প্রাকৃতিক উপায়ে মেনোপজ ব্যবস্থাপনা : লক্ষণের উপশম এবং ভারসাম্যের কৌশল

 

এই ব্লগ পোস্টে আমরা মহিলাদের মেনোপজের লক্ষণগুলি, যেমন গরম ঝলকানি অনুভব করা, মেজাজের পরিবর্তন এবং ঘুমের সমস্যার মোকাবিলা করার জন্য প্রাকৃতিক ধারণা বা পদ্ধতিগুলি সম্পর্কে আলোচনা করবো । সেইসঙ্গে আপনি হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখার উপায়গুলি সম্পর্কেও জানতে পারবেন, যার মধ্যে বিভিন্ন খাদ্য পরিকল্পনা এবং ভেষজ প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা থাকবে ।

মোটামুটিভাবে মহিলারা ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সের মধ্যে মেনোপজের লক্ষণগুলি অনুভব করেন, কারণ এইসময় তাদের শরীর কম ইস্ট্রোজেন তৈরী করে, যার ফলে তাদের ঋতুচক্র বন্ধ হয়ে যায় । স্বাভাবিকভাবেই সমস্ত মহিলারাই এই সময়ের মধ্যে দিয়ে যান, কিন্তু গরম ঝলকানি অনুভব করা এবং অকস্মাৎ মেজাজের পরিবর্তন হওয়া ইত্যদি লক্ষণগুলি তাদের দৈনন্দিন জীবনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করতে পারে । ওষুধ খাওয়া ছাড়াও বিভিন্ন প্রাকৃতিক প্রতিকারের মাধ্যমে সেগুলির দেখভাল করা যেতে পারে । এই ব্লগ পোস্টে আমরা সেরকমই কিছু প্রাকৃতিক কৌশল এবং প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করবো । যেগুলির সাহায্যে আপনারা নিজেরাই প্রাকৃতিক উপায়ে মেনোপজের লক্ষণগুলির মোকাবিলা করতে পারবেন ।

মেনোপজের লক্ষণগুলিকে বোঝা

মেনোপজের প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা শুরু করার আগে সর্বপ্রথমে আমাদের জানতে হবে মেনোপজের সময় মহিলারা সাধারণত কী ধরণের লক্ষণগুলির মধ্যে দিয়ে যেতে পারেন –

গরম ঝলকানি অনুভব এবং রাতের ঘাম

শরীরে ব্যাপক হরমোনের পরিবর্তনের কারণে গরম ঝলকানি বোধ করা, যা আপনাকে যেকোন সময়ে বিশেষত: রাতে প্রচন্ড ঘামযুক্ত করে তুলতে পারে । গরম ঝলকানি অনুভব করা এবং রাতের ঘাম মেনোপজের অত্যন্ত সাধারণ লক্ষণ, যা বেশিরভাগ মহিলার ক্ষেত্রেই সাধারণ লক্ষণ হিসাবে দেখা যায় । হরমোনের ভারসাম্য পরিবর্তনের কারণে যখন শরীরের তাপমাত্রা আচমকা বেড়ে যায় তখন মহিলারা গরম ঝলকানি অনুভব করেন এবং সেইসময়ে ঘাম হতে পারে । এমনকি কারো কারো ক্ষেত্রে ত্বকের বর্ণ লালও হয়ে উঠতে পারে ।

অকস্মাৎ মেজাজের পরিবর্তন

শরীরের বিভিন্ন ধরনের হরমোনের পরিবর্তনের কারণে এবং তাদের সঠিক ক্রিয়া-প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ায় মহিলারা অযথা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠতে পারেন, অকস্মাৎ বিরক্তি বোধ করতে পারেন অথবা নিজেকে সঠিক অনুভব করতে না পারার মতো অনুভূতি আসতে পারে ।

