Header Ads Widget

রক্তচাপ : কারণ, লক্ষণ এবং ঘরোয়া প্রতিকার


রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেশার হলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক, যা আমাদের শরীরের ধমনীর মধ্যেকার রক্তের প্রবাহের গতিকে বা রক্তের প্রবাহশক্তিকে নির্দেশ করে । একটি সুস্থ রক্তচাপ বজায় রাখা শরীরের সামগ্রিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । এই ব্লগ পোস্টে আমরা রক্তচাপ কিভাবে পরিমাপ করে, রক্তচাপের সীমা, বয়স অনুসারে স্বাভাবিক রক্তচাপের পরিমাপ, উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ, নিম্ন রক্তচাপের লক্ষণ, উচ্চ রক্তচাপের কারণ, নিম্ন রক্তচাপের কারণ এবং রক্তচাপের ঘরোয়া প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করবো ।

রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেশার কিভাবে পরিমাপ করে

রক্তচাপ সাধারণভাবে পারদ-মিলিমিটারে (mmHg) পরিমাপ করা হয় এবং দুটি সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করা হয় – সিস্টোলিক এবং ডায়াস্টোলিক । যখন আমাদের হার্ট সঙ্কুচিত হয়, তখন ধমনীতে যে রাশির স্বারা রক্তচাপ নির্দেশ করা হয় তা হলো সিস্টোলিক রক্তচাপ (প্রথম সংখ্যা) । আর যখন আমাদের হার্ট প্রসারিত হয়, তখন যে রাশি দ্বারা রক্তচাপ নির্দেশ করা হয় তা হলো ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ (দ্বিতীয় সংখ্যা) ।

সিস্টোলিক রক্তচাপ : যখন আমাদের হার্ট সঙ্কুচিত হয় এবং রক্ত পাম্প করে, তখন আমাদের ধমনীতে সর্বোচ্চ রক্তচাপ থাকে । সিস্টোলিক সংখ্যাটি সেই রক্তচাপকে নির্দেশ করে । স্বাভাবিক সিস্টোলিক সাধারণত: ১২০ mmHg  বা তার কম হয় ।

ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ এই রাশিটি যখন আমাদের হার্ট প্রসারিত হয় তখনকার সংখ্যা নির্দেশ করে, অর্থাৎ এটি আমাদের ধমনীতে সর্বনিম্ন রক্তচাপ বোঝায় । স্বাভাবিক ডায়াস্টোলিক সাধারণত: ৮০ mmHg হয়ে থাকে ।

এই রিডিংগুলি একসাথে আমাদের রক্তচাপের পরিমাপ নির্দেশ করে, যেমন – ১২০/৮০ mmHg.

রক্তচাপের সীমা

সাধারণত: বিভিন্ন সংখ্যার দ্বারা রক্তচাপের সীমা নির্দেশ করা হয় । একটি সাধারণ সীমার নির্দেশ-তালিকা এখানে দেওয়া হলো

১) স্বাভাবিক (Normal)  ১২০/৮০ বা তার কম

২) উথ্থিত (Elevated) – সিস্টোলিক ১২০-১২৯ এবং ডায়াস্টোলিক ৮০-র কম

৩) উচ্চ রক্তচাপ পর্যায় ১ (Hypertension stage 1)  সিস্টোলিক ১৩০-১৩৯ বা ৮০-৮৯ ডায়াস্টোলিক

৪) উচ্চ রক্তচাপ পর্যায় ২ (Hypertension stage 2)  ১৪০ বা তার চেয়ে বেসি সিস্টোলিক এবং ৯০ বা তার চেয়ে বেশি ডায়াস্টোলিক

৫) বিপজ্জনক ঝুঁকির সীমা (Hypertensive crisis) - ১৮০ বা তার বেশি সিস্টোলিক এবং ১২০-র বেশি ডায়াস্টোলিক (জরুরী ভিত্তিতে চিকিৎসার প্রয়োজন)

