Header Ads Widget

শশা (Cucumber) : গ্রীষ্মে শরীর ও ত্বক সুস্থ রাখার সেরা উপায়

 

গরমে শশার উপকারিতা

আসুন, আমরা এই ব্লগ পোস্টে গ্রীষ্মকালে শশা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানি । সঙ্গে জেনে নিই শশার পুষ্টিগুণ, শশা কীভাবে শরীরকে ঠান্ডা রাখে, জলশূন্যতা দূর করে, ত্বক উজ্জ্বল করে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে । 

গরমে শশার উপকারিতা : গ্রীষ্মের সেরা প্রাকৃতিক সমাধান 

গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমে শরীর এবং ত্বকের যত্ন নেওয়া প্রচন্ডভাবে জরুরী । এই সময়ে, এইসব ক্ষেত্রে শশা হতে পারে আপনার সেরা প্রাকৃতিক সঙ্গী । শশার মধ্যে থাকা জল ও তার পুষ্টিগুণে শশা শুধু শরীরকে ঠান্ডাই রাখে না বরং নানা রোগের সমস্যা থেকে বাঁচতেও আমাদের সাহায্য করতে পারে । গ্রীষ্মের খাদ্যতালিকায় শশা যোগ করলে আপনি পেতে পারেন প্রাকৃতিক উপায়ে শক্তি বাড়ানোর ক্ষমতা , সতেজতা এবং রোগ প্রতিরোধ করার উপায় । চলুন জেনে নিই, গরমে শশা খাওয়ার অসাধারণ উপকারিতা সম্পর্কে, শশার পুষ্টিগুণ ও তাকে ব্যবহারের সহজ কিছু টিপস এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর । 

শশার পুষ্টিগুণ (Nutritional Value of Cucumber)

শশার মধ্যে প্রায় ৯৫% জল থাকে, যা গরমে আমাদের শরীরকে হাইড্রেটেড রাখার জন্য অপরিহার্য । তবে শুধু জল নয়, এতে ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং ফাইবারের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলিও বিদ্যমান । আসুন নীচের চার্টে দেখে নিই প্রতি ১০০ গ্রাম শশায় কী কী পুষ্টি-উপাদান পাওয়া যেতে পারে –  

 

পুষ্টি উপাদান

পরিমাণ (প্রতি ১০০ গ্রামে)

১)

ক্যালোরি

১৫ কিলোক্যালরি

২)

জল

৯৫ গ্রাম

৩)

কার্বোহাইড্রেট

৩.৬ গ্রাম

৪)

প্রোটিন

০.৬ গ্রাম

৫)

ফাইবার

০.৫ গ্রাম

৬)

ভিটামিন সি

২.৮ মিলিগ্রাম

৭)

ভিটামিন কে

১৬.৪ মাইক্রোগ্রাম

৮)

পটাশিয়াম

১৪৭ মিলিগ্রাম

৯)

ম্যাগনেশিয়াম

১৩ মিলিগ্রাম

১০)

ফোলেট

৭ মাইক্রোগ্রাম

 

এই পুষ্টি-উপাদানগুলো আমাদের ত্বক ভালো রাখতে, হজমশক্তি বাড়াতে, হাড় ও হার্ট ভালো রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। 

গরমে শশা খাওয়ার ১০টি উপকারিতা

) শরীর ঠান্ডা রাখে 

শশার মধ্যে থাকা উচ্চ জলীয় পরিমাণ শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে । গরমে প্রতিদিন শশা খেলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়, কারণ এটি একটি প্রাকৃতিক কুলিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে । আপনি চাইলে শশার রস বা শশার স্লাইস ঠান্ডা জলে ভিজিয়ে রেখে খেতে পারেন, যা শরীরকে ভেতর থেকে শীতল করতে সাহায্য করে ।

