Header Ads Widget

আমলা জুস এবং তার শক্তি

 


বর্তমান দুনিয়ায় যেসকল মানুষ স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা রাখেন, এবং প্রাকৃতিক উপায়ে সামগ্রিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে চান, তারা অবশ্যই আমলা বা অমলকি এবং তার উপকারিতা সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন । আমলার অসংখ্য উপকারিতা এবং তার শক্তিশালী প্রাকৃতিক উপাদান বৈশিষ্ট্যের জন্য্ এটি প্রায় সর্বজন পরিচিত । শুধু তাই নয়, ঐতিহ্যগতভাবে আমলা প্রাচীন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শাস্ত্রে এবং আধুনিক স্বাস্থ্য সচেতন মানবজগতে একটি জনপ্রিয় স্থান অর্জন করেছে । আমরা এই আলোচনায় আমলা জুস এবং তার কয়েকটি পরিচিত নাম, এর পুষ্টি-মূল্য, এর কয়েকটি উপকারিতা এবং এর ব্যবহারের পদ্ধতি এবং ব্যবহারের সতর্কতা সম্পর্কে কিছু আলোচনা করবো ।

আমলা কি ?

আমলা, যা সাধারণত: ইন্ডিয়ান গুজবেরি নামেও পরিচিত এটি একটি বহু পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ছোট সবুজ ফল, যা খেতে টক, কিন্তু খাবার কিছু পরে অল্প মিষ্টি স্বাদও লাগে এটি বৈজ্ঞানিকভাবে ফিলান্থাস এম্বলিকা নামে পরিচিত আমলা ভারতের একটি স্থানীয় ফল এবং অসংখ্য স্বাস্থ্য-গুণের জন্যে এটি বহু শতাব্দী ধরে অজস্র আয়ুর্বেদ ওষুধে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এই ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট এবং অসংখ্য প্রয়োজণীয় পুষ্টি-উপাদান সমৃদ্ধ, যা এটিকে একটি সুপারফুডের সুনাম দিয়েছে

আয়ুর্বেদে আমলা অত্যন্ত সম্মানিত স্থান অধিকার করেছে এবং এটি বিভিন্ন নামে পরিচিত এর প্রতিটি নামই আসলে আমলার বৈশিষ্ট্য গুলিকে তুলে ধরে যেমন আমলা, আমলকি, ধাত্রী ইত্যাদি এই নামগুলি আমলার টক স্বাদ, শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষমতা এবং মায়ের মতোই স্বাস্থ্যের উন্নয়ন এবং লালন-পালনকারী ক্ষমতাকে তুলে ধরে

আমলা জুসের পুষ্টির মান (প্রতি ১০০ মিলি.তে)

ক্রম নং

পুষ্টি-উপাদান

পরিমাণ

)

ক্যালোরি

৪০ কিলোক্যলোরি

)

জল

৯৫. গ্রাম

৩)

প্রোটিন

. গ্রাম

৪)

কার্বোহাইড্রেট

১০ গ্রাম

৫)

সুগার

. গ্রাম

৬)

ডায়েটারী ফাইবার

. গ্রাম

৭)

ফ্যাট

. গ্রাম

৮)

ভিটামিন সি

৬০০ মিলি.গ্রাম

৯)

ভিটামিন 

.১০ মিলি.গ্রাম

১০)

ক্যালসিয়াম

১৫ মিলি.গ্রাম

১১)

আয়রন

. মিলি.গ্রাম

১২)

ম্যাগনেশিয়াম

১০ মিলি.গ্রাম

১৩)

ফসফরাস

১৮ মিলি.গ্রাম

১৪)

পটাশিয়াম

১৫০ মিলি.গ্রাম

১৫)

সোডিয়াম

 মিলি.গ্রাম

১৬)

ফোলেট

 µg

** প্রদত্ত মানগুলি আমলার উৎস এবং তার প্রক্রিয়ার ধরনের উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হতে পারে । সবসময়, পণ্য কেনার সময়ে তার লেবেল এবং গুণমান যাচাই করে কেনা উচিত ।