বয়স অনুযায়ী স্বাভাবিক রক্তচাপ

বয়স অনুসারে মানুষের রক্তচাপের পরিমাপের নিয়ম পরিবর্তিত হতে পারে, তবে বয়স অনুযায়ী রক্তচাপের সাধারণ নির্দেশিকাগুলি হলো নিম্নরূপ :

) শিশু ( থেকে ১৩ বছর) : ৯০/৬০ থেকে ১২০/৮০ mmHg

) কিশোর (১৪ থেকে ১৮ বছর) : ১১০/৭০ থেকে ১৩০/৮০ mmHg

) প্রাপ্তবয়স্ক (১৯ থেকে ৬৪ বছর) : ৯০/৬০ থেকে ১২০/৮০ mmHg

) বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্ক (৬৫+ বছর) : ৯০/৭০ থেকে ১৫০/৯০ mmHg

মনে রাখতে হবে, নিয়মিত রক্তচাপ চেক-আপ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ জীবনধারা এবং স্বাস্থ্যের অবস্থা সহ বিভিন্ন কারণের কারণে রক্তচাপ ওঠানামা করতে পারে । কিন্তু রক্তচাপের পরিমাপ দেখে মানুষের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত একটি সহজ আভাস পাওয়া যায়, যার ফলে তার জীবনহানি আটকানো যেতে পারে ।

উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ

উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন সাধারণ ভাবে অনেক ক্ষেত্রেই প্রায় অলক্ষিত থেকে যায় কারণ, অনেক ক্ষেত্রেই এর উপসর্গগুলিকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা মুশকিল হয় সাধারণভাবে কিছু উপসর্গ দেখে উচ্চ রক্তচাপ চিহ্নিত করা যেতে পারে যেমন

  • মাথাব্যথা
  • মাথা ঘোরা
  • নাক দিয়ে রক্ত ​​পড়া
  • শ্বাসকষ্ট
  • ফ্লাশিং

নিম্ন রক্তচাপের লক্ষণ

নিম্ন রক্তচাপ বা হাইপোটেনশনের লক্ষণগুলির মধ্যে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি পরিলক্ষিত হতে পারে -

  • মাথা ঘোরা 
  • হালকা মাথাব্যথা
  • অজ্ঞান হওয়া
  • ক্লান্তি
  • ঝাপসা দৃষ্টি
  • বমি বমি ভাব

উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনের কারণ

উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনের সাধারণ কয়েকটি কারণ নিয়ে নীচে সংক্ষেপে অলোচনা কর হলো

) জিনঘটিত কারনে   পারিবারিক উচ্চ রক্তচাপের ইতিহাস থাকলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।

) বয়স বাড়া  বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় ।

) মোটা হওয়া  শরীরের অতিরিক্ত ওজন হার্টের উপরে চাপ সৃষ্টি করে এবং উচ্চ রক্তচাপের সম্ভাবনা বাড়ে ।

) জীবনযাপনের জন্য  শারীরিক পরিশ্রমের অভাব ওজন বৃদ্ধিতে এবং উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধির কারণ হতে পারে ।

) খাদ্যাভ্যাসের জন্য  উচ্চ সোডিয়াম যুক্ত, কম পটাশিয়াম যুক্ত খাবার অত্যধিক পরিমাণে খাওয়া এবং অত্যধিক অ্যালকোহল গ্রহণ উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম কারণ হয়ে ওঠে ।


) স্ট্রেসজনিত কারণে  দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ বা স্ট্রেস উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম কারণে ।

) ধূমপানের কারণে  ধূমপানের ফলে গৃহীত নিকোটিন রক্তনালীর ক্ষতি করে এবং উচ্চ রক্তচাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায় ।

) কিডনীর রোগ থাকলে  কিডনীর সমস্যা শরীরের ক্ষমতাকে ব্যাহত করে এবং উচ্চ রক্তচাপের কারণ সৃষ্টি করে ।

) হরমোনের সমস্যায়  শরীরে থাইরয়েড বা অন্য হরমোনের সমস্যা উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে ।