২) জলশূন্যতা দূর করে 

প্রচন্ড গরমে ঘামের মাধ্যমে আমাদের শরীর থেকে জল ও ইলেক্ট্রোলাইটস বেরিয়ে যায়, যা আমাদের শরীরে ডিহাইড্রেশন (জলশূন্যতা) সৃষ্টি করতে পারে । শশার মধ্যে  থাকা পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং সোডিয়াম ইলেক্ট্রোলাইটসের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং এর জলীয় উপাদান জলের অভাব পূরণ করে । দিনে ১-২ গ্লাস শশার জুস/১-২ টা শশা খেলে আপনি প্রাকৃতিকভাবে হাইড্রেটেড থাকতে পারবেন ।

৩) ত্বক উজ্জ্বল রাখে   

শশার মধ্যে থাকা সিলিকা নামক মিনারেলস ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়, যা ত্বককে টানটান ও উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে । শশার জুস বা ফেস প্যাক ব্যবহার করলে সেটি ত্বকের প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। ব্রণ, ফুসকুড়ি, রোদে পোড়া জ্বালাভাব, ফোলাভাব ও ত্বকের বলিরেখা কমাতেও এটি কার্যকর ভূমিকা নেয় ।

৪) ওজন কমাতে সাহায্য করে 

শশার মধ্যে ক্যালোরি অত্যন্ত কম থাকে (প্রতি ১০০ গ্রামে মাত্র ১৫ কিলোক্যালরি) কিন্তু ফাইবার খুব বেশি পরিমাণে থাকে । যার জন্য এটি পেট ভর্তি থাকার অনুভূতি দেয় এবং অস্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্স খাওয়ার প্রবণতা কমায়। গরমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার ডায়েট হিসাবে শশার স্যালাড বা স্মুদি যোগ করলে ভালো লাভ পাওয়া যেতে পারে । 

গরমে শশার উপকারিতা

৫) হজমশক্তি বাড়ায় 

শশার মধ্যে থাকা ফাইবার ও জলীয় উপাদান কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে হজম প্রক্রিয়াকে সচল রাখতে সাহায্য করে । আর এটি অ্যালকালাইন প্রকৃতির হওয়ায় পাকস্থলীর অম্লতা কমাতেও ভূমিকা নেয় । তাই গরমে পেট ফাঁপা, গ্যাসের সমস্যা বা অ্যাসিডিটিতে ভুগলে শশা খেলে লাভ পাবেন ।

৬) ডিটক্সিফিকেশন করে 

শশার মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস উপাদানগুলি (যেমন: বিটা-ক্যারোটিন, ফ্ল্যাভনয়েড ইত্যাদি) আমাদের কিডনী এবং লিভার থেকে টক্সিন বের করে দিতে ভূমিকা নেয় । নিয়মিত শশা খেলে রক্ত পরিশোধন হয় এবং ত্বক থেকে ব্রণ, দাগ দূর হয় । 

৭) চোখের যত্ন নেয় 

শশার মধ্যে থাকা ভিটামিন-সি এবং সিলিকা চোখের ত্বককে পুষ্টি-উপাদানের যোগান দেয় । শশার স্লাইস চোখের উপর রাখলে চোখের ফোলাভাব, ডার্ক সার্কেল এবং চোখের ক্লান্তি কমে । 

৮) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে 

শশার মধ্যে থাকা পটাশিয়াম রক্তনালীকে রিলাক্স করে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে । তাই গরমে যাদের প্রেশার ঘন ঘন ওঠানামা করার প্রবণতা আছে, তাদের জন্য শশা একটি আদর্শ খাবার হতে পারে । 

৯) হাড়ের স্বাস্থ্য ঠিক রাখে 

শশার মধ্যে থাকা ভিটামিন-কে হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায় এবং ক্যালসিয়ামের শোষণে সাহায্য করে । তাই এটি অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে ।