আমলার পুষ্টি-গুণ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা

উপরোক্ত টেবিলে উল্লিখিত পুষ্টি-উপাদান ছাড়াও বেশ কিছু অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টস এবং অন্যান্য ফাইটো-নিউট্রিয়েন্টস পাওয়া যায়, যেগুলি আমলাকে এক অনন্য পুষ্টি=গুণে সমৃদ্ধ করে তোলে ।

ভিটামিন সি (Vitamin C) :- আমলার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়, যা প্রতিদিনের জীবনে মানুষের স্বাস্থ্যে এক উল্লেখযোগ্য ভুমিকা পালন করতে পারে । কারণ, ভিটামিন সি একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, যা মানুষের শরীরের কোষকে বিভিন্ন ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে । তাছাড়াও ভিটামিন সি ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায়, ইমিউন সিস্টেমের কার্যকারিতা এবং উন্নতির জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান ।

পলিফেনল (Polyphenols) :- আমলার মধ্যে দেখতে পাওয়া যায় কোয়েরসেটিন, কেমফেরল, ক্যাটেচিন এবং ফেনোলিক অ্যাসিডের মতো প্রাকৃতিক যৌগের সমাহার যেগুলি তাদের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্যের জন্যে সুপরিচিত এবং এদের উপস্থিতির জন্যে আমলা কার্ডিও-ভাস্কুলার সিস্টেমকে ভালো রাখে এবং স্বাস্থ্য-ক্ষেত্রে অন্যান্য সুবিধা প্রদান করতে পারে

গ্যালিক অ্যাসিড (Gallic Acid) :- এটি একটি বিশেষ ধরনের প্রাকৃতিক শক্তিশালী অ্যান্টি-অকিসড্যান্ট, যা শরীরকে বিভিন্ন অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে ।

ইলাজিক অ্যাসিড (Ellagic Acid) : -  এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, যার মধ্যে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরী গুণ দেখতে পাওয়া যায় এবং এটি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে বলে জানা গেছে ।

স্যাপোনিনস (Saponins) :-  এটি একটি প্রাকৃতিক যৌগ, যার মধ্যে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরী এবং ইমিউনো-মডুলেটরী গুণ দেখতে পাওয়া যায় ।

লিগন্যানস (Lignans) :-  এই বিশেষ ধরনের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টগুলিতে ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষমতা দেখতে পাওয়া যায় । আমলাতে খুবই অল্প পরিমাণে হলেও এই জৈব যৌগটির উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায় 

ফ্ল্যাভোনয়েডস (Flavnoids) :-  এই ধরনের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টগুলিতে ত্বকের এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য-সুবিধা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে ।

ট্যানিন (Tanins) :-  এই বিশেষ ধরনের যৌগগুলি আমলায় প্রাপ্ত অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য । এই বিশেষ ধরনের যৌগগুলি তাদের অ্যাস্ট্রিজেন্ট বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত এবং আমলার মধ্যে উপস্থিত থেকে বিভিন্ন স্বাস্থ্য-সুবিধা প্রদান করে ।

এছাড়াও এর মধ্যে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন, মিনারেলসগুলি আমাদের শরীরের দৈনন্দিন পুষ্টি-চাহিদার ঘাটতি মেটায় এবং সামগ্রিকভাবে বিভিন্ন স্বাস্থ্য-সুবিধা প্রদান করে । আসলে প্রতিটি ভিটামিন এবং মিনারেলসগুলির আমাদের শরীরে বিভিন্ন কার্য বা ভূমিকা রয়েছে । তাই এইসব উপাদানগুলির শরীরের চাহিদা মেটানোর জন্যে্ এবং সঠিক স্বাস্থ্য রক্ষণানেক্ষণের জন্যে দৈনন্দিন সরববরাহ অত্যন্ন গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের আজকের ব্যস্ত জীবনযাত্রা এবং খাদ্যাভ্যাসের ফলে প্রায়শই হয়ে ওঠে না, আর যার ফল হিসাবে দেখা দেয় বিভিন্ন জীবনযাত্রা জনিত অসুখ । আমলা জুসের মধ্যে এই সমস্ত পুষ্টি-উপদানের একত্র সমাহার এই সমস্যার এক দারুণ সমাধান হতে পারে ।   