১০) স্লিপ অ্যাপনিয়া বা ইনসমনিয়াতে  অনিদ্রা বা ঠিকমতো ঘুম না হওয়া রক্তচাপের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে ।

নিম্ন রক্তচাপের কারণ

নিম্ন রক্তচাপ বা হাইপোটেনশন বিভিন্ন কারণের ফলে হতে পারেযেমন

  • অতিরিক্ত ডিহাইড্রেশন
  • দীর্ঘকালীন বেড রেস্ট
  • পুষ্টি-উপাদানের ঘাটতি
  • কিছু ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার ফল (যেমন- মূত্রবর্ধক বা অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্টস)
  • হার্টের সমস্যা থাকলে
  • হরমোনের সমস্যায়

নিম্ন রক্তচাপ : মহিলাদের জন্য বিপজ্জনক

মহিলাদের জন্য নিম্ন রক্তচাপ বিপজ্জনক বলে মনে করা হয় । সাধারণভাবে ৯০/৬০ mmHg এর নীচে রক্তচাপকে বিপজ্জনক বলে ধরা হয় । এই ধরনের কম রক্তচাপের ফলে মাথা ঘোরা শুরু হতে পারে, এমনকি কেউ কেউ অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারেন । সেইরকম গুরুতর অবস্থায়, কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসার জন্য শক-ট্রিটমেন্টের সাহায্য অবধি নিতে হতে পারে । 

রক্তচাপ প্রতিরোধের জন্যে কিছু ঘরোয়া প্রতিকার

আমরা এখানে স্বাভাবিকভাবে কিছু ঘরোয়া প্রতিকারের মাধ্যমে এবং জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপকে প্রতিরোধ করতে এবং নিয়ন্ত্রণে রাখার কথা আলোচনা করবো । তবে মনে রাখবেন, জরুরী ভিত্তিতে অবশ্যই কোন হেল্থ কেয়ার প্রফেশনাল বা হাসপাতালের সাহায্য নিতে দেরী করবেন না ।

১) রসুন – রসুনের মধ্যে থাকা অ্যালিসিন নামক জৈব যৌগ রক্তনালীগুলিকে শিথিল রাখে এবং রক্ত সঞ্চালনকে স্বাভাবিক রেখে রক্তচাপ কম রাখতে সাহায্য করে । প্রতিদিন কাঁচা রসুনের সঙ্গে লবঙ্গ মিশিয়ে চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে অথবা কোন এক্সপার্টের সাহায্য নিয়ে রসুনের পরিপূরক বা সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে ।

২) হিবিস্কাস (জবাফুলের) চা – জবাফুল বা হিবিস্কাসে এমন কিছু বায়ো-অ্যাকটিভ ফাইটোকেমিক্যাল থাকে যা প্রাকৃতিক ACE ইনহিবিটারের মতো কাজ করে । গরম জলে শুকনো ফুল ভিজিয়ে হিবিস্কাস চা তৈরী করতে পারেন এবং প্রতিদিন ১-২ কাপ চা স্বাভাবিকভাবে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করতে পারে ।

৩) কলা – কলায় প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে, আর পটাশিয়াম সোডিয়ামের প্রভাবকে প্রতিহত করতে সাহায্য করে এবং রক্তনালীর দেওয়ালের উত্তেজনা কমায় । সুতরাং দৈনিক খাদ্যগ্রহণের একটি অংশ হিসাবে প্রতিদিন ১-২টি কলা খেলে লাভ হবে ।

৪) দারুচিনি – দারুচিনির মধ্যে রক্তচাপ কমানোর গুণ দেখা যায়, বিশেষত: ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এটি দারুণ কাজ করে । সুতরাং খাবার বা পানীয়ের মধ্যে দারুচিনি যোগ করে গ্রহণ করলে দারুণ লাভ পাওয়া যায় ।