১০) ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে
শশার মধ্যে "কুকুরবিটাসিন" (Cucurbitacin) নামক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট প্রকৃতির একটি বিশেষ বায়োঅ্যাক্টিভ যৌগ পাওয়া যায়, যা ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে । বিশেষ করে ব্রেস্ট ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার ও জরায়ু ক্যান্সারের বিরুদ্ধে এর কার্যকারিতা নিয়ে উল্লেখযোগ্য গবেষণা হয়েছে । সেইসব বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, কুকুরবিটাসিন ক্যান্সার কোষের "অ্যাপোপ্টোসিস" (Apoptosis) বা প্রোগ্রামড সেল ডেথকে উদ্দীপিত করে এবং টিউমারের আকার বৃদ্ধি প্রতিরোধ করতে ভূমিকা নেয় । 

References (English Backlinks):

  1. Cucurbitacin B Targets Breast Cancer Cells
  2. Anti-Cancer Effects of Cucurbitacins (PubMed)
  3. Cucurbitacin E and Prostate Cancer
  4. Cucurbitacins in Uterine Cancer (Frontiers)

 গরমে শশা ব্যবহারের ৫টি সহজ টিপস

১) স্যালাড : শশা, টমেটো, পেঁয়াজ, ধনিয়া পাতা কুচি করে মিশিয়ে তাতে লেবুর রস ও সামান্য বিট লবণ দিয়ে স্যালাড বানিয়ে খেতে পারেন । 

২) ডিটক্স ওয়াটার : এক বোতল জলে শশার স্লাইস, পুদিনা পাতা ও কাটা লেবু ডুবিয়ে রেখে দিন, আর সারাদিন ধরে সেই জল পান করুন । 

৩) রিফ্রেশিং জুস : শশা, আপেল, আদা ও পুদিনা পাতা একসাথে ব্লেন্ড করে তার সঙ্গে বরফকুচি যোগ করে জুস হিসাবে পান করতে পারেন ।   

৪) ত্বকের প্যাক : শশাকে কেটে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিয়ে তার সঙ্গে মধু ও মুলতানি মাটি মিশিয়ে ফেস প্যাক বানিয়ে মুখে লাগিয়ে রেখে দিন ১৫ মিনিট । তারপরে শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন । 

৫) চোখের ট্রিটমেন্ট : ফ্রিজে ঠান্ডা করা শশা স্লাইস করে কেটে সেই স্লাইস চোখের উপর ১০ মিনিটের মতো রেখে দিন । 

গরমে শশা খাওয়ার সতর্কতা

অতিরিক্ত খাওয়া এড়িয়ে চলুন : মনে রাখবেন দিনে ২টির বেশি শশা খেলে পেটে গ্যাস সৃষ্টি হতে পারে বা ডায়রিয়া হতে পারে। 

কিডনির রোগী : শশায় পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকায় কিডনীর রোগীদের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত । 

অ্যালার্জি : যদিও খুব কম, কিন্তু কারো কারো ক্ষেত্রে শশা খেলে অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে । প্রথমে একবার খেয়ে দেখুন, কোন রকম প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে খাওয়া বন্ধ করুন বা ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন ।

 

প্রায়শ: জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)

১) প্রতিদিন কতটা শশা খাওয়া ভালো? 

উত্তর): সাধারণভাবে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে দিনে ১-২টি মাঝারি আকারের শশা (প্রায় ২০০-৩০০ গ্রাম) খাওয়া নিরাপদ । তবে গর্ভবতী মহিলা বা বিশেষ কোন স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাওয়াই ভালো । 

২) ত্বকের জন্য শশা কীভাবে ব্যবহার করব? 