ঘুমের বিভিন্ন সমস্যা

মেনোপজের লক্ষণ হিসাবে মহিলাদের মধ্যে ঘুমের বিভিন্ন সমস্যা আসতে পারে । ঘুম না আসা, আচমকা ঘুম ভেঙে যাওয়া, ঘুমের সময় ঝলকানি অনুভব করা বা প্রচুর ঘাম হতে থাকা ইত্যাদি সমস্যার মতো লক্ষণগুলি দেখা দিতে পারে ।

যোনির শুষ্কতা অনুভব করা

মেনোপজের একটি লক্ষণ হিসাবে অনেক মহিলাই যোনির শুষ্কতা অনুভব করতে পরেন । আবার অনেকে এর সঙ্গে ব্যথা বা অস্বস্তিও অনুভব করতে পারেন । অনেক সময়েই এই লক্ষণগুলি উদ্বেগ বা মানসিক সমস্যারও কারণ হয়ে উঠতে পারে ।

ওজন বৃদ্ধি ঘটতে পারে

বিভিন্ন সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, মেনোপজের সময়ে মহিলাদের শরীরে হরমোনের ব্যাপক পরিবর্তনের কারণে বিপাক ক্রিয়া ধীর হয়ে যায় । আর এর ফল হিসাবে প্রায়শ:ই মহিলাদের উদর বা তার সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলিতে মেদ জমে ওজন বৃদ্ধি ঘটে ।

কুয়াশাচ্ছন্ন মস্তিষ্ক  

শরীরে কিছু হরমোনের পরিবর্তন এবং কিছু হরমোনের কম নি:সরণের ফলে মহিলাদের মধ্যে এই সময়ে প্রায়শ:ই ভুলে যাওয়ার মতো সমস্যা বা মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে না পারার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে ।

স্বাভাবিকভাবে মেনোপজ কীভাবে পরিচালনা করবেন

১) হরমোন-ভারসাম্যপূর্ণ ডায়েট গ্রহণ করুন

আমরা সাধারণভাবে যেসব খাবার খাই, তা কোন মহিলার ক্ষেত্রে শরীরের হরমোনের পরিবর্তনকে সমর্থন করতে না-ও পারে । তাই এমন কিছু খাবার খাওয়ার দিকে মনোযোগ দিতে হবে, যাতে একজন মহিলা তার এই সময়কার শরীরের হরমোনের পরিবর্তনের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে বা মেনোপজের লক্ষণগুলিকে পরিচালনা করতে সাহায্য করতে পারে -   

ফাইটো-ইস্ট্রোজেন-সমৃদ্ধ খাবার

এমন কিছু খাবার আছে, যেগুলিতে এমন কিছু রাসায়নিক যৌগ বা উপাদান থাকে যা শরীরে ইস্ট্রোজেনের মতো কাজ করে বা ইস্ট্রোজেনের নি:সরণকে সমর্থন করে এবং মেনোপজের লক্ষণগুলিকে কমাতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে ।

সয়াজাতীয় পণ্য : টোফু, টেম্পে, এডামামে এবং মিসো ইত্যাদি প্রচুর ফাইটো-ইস্ট্রোজেন সরবরাহ করে ।

ফ্লাক্স সীড বা তিসির বীজ : প্রতিদিন সকালে আপনার পাত:রাশে ওটমিল বা স্মুদিতে ১ বা ২ চা চামচ গুঁড়ো ফ্লাক্স সীড বা তিসির বীজ যোগ করুন ।

ডাল : খাবারে বিভিন্ন ভাবে ছোলা, মসুর ডাল এবং কিডনি বীনস যোগ করুন ।

হাড় শক্তিশালীকারী পুষ্টি উপাদান

শরীরে ইস্ট্রোজেনের নিম্ন স্তর একজন মহিলার ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে অস্টিওপোরোসিসের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে । তাই হাড় শক্তিশালীকারী পুষ্টি উপাদানগুলিকে অগ্রাধিকার দিন –

ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার : পাতাযুক্ত সবুজ শাক, বাদাম, দুধ বা দুগ্ধজাত খাদ্যদ্রব্য খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী ।

ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার : স্বাস্থ্যসম্মত সৌর বিকিরণ গ্রহণ করা এবং ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিত । তবে স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা থাকলে ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ খাবার হিসাবে চর্বিযুক্ত মাছ শুধুমাত্র আপনার ডাক্তারের অনুমতির পরেই গ্রহণ করুন । তাছাড়াও অতিরিক্ত সরবরাহকারী হিসাবে খাদ্য-পরিপূরক গ্রহণ করতে পারেন ।

ট্রিগারগুলিকে এড়িয়ে চলুন

মশলাদার খাবার এবং ক্যাফেইন : প্রচুর মশলাদার খাবার, অতিরিক্ত তেল-ঝাল যুক্ত খাবার শরীরের গরমের ঝলকানির অনুভবকে আরো খারাপ করে তোলে ।

অ্যালকোহল এবং চিনি : এইগুলি গ্রহণ করা থেকে দূরে থাকাই ভালো । কারণ এগুলি ঘুম  এবং হরমোনের ভারসাম্য ব্যাহত করে ।

২) সঠিক ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরকে সক্রিয় রাখুন

সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত শারীরিক ক্রিয়াকলাপের মিশ্রণ শরীরের ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে এবং মেজাজ ভালো রাখতে ও একই সাথে ভালো ঘুম পেতেও সাহায্য করে । 

মেনোপজের জন্য সেরা ওয়ার্কআউট

শক্তি প্রশিক্ষণ : শক্তি প্রশিক্ষণ ধরনের ব্যায়াম পেশী তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে, যা  শরীরকে দ্রুত শক্তির ব্যবহার করতে সাহায্য করে । তাই রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ড বা স্কোয়াটের মতো অনুশীলনগুলি অভ্যাস করার চেষ্টা করুন ।

যোগব্যায়াম : বিভিন্ন যোগাভ্যাসের মধ্যে বাচ্চাদের ভঙ্গির অনুকরণ এবং বিড়াল-গরু অনুশীলনের মতো যোগব্যয়ামের অনুশীলনের মাধ্যমে, শরীর চাপের অনুভব কম করতে পারে এবং কিছুটা নমনীয় হয়ে উঠতে পারে ।

কার্ডিও : নিয়মিত হাঁটা, সাঁতার কাটা বা সাইকেল চালানোর মতো অনুশীলনের অভ্যাসের মাধ্যমে আপনি আপনার হার্টকে সুস্থ রাখতে পারেন এবং শরীরের কিছু অতিরিক্ত ওজন কমাতে পারেন ।

টিপস : ভালো ফল পাওয়ার জন্য আপনার শরীরচর্চার পরিকল্পনায় সারা সপ্তাহে আপনাকে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট মাঝারি ব্যায়াম করতে হবে ।

৩) ভেষজ প্রতিকারের ব্যবহার করতে পারেন

সাধারণভাবে মেনোপজের লক্ষণগুলি কমানোর জন্য আমরা বেশ কয়েকটি প্রাকৃতিক বিকল্প ব্যবহার করতে পারি –

ব্ল্যাক কোহোশ

উপকার : মেনোপজের সময় কালো কোহোশ (Actaea racemosa) ব্যবহারের ফলে অনেককেই গরমের ঝলকানি অনুভব এবং মেজাজ ভালো রাখার ক্ষেত্রে উপকার পেয়েছেন বলে জানা যায় । সারা বিশ্বে এটি মেনোপজের লক্ষণগুলির নিয়ন্ত্রণের জন্য বহুল প্রচলিত একটি প্রাকৃতিক প্রতিকার ।

ব্যবহারের পদ্ধতি : সারাদিনে ২০-৪০ মিলিগ্রাম কালো কোহোশ গ্রহণ করা উচিত । তবে অন্তর্নিহিত কোন স্বাস্থ্য-সমস্যা থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুসরণ করে গ্রহণ করা উচিত ।