৫) তুলসী – তুলসীতে ই্উজেনল নামের জৈব যৌগ থাকে, যেটি রক্তনালীকে শিথিল করতে এবং রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে । সুতরাং প্রতিদিন বিভিন্নভাবে তুলসী পাতা বা তুলসী পাতার রস সেবন করলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা লাভ করা যেতে পারে ।

৬) ফ্লাক্স সীড – ফ্লাক্স সীড ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ, যা শুধু রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে না, ওজন নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে । স্মুদি, ওটমিল, বেকড খাবার গুলিতে ফ্লাক্স সীড যোগ করে খাওয়া যেতে পারে ।

৭) সেলারি দানা – সেলারি দানা একটি প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধক হিসাবে কাজ করে । এটি বহুকাল ধরে ঐতিহ্যগতভাবে চীনা ওষুধে উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় । খাবারের মশলা হিসাবে অথবা চায়ের সঙ্গে্ একে গ্রহণ করতে পারেন ।

৮) আপেল সিডার ভিনিগার – আপেল সিডার ভিনিগার আমাদের শরীরের pH মাত্রার ভারসাম্য (অম্ল ও ক্ষারের ভারসাম্য) বজায় রাখতে সাহায্য করে । প্রতিদিন এক গ্লাস জলের সঙ্গে ২ চামচ আপেল সিডার ভিনিগার মিশিয়ে পান করলে হার্ট ভালো থাকে এবং তার কার্যক্ষমতা বেড়ে যায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হয় ।

৯) ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার – খনিজ লবণ ম্যাগনেশিয়াম আমাদের শরীরের রক্তনালীগুলিকে শিথিল করতে সাহায্য করে, ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা হয় । তাছাড়াও ম্যাগনেশিয়াম ঘুমেও সাহায্য করে । সুতরাং পালংশাক, বাদাম জাতীয় খাবার, বীজ এবং গোটা শস্য ইত্যাদি ম্যাগনেয়িাম সমৃদ্ধ খাবার খেলে লাভ পাওয়া যায় ।

১০) লবণ (সোডিয়াম) গ্রহণ সীমিত করা – অতিরিক্ত সোডিয়াম শরীরে জল ধরে রেখে রক্তনালীতে অতিরিক্ত চাপের সৃষ্টি করে, ফল হিসাবে শরীরের রক্তচাপ বাড়তে পারে । সুতরাং প্যাকেজ করা খাবার, পানীয় এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন । কারণ এগুলিতে সোডিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে ।

১১) স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা – উচ্চতা এবং বয়স অনুযায়ী শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখা সুস্থতার জন্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । ওজন বৃদ্ধির সঙ্গে রক্তচাপ বাড়ার ঝুঁকি বেড়ে যায় । সুষম খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত শরীর চর্চা, পরিমিত বিশ্রাম  এবং সু-খাদ্যাভ্যাস শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে ।

১২) শরীরচর্চা – নিয়মিত শরীর চর্চা বা শারীরিক কার্যকলাপ হার্টকে শক্তিশালী রাখে এবং রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করে । ফল হিসাবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা মেলে । সপ্তাহে অন্তত: ৫-৬ দিন ৩০ মিনিটের শরীরচর্চার (হাঁটা, সাঁতার, সাইকে চালানো ইত্যাদি) লক্ষ্য রাখুন এবং পালন করুন ।

১৩) গভীর শ্বাস এবং ধ্যান – গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যয়াম এবং ধ্যান স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করে এবং স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে, যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে । প্রতিদিন অন্তত: ১০-১৫ মিনিটের জন্যে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যয়াম, যোগব্যয়াম বা ধ্যান করলে ভালো লাভ পাওয়া যায় ।

 

প্রায়শ:ই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)

১) রক্তচাপ কি এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?

