তিনটি সহজ রেসিপি

১) অ্যাভোকাডো চিয়া পুডিং

উপকরণ : এটি তৈরী করার জন্য ২ টেবিল চামচ মতো চিয়া বীজ, ১ কাপ মতো  নারকেলের দুধ, একটি অর্ধেক অ্যাভোকাডো, ১ চা চামচ মধু যোগাড় করে নিন ।

প্রণালী : সমস্ত উপাদানগুলি যোগাড় হয়ে গেলে সেগুলিকে নিয়ে একটি ব্লেন্ডারে দিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন । তারপরে দীর্ঘ সময়, সম্ভব হলে রাতভর ঠান্ডা করে নিন । জমাট হয়ে গেলে পুডিংয়ের মতো করে গ্রহণ করুন ।

২) চিয়া এনার্জি বার

উপকরণ : এই রেসিপিটি বানানোর জন্যে রাতভর ভেজানো আধ কাপ পরিমাণ চিয়া বীজ, এক কাপ মতো ওটস, ১/৪ কাপ পরিমাণ মধু এবং কিছু পরিমাণ ভেজানো বাদাম যোগাড় করে রাখুন ।

প্রণালী : সমস্ত উপকরণগুলিকে একত্রিত করে ব্লেন্ডারে দিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন এবং একটি পরিষ্কার পাত্রে তুলে নিয়ে কমপক্ষে ঘন্টাখানেকের জন্য বা তার বেশি সময় ফ্রিজে রেখে দিন । তারপরে ছোট্ট ছোট্ট বারের মতো টুকরো টুকরো করে নিন এবং উপভোগ করে খান ।

৩) ডিটক্স চিয়া লেমনেড

এক লিটার মতো বিশুদ্ধ পানীয় জল, আগের থেকে গুড়ো করে রাখা দুই টেবিল চামচ চিয়া বীজ, একটা গোটা পাতিলেবুর রস এবং কিছু পুদিনা পাতা একত্রিত করে ব্লেন্ডারে দিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিতে হবে । তারপরে একটি পরিষ্কার ছাকনী দিয়ে ছেকে তরল অংশটিকে আলাদা করে নিয়ে কিছুক্ষণের জন্য ফ্রিজে রেখে শরবতের মতো পান করুন । বাড়তি স্বাদের জন্য অল্প মধু যোগ করতে পারেন । 

 

প্রায়শ:ই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)

১) চিয়া বীজ খেলে কি কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করতে পারে?

উত্তর) : চিয়া বীজের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার উপাদান থাকে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে এবং এর স্বাভাবিক জেল কন্টেন্ট পিচ্ছিল করে অন্ত্রের মধ্যে দিয়ে  মলকে যাওয়ার সুবিধা করে দেয় । তবে এটি খাওয়ার সময় খেয়াল রাখা দরকার যেন শরীর কোন অবস্থাতেই ডি-হাইড্রেটেড না হয় এবং তার জন্য প্রচুর জল পান করতে হবে, নইলে এটি শরীর থেকে তরল শোষণ করে বিপরীত অবস্থা তৈরী করতে পারে ।

২) ক্যান্সারে আক্রান্তদের জন্য চিয়া বীজ খাওয়া কি নিরাপদ?

উত্তর) : যেহেতু চিয়া বীজের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকে এবং এটি স্বভাবিক ভাবে ফ্রি-র‌্যাডিক্যালসগুলিকে শরীর থেকে বার করতে সাহায্য করে । তাই এটি ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য সহায়ক হতে পারে বা ক্যান্সারের চিকিৎসায় কেমোথেরাপির ফলে উদ্ভূত উপসর্গগুলি থেকে আরাম দিতে পারে । কিন্তু মনে রাখতে যে, এটি কখনোই ক্যান্সারের ওষুধ বা চিকিৎসার পরিপূরক হতে পারে না । আর ক্যানসারের চিকিৎসা চলাকালীন পেশেন্টের অন্তর্নিহিত অবস্থাজনিত সাবধানতার জন্য এটি গ্রহণের আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত ।

৩) চিয়া কি ফ্লাক্স সীডের চেয়ে ভালো?