আমলা জুস পানের উপকারিতা

আমলা জুস পান করলে বিভিন্ন স্বাস্থ্য-সুবিধা পাওয়া যায়, দৈনন্দিন জীবনে আমলা জুস পান করলে যে বিশেষ সুবিধাগুলি পাওয়া যেতে পারে, তাদের মধ্যে কিছূ এখানে উল্লেখ করা হলো :-

১) ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে :- আমলা জুস ভিটামিন সি-য়ের একটি শক্তিশালী উৎস, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী বৈশিষ্ট্যের জন্যে সুপরিচিত । আমলা জুসের নিয়মিত সেবনের ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে । ফলে, সাধারণ অসুস্থতা এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীরকে লড়াই করতে সাহায্য করে ।

২) অ্যান্টি-এজিং ক্ষমতা :- আমলা জুসে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকে, যা আমাদের শরীরকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে এবং  ফ্রি-র‌্যাডিক্যালসগুলি, যেগুলি বিশেষত: আমাদের অকাল বার্ধক্যের কারণ হয়, সেগুলিকে শরীর থেকে বার করে দিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয় । যার ফল হিসাবে আমরা স্বাস্থ্যকর, উজ্জ্বল ত্বক পেতে পারি এবং অকাল বার্ধক্যকে দুরে রাখতে পারি ।

৩) হজমের উন্নতি :- আমলা জুসে এবং তার মধ্যে থাকা পুষ্টি-উপাদানগুলি হজমের জন্যে প্রয়োজণীয় এনজাইমগুলিকে নি;সরণ করতে সাহায্য করে । ফলে হজমের উন্নতি হয় । তাছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যার উপশম করে, অন্ত্রের কার্যকারিতাকে বৃদ্ধি করে হজম ক্ষমতার সামগ্রিক উন্নতি ঘটায় ।    

৪) ডিটক্সিফিকেশন করতে সাহায্য করে :- আমলা জুসের মধ্যে থাকা উপাদাগুলি একে দেয় এক অসাধারণ ডিটক্সিফাইং বৈশিষ্ট্য, যার ফলে এটি শরীর থেকে টক্সিন অপসারণ করতে সাহায্য করে এবং লিভারকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে । আর যার ফল হিসাবে আমাদের শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে এবং জীবনীশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে ।

৫) রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে :- বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, আমলা জুসের নিয়মিত সেবনের ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে । যার ফল হিসাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করে ।

৬) ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় :- আমলা জুসের মধ্যে থাকা প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি এবং অন্যান্য উপাদানগুলি কোলাজেন উৎপাদনকে সাহায্য করে, শরীরের ফ্রি-র‌্যাডিক্যালসগুলিকে বার করে দেয় । যা ত্বকের স্বাস্থ্যের সামগ্রিক উন্নতি ঘটায় । এর মধ্যে থাকা বিভিন্ন ভিটামিনগুলি এবং অন্যান্য উপাদানগুলি চুলের ফলিকলগুলিকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে, ফলে এর সেবনের ফল হিসাবে চুলের স্বাস্থ্যেরও সামগ্রিকভাবে উন্নতি ঘটে ।

কিভাবে আমলা জুস পান করা যেতে পারে

সামগ্রিক ভাবে নীরোগ থাকা এবং সুস্বাস্থ্যের জন্যে দৈনন্দিন রুটিনে আমলা জুস অন্তর্গত করা খুবই সহজ এবং সেটা বিভিন্ন উপায়ে করা যেতে পারে :-  

১) তাজা ফলের জুস সবচেয়ে ভালো উপায় হলো সরাসরি আমলা ফল থেকে তাজা রস সংগ্রহ করা এবং তা পন করা । সহজভাবে ফলটিকে কেটে মিক্সারে জুস করে অল্প জলের সাথে মিশিয়ে নিন এবং একটি সূক্ষ্ম চালুনি দিয়ে ছেকে নিন । ভালো লগার জন্য, এটার সঙ্গে অল্প লেবু বা মধু মিশিয়ে নেওয়া যেতে পারে ।

২) ঘনীভূত আমলা জুস যদি তাজা আমলা ফল পাওয়া না যায়, তাহলে আপনি বাজার থেকে কেনা ঘনীভূত আমলা রস বা গুঁড়ো আমলাকে জলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে । জলের সাথে মেশানোর জন্যে প্রস্তুতকারকের নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন ।