উত্তর) : রক্তচাপ হলো ধমনীর মধ্যে রক্তের প্রবাহের চাপ, যা হার্টের স্বাস্থ্য এবং শরীরের সামগ্রিক সুস্থতা নির্দেশ করে । এটি উচ্চ বা নিম্ন হলে হার্ট, কিডনি এবং মস্তিষ্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির ক্ষতি হতে পারে। নিয়মিত রক্তচাপ পরিমাপ করা স্বাস্থ্য সচেতনতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ।

২) স্বাভাবিক রক্তচাপের মাত্রা কত?

উত্তর) : স্বাভাবিক রক্তচাপ সাধারণত ১২০/৮০ mmHg বা তার কম । বয়স অনুযায়ী রক্তচাপের মাত্রা পরিবর্তিত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, শিশুদের জন্য ৯০/৬০ থেকে ১২০/৮০ mmHg এবং বয়স্কদের জন্য ৯০/৭০ থেকে ১৫০/৯০ mmHg স্বাভাবিক বলে বিবেচিত হয় ।

৩) উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণগুলি কি কি?

উত্তর) : উচ্চ রক্তচাপের সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, শ্বাসকষ্ট এবং ফ্লাশিং অন্তর্ভুক্ত । তবে অনেক ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ কোন লক্ষণ বিহীন হতে পারে, তাই নিয়মিত চেক-আপ করা জরুরি।

৪) নিম্ন রক্তচাপের কারণগুলি কি কি?

উত্তর) : নিম্ন রক্তচাপের কারণগুলির মধ্যে ডিহাইড্রেশন, দীর্ঘকালীন বেড রেস্ট, পুষ্টির ঘাটতি, কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, হার্টের সমস্যা এবং হরমোনের ভারসাম্যহীনতা অন্তর্ভুক্ত। মহিলাদের ক্ষেত্রে নিম্ন রক্তচাপ বিশেষভাবে বিপজ্জনক হতে পারে।

৫) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ঘরোয়া উপায়গুলি কি কি?

উত্তর) : রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ঘরোয়া উপায়গুলির মধ্যে রসুন, হিবিস্কাস চা, কলা, দারুচিনি, তুলসী, ফ্লাক্স সীড, সেলারি দানা, আপেল সিডার ভিনিগার এবং ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিত। এছাড়াও লবণ কম খাওয়া, ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়মিত ব্যায়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

৬) রক্তচাপ পরিমাপের সঠিক পদ্ধতি কি?

উত্তর) : রক্তচাপ পরিমাপ করার জন্য সিস্টোলিক (উচ্চ চাপ) এবং ডায়াস্টোলিক (নিম্ন চাপ) দুটি সংখ্যা ব্যবহার করা হয়। সিস্টোলিক চাপ হার্ট সংকোচনের সময় ধমনীতে রক্তের সর্বোচ্চ চাপ নির্দেশ করে, আর ডায়াস্টোলিক চাপ হার্ট বিশ্রামের সময় ধমনীতে রক্তের সর্বনিম্ন চাপ নির্দেশ করে। রক্তচাপ মাপার জন্য সঠিক যন্ত্র এবং পদ্ধতি ব্যবহার করা জরুরি।

 

নিয়মিত রক্তচাপ পরিমাপ করা এবং বোঝা হার্টের সুস্থতার চাবিকাঠি । নিয়মিত চেক-আপ বা রক্তচাপের রিডিং সম্পর্কে সচেতনতা আপনাকে আপনার স্বাস্থ্য সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে । রক্তচাপ সম্পর্কে কোনরকম সন্দেহ বা উদ্বেগ থাকলে সঙ্গে সঙ্গে পেশাদার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত । মনে রাখবেন আপনার রক্তচাপ নির্দেশ করে, আপনার হার্ট বা স্বাস্থ্য কেমন আছে বা কতোদিন বা কতো বছর সে আপনাকে ভালো রাখবে । সচেতনতাই আমাদের উদ্দেশ্য, সুতরাং সচেতন হোন এবং সুস্থ থাকুন, ভালো লাগলে পোস্টটি শেয়ার করুন । মনে রাখবেন, আপনি সুস্থ থাকলে আপনার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন এবং কাছের মানুষেরা ভালো থাকবে ।

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