লাল ক্লোভার

উপকার : লাল ক্লোভারের (Trifolium Pratense)মধ্যে প্রচুর আইসোফ্ল্যাভেন উপাদান থাকে, যা শরীরে ইস্ট্রোজেনের অনুকরণ করে এবং মেনোপজের লক্ষণগুলি কমাতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করে ।

ব্যবহারের পদ্ধতি : চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে বা অন্যান্য উপায়ে সাধারণ প্রাপ্তবয়স্ক মহিলারা দৈনিক ৪০-৮০ মিলিগ্রাম লাল ক্লোভার সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন ।

অশ্বগন্ধা

উপকার : একটি শক্তিশালী প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসাবে এটি শরীরে কর্টিসেলের মাত্রা কমিয়ে মানসিক চাপ কমাতে এবং ভালো ঘুম পেতে সাহায্য করে ।

ব্যবহারের পদ্ধতি : স্বাভাবিক ভাবে একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা প্রতিদিন ৩০০-৫০০ মিলিগ্রাম অস্বগন্ধা মূলের নির্যাস পরিপূরক হিসাবে গ্রহণ করতে পারেন । তবে উচ্চ রক্তচাপ বা অন্য কোন অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে একবার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত ।

নিরাপত্তাজনিত টিপস : 

যেকোন ভেষজ প্রতিকার বা পরিপূরক গ্রহণ করার আগে আপনার   স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীকে আপনার গ্রহণ করতে চাওয়া পরিপূরক সম্পর্কে অবহিত করতে ভুলবেন না । বিশেষ করে যদি আপনি রক্তচাপ জনিত সমস্যা বা ডায়াবেটিস জনিত কোন সমস্যার মতো নিয়মিত কোন ওষুধ গ্রহণ করেন ।

৪) চাপ নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা নিন

যখন কোন মহিলা প্রায়শ:ই চাপে থাকেন, তখন গরমের ঝলকানি অনুভব করা বা মেজাজের পরিবর্তন উভয় সমস্যাই গুরতর হয়ে উঠতে পারে । সেইক্ষেত্রে চাপ নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা করতে হবে । নীচের কৌশলগুলি ব্যবহার করা যেতে পারে –

ধ্যান : প্রতিদিন যদি অন্তত: দশ মিনিটের জন্যও নিয়মিত ধ্যানের অনুশীলন করেন তাহলে তা   আপনাকে শান্ত এবং স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে সাহায্য করতে পারে । এর জন্য আপনি হেডস্পেসের মতো অ্যাপগুলির সাহায্যও নিতে পারেন ।

গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস : প্রতিদিন গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের কৌশল আপনাকে শান্ত বোধ করতে সাহায্য করতে পারে । ৪ সেকেন্ডের জন্য শ্বাস নেওয়া এবং ৬ সেকেন্ডের জন্য শ্বাস-প্রশ্বাস ছেড়ে আপনি এই অভ্যাস করতেই পারেন ।

জার্নালিং : কী বা কোন ধরনের অনুভূতি আপনাকে উত্তেজিত করে তা লিখে রাখুন এবং আপনার আবেগ নিয়ন্ত্রণের জন্য কি করা উচিত তা-ও লিখে রাখুন । আপনার চরিত্রের ভালো দিকগুলো খুজে বার করার চেষ্টা করুন এবং সেগুলি লিখে রাখুন এবং সেগুলির জন্য পরমাত্মার কাছে কৃতজ্ঞ হওয়ার চেষ্টা করুন । প্রয়োজনে কাছের মানুষদের থেকে  সাহায্য নিন ।

৫) ঘুমের স্বাস্থ্যবিধি উন্নত করুন

নীচের এই অভ্যাসগুলি আয়ত্ত করে ঘুমের স্বাস্থ্যবিধি উন্নত করুন এবং অনিদ্রার সাথে মোকাবিলা করুন –