৩) মিশ্র পানীয় : আমলা জুস অন্যান্য ফলের রস বা স্মুদির সাথে মিশিয়ে পান করতে পারেন, তাতে স্বাদ এবং পুষ্টির মান বাড়াতে পারে 

এছাড়াও, বাজারে প্রচুর আমলা জুসের পরিপূরক পাওয়া যায়, তাও ব্যবহার করতে পারেন । তবে অবশ্যই কেনার আগে প্যাকের আগে লেবেল দেখে কিনবেন এবং প্রস্তুতকারক সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে কিনবেন । সর্বোপরি, সেই কোম্পানীর জিনিসই কিনবেন, যারা মূল্যর জন্যে গুণমানের সঙ্গে আপোস করে না । সর্বোত্তম ফলাফল পাওয়ার জন্যে সকালে খালি পেটে আমলা জুস খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় । সাধারণভাবে স্বাভাবিক মানুষের ক্ষেত্রে দৈনিক প্রায় ৩০-৫০ মিলি. জুস যথেষ্ট, তবে পরিস্থিতি এবং ব্যক্তিগত চাহিদা অনুযায়ী ডোজ পরিবর্তিত হতে পারে ।

আমলা জুস পান করার ক্ষেত্রে সতর্কতা

যদিও আমলা জুস স্বাস্থ্যর জন্য অসংখ্য  উপকারিতা প্রদান করে, তবুও নিম্নলিখিত সতর্কতাগুলি মনে রাখা অপরিহার্য –

১) পরামর্শ আপনার যদি অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্যজনিত কোন অবস্থা থাকে, যেমন ব্লাড সুগার বা ব্লাড প্রেশার বা কিডনীর সমস্যা অথবা যদি আপনি গর্ভবতী হন, তাহলে অবশ্যই আপনার ডায়েটে আমলা জুস অন্তর্ভুক্ত করার আগে কোন পেশাদার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী অথবা পেশাদার ডায়েটেশিয়ানের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত হবে ।

২) ডোজ আমলা জুসের অত্যধিক ব্যবহার হজমের সমস্যা বা অ্যাসিড রিফ্লাক্সের মতো সমস্যা থাকলে তাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে সুতরাং কোন ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট ডোজ দিয়ে শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে ডোজের পরিমাণ বাড়ান

৩) মিথস্ক্রিয়া : আমলা জুস নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের সাথে বা তার উপাদানের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করতে পারেবিশেষ করে যে ধরনের ওষুধগুলি রক্তে শর্করার মাত্রাকে প্রভাবিত করে তাই সেইরকম ক্ষেত্রগুলিতে আমলা জুস পান করার আগে আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সঙ্গে আলোচনা করে নিন ।

৪) অ্যালার্জি : কিছু ব্যক্তি আমলা জুস পান করার জন্যে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করতে পারেন  যদিও সেই ধরনের ঘটনা অত্যন্ত বিরল, তবুও সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত তাই আমলা জুস পান শুরু করার পরে আপনি যদি কোন প্রতিকূল প্রভাব লক্ষ্য করেন, তাহলে তখুনি পান করা ব্ন্ধ করে একজন ডাক্তার অথবা পেশাদার কোন ডায়েটেশিয়ানের সঙ্গে পরামর্শ করুন । 

 

প্রায়শ:ই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ's)

১) আমলা কি এবং এটি কেন এত উপকারী ?

উত্তর): ইন্ডিয়ান গুজবেরি, যা আমলকি বা আমলা নামে পরিচিত, একটি টক স্বাদের সবুজ ফল । এটি ভিটামিন সি, অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, এবং বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ । প্রাচীন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা ও আধুনিক স্বাস্থ্য জগতে এটি একটি সুপারফুড হিসেবে পরিচিত । আমলা খাওয়ার মাধ্যমে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে আমরা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, ত্বকের উজ্জ্বলতা এবং হজমের উন্নতি ইত্যাদি সুবিধা লাভ করতে পারি ।

২) আমলা জুসের প্রধান পুষ্টিগুণ কি কি ?