উত্তর): ত্বকের জন্য শশা খুবই উপকারী । বিভিন্নভাবে একে ব্যবহার করা যেতে পারে -   

শশার জুস : শশাকে কেটে ভালো করে ব্লেন্ড করে তার জুস তুলোয় নিয়ে মুখে লাগান এবং ২০ মিনিটের মতো সময় রেখে দিন । তারপরে ধুয়ে ফেলুন। 

ফেস প্যাক : শশাকে কেটে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিয়ে সেই পেস্টের সাথে দই বা মধু এবং মুলতানি মাটি মিশিয়ে ফেস প্যাক বানিয়ে মুখে লাগিয়ে রেখে দিন ১৫ মিনিট । তারপরে শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন । 

আই প্যাড : ফ্রিজে ঠান্ডা করা শশা স্লাইস করে কেটে সেই স্লাইস চোখের উপর ১০ মিনিটের মতো রেখে দিন । এটির ব্যবহার চোখের ডার্ক সার্কেল কমাতে সাহায্য করবে । 

৩) শশা কি গরমে জলশূন্যতা দূর করতে পারে? 

উত্তর): শশার মধ্যে প্রায় ৯৫% জল থাকে এবং এর পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম উপাদানগুলি ইলেক্ট্রোলাইটস হিসাবে কাজ করে, যা ঘামের মাধ্যমে হারানো জল এবং লবণের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করতে পারে । সেই হিসাবে এটি একটি প্রাকৃতিক ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশনের মতো কাজ করে । 

৪) শশা ও কাঁকড়ালির মধ্যে পার্থক্য কী? 

উত্তর): শশা (Cucumber) এবং কাঁকড়ালি (ইংরেজিতে Gherkin) একই গোত্রের হলেও প্রজাতি হিসাবে আলাদা । কাঁকড়ালি আকারে একটু ছোট হয়, খোসা শক্ত হয় এবং টক স্বাদযুক্ত । কিন্তু শশা সাধারণত: বড়, নরম ও মিষ্টি স্বাদযুক্ত  হয় ।

৫) শশা খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী? 

উত্তর): সাধারণ ভাবে পরিমিত পরিমাণে শশা খেলে কোনো সমস্যা হয় না । কিম্তু অতিরিক্ত পরিমাণে শশা খেলে নীচের সমস্যাগুলি দেখা দিতে পারে –

  • পেট ফাঁপা বা গ্যাস হতে পারে 
  • কিডনিতে (যাদের কিডনি রোগ আছে) পটাশিয়াম জমা হয়ে সমস্যা হতে পারে 
  • অ্যালার্জিজনিত চুলকানি বা র‌্যাশ দেখা দিতে পারে 

৬) গর্ভবতী মহিলারা শশা খেতে পারবেন? 

উত্তর): গর্ভাবস্থায় পরিমিত পরিমাণে শশা খাওয়া যেতেই পারে । কারণ শশার জলীয় উপাদান এবং ফাইবার গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় সাহায্য করতে পারে । তবে আপনার অজানা কোন অন্তর্নিহিত সমস্যা থাকতেই পারে । তাই সাবধানতার জন্য শুরু করার আগে একবার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিন । 

 

সব শেষে ....

গ্রীষ্মের প্রচন্ড দাবদাহে সুস্থ থাকতে, শরীরের জন্য শশা হলো প্রকৃতির দেওয়া এক অসামান্য দান । এটি পুষ্টি উপাদানে ভরপুর হলেও সহজলভ্য এবং সস্তা । গ্রীষ্মের সময়ে প্রতিদিনের ডায়েটে শশা যোগ করে আমরা জলশূন্যতা, ত্বকের সমস্যা, ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং হজমের অসুবিধা থেকে মুক্তি পেতে পারি । তবে মনে রাখা দরকার, কোনো খাবারই অতিরিক্ত খাওয়া ভালো নয়। যেকোন খাবারই ভারসাম্য বজায় রেখে খাওয়াই শ্রেয় ! 

আজই বাজারে গিয়ে তাজা শশা কিনে আনুন এবং এই গরমে নিজেকে ও পরিবারকে সুস্থ রাখুন! এই পোস্টটি শেয়ার করে আপনার প্রিয়জনদেরও জানার সুযোগ দিন। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