ঠান্ডা ঘরের ব্যবহার : আপনার শোওয়ার ঘরের তাপমাত্রা ৬০-৬৭°F (১৫-১৯°C) মধ্যে রাখার চেষ্টা করুন যাতে আপনার রাতের ঘাম নিয়ন্ত্রণ করতে সুবিধা হয় ।

স্ক্রিন-মুক্ত সময় : আমাদের শরীরে ঘুমে সাহায্যকারী উপাদান হিসাবে মেলাটোনিন তৈরী হয়, যা আমাদের ভালো ঘুম পেতে সাহায্য করে । বেশিক্ষণ ধরে স্মার্টফোনের বা টেলিভিশনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে এদের স্ক্রিনের নীল আলো মেলাটোনিনের উৎপাদনের হার কমিয়ে দেয়, ফলে ঘুম ব্যাহত হয় । সুতরাং খুব প্রয়োজন ছাড়া স্ক্রিন-মুক্ত সময় কাটানোর চেষ্টা করুন ।

শয়নকালের রুটিন : যখনই আপনি শরীরে যেকোন রকমের চাপ বা উত্তেজনা অনুভব করবেন, তখনই ক্যামোমাইলা চা পান করার চেষ্টা করুন অথবা হালকা স্নান করে শরীরকে আরাম পেতে সাহায্য করুন ।

৬) যথাসম্ভব হাইড্রেটেড বা আর্দ্র থাকুন

জল : দিনে কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস জল পান করুন । যা আপনাকে পেট ফাঁপা প্রতিরোধে এবং  শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করতে পারে ।

সঠিক ময়েশ্চারাইজার : শুষ্কতার লক্ষণগুলি, বিশেষত: যোনির শুষ্কতা মোকাবিলা করার জন্য সঠিক ময়েশ্চারাইজিং পণ্য ব্যবহার করুন । প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন । 

কখন চিকিৎসা সহায়তা নেবেন

অনেকেই এইধরনের সমস্যার জন্যে প্রাকৃতিক সমাধানগুলিকে কার্যকর বলে মনে করেন এবং তার ব্যাপক লাভও পেয়ে থাকেন, তবে যদি আপনার মানসিকভাবে এই সম্পর্কে কোন দ্বিধা থাকে এবং নীচে বর্ণিত লক্ষণগুলির মধ্যে কোনটা দেখা দিয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যান ।

• তীব্র বিষণ্ণতা বা উদ্বেগ
• তীব্র গরমের ঝলক অনুভব করা, যা একজন মহিলার দৈনন্দিন রুটিনকে শুধু ব্যাহত করেই না মানসিক চাপেরও সৃষ্টি করতে পারে
• মেনোপজের পরেও যোনিপথে রক্তপাত হওয়া

 

প্রায়শ:ই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)

১) গরমের ঝলকের দ্রুততম প্রাকৃতিক প্রতিকার কী?

উত্তর) : সাধারণভাবে গরম ঝলকানির দ্রুততম প্রাকৃতিক প্রতিকারের জন্য নীচের কৌশলগুলি অবলম্বন করতে পারেন -

ঠান্ডা করার কৌশল : গলায় ঠান্ডা প্যাক লাগানো, ধীরে ধীরে ঠান্ডা জলে চুমুক দিয়ে পান করা, হাতে ধরা ফ্যান ব্যবহার করা ইত্যাদির মাধ্যমে আপনি নিজের গরমের ঝলক অনুভব করা থেকে আরাম পেতে পারেন ।

স্তরে স্তরে পোশাক : দ্বিস্তরীয় বা ত্রি-স্তরীয় পোশাকের ব্যবহার করা আপনাকে গরমের ঝলক অনুভব করার থেকে আরামদায়ক অনুভব করতে সাহায্য করে ।

২) ডায়েট করার পরেও কি মেনোপজের ফলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে?