উত্তর): আমলা জুসে ভিটামিন সি, কার্বোহাইড্রেট, পটাশিয়াম এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান, যেমন ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদি পাওয়া যায় । এটি শরীরের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা নেয় ।

৩) আমলা জুসের কি কি স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে ?

উত্তর): আমলা জুসের নিয়মিত সেবনে ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয়, অ্যান্টি-এজিং প্রভাব দেখা যায়, হজমের সমস্যা কমে, শরীরের টক্সিন দূর হয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে । তাছাড়া এটি ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্যও উন্নত করে । এগুলি ছাড়াও আমলা জুসের পান করার ফলে আরো নানাবিধ লাভ পাওয়া যায়, যেমন – ক্ষিদে বৃদ্ধি, অরুচি কমানো ইত্যাদি । সুতরাং বলা যেতে পারে, এটির পানের ফলে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে একটি সামগ্রিক লাভ পাওয়া যেতে পারে ।

৪) আমলা জুস কিভাবে পান করা উচিত ?

উত্তর): তাজা ফল থেকে তৈরি করা আমলা জুস পান করা সবচেয়ে ভালো । আপনি মিক্সারে আমলা ফলের রস এবং কিছু জল মিশিয়ে তা পান করতে পারেন । এছাড়াও ঘনীভূত আমলা জুস বা বাজার থেকে কেনা পরিপূরকও ব্যবহার করা যেতে পারে । তবে বাজার থেকে কেনার আগে লেবেল দেখে যাচাই করে কিনতে হবে । আর সর্বোত্তম ফলাফলের জন্য খালি পেটে সকালে এই জুস পান করার পরামর্শ দেওয়া হয় ।

৫) আমলা জুস পান করার সতর্কতা কি কি ?

উত্তর): যদিও আমলা জুস বহুল উপকারী এবং বেশির ভাগ ব্যক্তির জন্যে নিরাপদ , তবুও কিছু ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত । বিশেষত: যদি আপনার পূর্বগত কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে, যেমন ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেশার বা কিডনীর সমস্যা, তাহলে ব্যবহারের আগে স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারের সঙ্গে পরামর্শ করে এটির পান করা উচিত । এছাড়া এর অতিরিক্ত সেবনের ফলে হজমের সমস্যারও সৃষ্টি করতে পারে ।

৬) আমলা জুসের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি হতে পারে ?

উত্তর): অত্যন্ত অল্পসংখ্যক কিছু ব্যক্তির আমলা জুসে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া হতে পারে, যদিও এটি বিরলপ্রায় বলা যেতে পারে । তবে পান করার পরে যদি কোনো প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করেন, যেমন ত্বকে ফুসকুড়ি বা পেটের সমস্যা, তবে দ্রুত এটি পান করা বন্ধ করে ডাক্তার বা ডায়েটেশিয়ানের পরামর্শ নেওয়া উচিত ।


বর্তমান দিনে প্রায় যেকোন প্রাকৃতিক স্বাস্থ্যবিধিতে আমলা জুস একটি মূল্যবান সংযোজন হয়ে দাঁড়ি্য়েছে । আমলা তার হজমক্ষমতা উন্নত করা থেকে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানো এবং ইমিউনিটি ক্ষমতা বাড়ানো ইত্যাদির জন্যে আজ প্রায় সর্বজন পরিচিত । এর ঐতিহ্যগত তাৎপর্য, উপকারিতা এবং এটিকে গ্রহণ করার সঠিক পদ্ধতিগুলিকে বোঝার মাধ্যমে আমরা আমাদের সামগ্রিক সুস্থতা এবং স্বাস্থ্যের্ উন্নতি ঘটানোর জন্যে আমলার শক্তিকে কাজে লাগাতে পারি । আশা করি, এই ব্লগ পোস্টটি পড়ে আমলা সম্পর্কে আমাদের বেশ কিছু তথ্য আপনাদের মনের সংকোচ দ্বিধা কাটাতে সাহায্য করবে এবং আমলা আপনার জন্যে সঠিক কিনা তা নির্বাচনে সহায়তা করবে । পোস্টটি পড়ার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ এবং যদি আপনি পোস্টটি পড়ে কাজের মনে হয়, তাহলে অন্যদের শেয়ার করার জন্য অনুরোধ রইলো ।

 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