উত্তর) : আসলে চিয়া বীজ এবং ফ্লাক্স সীড দু’টোই দানাজাতীয় হওয়ার জন্যে এইরকম সংশয় তৈরী হয় । কিন্তু মনে রাখতে হবে পুষ্টিগত এবং গুণগত দিক দিয়ে এরা অনেকটাই আলাদা । চিয়া বীজের মধ্যে আমরা প্রধানত: ক্যালসিয়াম, ফাইবার এবং অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট ইত্যাদি পুষ্টি-উপাদান গুলিকে পেতে পারি । অন্যদিকে ফ্লাক্স সীডের মধ্যে বিশেষ উপাদান হিসাবে পাও্য়া যায় লিগন্যান নামক এক ধরনের বিশেষ অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, যা আমাদের শরীরের হরমোনের ভারসাম্য রক্ষায় বিশেষ সাহায্য করে । সুতরাং গুণগত এবং পুষ্টিগত বিচারে এদের দু’জনের তুলনা না করে প্রয়োজন এবং চাহিদা অনুসারে এদের গ্রহণ করা উচিত ।

৪) কিডনি রোগীরা কি নিরাপদে চিয়া বীজ খেতে পারেন?

উত্তর) ; চিয়া বীজে প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস থাকে, তাই তারা কিডনীর উপর অযথা চাপের সৃষ্টি করতে পারে । তাই যদি কারো কিডনিতে পাথর বা দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের সমস্যা থাকে, তাহলে এগুলি গ্রহণ না করাই ভালো হবে ।

৫) চিয়া বীজ তাজা রাখার সর্বোত্তম উপায় কী?

উত্তর) : চিয়া বীজের প্যাকেট বা বাক্স বাজার থেকে কিনে আনার পরে সেগুলিকে একটি বায়ুরোধী কন্টেনারের মধ্যে ভরে রেফ্রিজারেটরে রেখে দেওয়া যেতে পারে । যদিও বর্তমানে বহু প্রস্তুতকারক কোম্পানীই বায়ুনিরোধক কন্টেনারে এগুলি পরিবশন করছেন । ফ্রিজে না রাখলে, অবশ্যই এমন কোন স্থানে এগুলিকে রাখতে হবে যেখানে প্রচুর সূর্যালোক পৌছায় না এবং স্থানটি যথেষ্ট পরিমাণে শুষ্ক ।

৬) চিয়া বীজ খাওয়ার কোন নেতিবাচক প্রভাব আছে কি?

উত্তর): খুব বেশি পরিমাণে চিয়া বীজ খাওয়ার ফলে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে –

- পেটে গ্যাস হওয়া বা পেট ফোলা

- যদি আপনি ওয়ারফারিন বা সেই জাতীয় কোন ওষুধ খান, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিয়া বীজ খাবেন, কারণ এটির মধ্যে ফলে রক্ত পাতলা করার প্রবণতা দেখা যায় ।  

- চুলকানি হওয়া, র‌্যাশ বেরোনো বা ফুসকুড়ি সম্পর্কিত অসুবিধা হতে পারে


সব শেষে.....

যদি আপনি প্রাকৃতিক উপায়ে এবং স্বাভাবিক ভাবে সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে চান তাহলে এটিকে আপনার খাদ্য-তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতেই পারেন । আর যদি আপনার কোন অন্তর্নিহিত কোন স্বাস্থ্য-সমস্যা থাকে, যেমন-ডায়াবেটিস, রক্তচাপ, কিডনীর সমস্যা ইত্যাদি থাকে, তাহলে চিয়া বীজকে আপনার দৈনন্দিন খাদ্য-তালিকায় যুক্ত করার আগে অবশ্যই একবার আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত । কারণ আপনার স্বাস্থ্যজনিত সমস্ত তথ্য তার জানা থাকার কারণে তিনি আপনাকে সেরা পরামর্শ দিতে পারবেন । আশা করি সাধারণ ভাবে চিয়া বীজ সম্পর্কে যেসব সংশয় থাকে সেগুলি আমাদের এই আলোচনার মধ্যে দিয়ে দূর করা গেছে । পোস্টটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে এবং কার্যকরী বলে মনে হয়, তাহলে শেয়ার করার জন্য অনুরোধ রইলো ।

ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, চিকিৎসা নয়-সুস্থতার দিকে নজর দিন এবং তার জন্যে প্রাকৃতিক প্রতিকার গুলির উপরে নজর দিন । 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