উত্তর) : ডায়েট করার পরেও মেনোপজ দেখা দিলে শরীরে ইস্ট্রোজেনের নিম্ন স্তরের ফলে বিপাক প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায় এবং পেটের অংশে চর্বি জমা হতে পারে ।তাই নিয়মতি ব্যয়াম করে এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ এবং কম শর্করাযুক্ত খাবার খেয়ে এই সমস্যার মোকাবিলা করা যেতে পারে ।

৩) মেনোপজের উদ্বেগের জন্য কি প্রাকৃতিক পরিপূরক আছে?

উত্তর) : মেনোপজের ফলে উদ্ভূত উদ্বেগের জন্য নীচের প্রাকৃতিক পরিপূরক গুলির সাহায্য নিতে পারেন -    

ম্যাগনেসিয়াম গ্লাইসিনেট : নিয়মিত ২০০-৪০০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম গ্লাইসিনেট পরিপূরক গ্রহণের ফলে স্নায়ুতে শিথিলতা এসে উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে ।

ওমেগা-৩ : সারাদিনে ৮০০-১০০০ মিলিগ্রামের মতো ওমেগা-৩ ব্যবহারের ফলে মেজাজের পরিবর্তন ঘটাতে এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে ।

৪) মেনোপজের লক্ষণগুলি কতক্ষণ স্থায়ী হয়?

উত্তর): সাধারণত: মেনোপজের লক্ষণগুলি চার থেকে সাত বছর অবধি থাকতে পারে । তবে প্রতিটি মহিলার জন্য তার খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রা, অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্য-অবস্থা, ওষুধ গ্রহণ ইত্যাদি কারণে আলাদা সময় অবধি স্থায়ী হতে পারে ।

৫) আকুপাংচার কি মেনোপজে সাহায্য করে?

উত্তর) : গবেষণা প্রমাণ করে যে, আকুপাংচারের মাধ্যমে শক্তি প্রবাহ সঠিকভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা যেতে পারে । সপ্তাহে ১-২ টি সেশনের ব্যবহার করে গরমের ঝলকানির অনুভব কম করা এবং ঘুমের উন্নতি ঘটানো যেতে পারে ।

৬) আমি কি প্রাকৃতিকভাবে যোনির শুষ্কতা কমাতে পারি?

উত্তর) : মনে রাখবেন, মেনোপজ একটি স্বাভাবিক ঘটনা, আপনার অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্য এবং বয়স অনুযায়ী এটি ঘটবে । কিছু ক্ষেত্রে বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও প্রতিরোধ করা না-ও যেতে পারে । প্রাকৃতিকভাবে যোনির শুষ্কতা কমানোর জন্যে নীচের কৌশলগুলি অবলম্বন করতে পারেন –

ভিটামিন-ই তেলের ব্যবহার : শুষ্কতা প্রশমিত করার জন্য টিস্যু দ্বারা টপিকাল প্রয়োগ করতে পারেন ।

নিয়মিত ঘনিষ্ঠতা : বহু ক্ষেত্রে দেখা যায়, যোনিতে রক্ত ​​প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য তার টিস্যুগুলির নমনীয়তা বজায় রাখতে সাহায্য করে । তাই নিয়মিত ঘনিষ্ঠতার ফলে কিছু ক্ষেত্রে লাভ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।

 

সব শেষে ......

মেনোপজ বা তার লক্ষণগুলি প্রতিটি মহিলার জন্য পৃথক । তবে প্রাকৃতিক কৌশলগুলি অবলম্বন করার ফলে বেশির ভাগের ক্ষেত্রে ভালো ফলাফল দেখতে পাওয়া যায় । কারো ক্ষেত্রে মেনোপজকে বিলম্বিত করা বা তার লক্ষণগুলি কমানোর ক্ষেত্রে এরা উপসর্গহীন ভাবে  ভালো ফল দিতে দেখা যায় ।

 তবে ভালো ফলাফল পেতে হলে স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের সঙ্গে এগুলিকে গ্রহণ করা প্রয়োজন ।