বর্তমান দ্রুতময়তার বিশ্বে, সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা আগের থেকে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে । না চাইলেও মানুষ আজকের ব্যস্ত লাইফস্টাইল, খারাপ খাবার খাওয়ার সাথে সাথে বর্ধিত স্ট্রেসের মধ্যে জড়িয়ে পড়ছে । আর তার জন্যে খাবার থেকে যে পরিমাণ পুষ্টি বা পুষ্টি-উপাদানের সরবরাহ হওয়া উচিত তা সে সংগ্রহ করে উঠতে পারছে না কখনো বাজে অভ্যাসের জন্য বা কখনো অনিচ্ছাকৃত কারণে । আর পুষ্টির এই ফাঁকগুলোকে ভরাট করতে বা সঠিক পরিমাণ পুষ্টি-উপাদানগুলির সরবরাহের জন্য সুষম খাদ্য গ্রহণ অপরিহার্য । কিন্তু তা সত্ত্বেও বলা যেতে পারে যে পরিপূরকগুলি এই পুষ্টির ফাঁকগুলির কিছুটা হলেই মেরামতি করে সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং দীর্ঘমেয়াদী সুস্থতাকে প্রদান করার ব্যাপারে অনেকট্ই ভরসা যোগাতে পারে ।
কিন্তু কারো কারো ক্ষে্ত্রে, বিশেষত: যাদের নিউট্রিশন এবং পরিপূরক সম্পর্কে সেইরকম কোন ধারণা নেই, তাদের ক্ষেত্রে বাজারে পাওয়া যায় এইরকম প্রচুর পরিপূরকগুলির মধ্যে সঠিকটি বেছে নেওয়া কখনো কখনো খুবই বিভ্রান্তিকর হতে পারে । এই ব্লগ পোস্টে আমরা সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্যে সেরা ৩টি সম্পূরক নিয়ে আলোচনা করবো । যে সম্পূরকগুলি তাদের উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য-সুবিধার জন্যে বিশেষজ্ঞদের দ্বারা ব্যাপকভাবে সুপারিশ করা হয়ে থাকে এবং প্রায় বেশিরভাগ মানুষের সুস্থতার জন্যে দৈনন্দিন রুটিনে এদের রাখলে তারা লাভবান হতে পারেন ।
পরিপূরক কেন আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ
কোন ব্যক্তি সারাদিনে বিভিন্ন খাদ্য খাওয়ার পরেও তার পুষ্টি-উপাদানগুলির সরবরাহে ঘাটতি পড়তে পারে । বিশেষত: আজকের ব্যস্ততাবহুল জীবনযাত্রায় আমরা জাঙ্ক ফুড বা প্রসেসড ফুড খেতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছি বা বাধ্য হচ্ছি । আর এই ধরনের বেশিরভাগ খাবারই ক্ষিদে মেটায়, কিন্তু শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় বিশেষ পুষ্টি-উপাদানগুলির সরবরাহ করতে পারে না । বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ধরনের খাবার থেকে আমরা প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ বা অন্যান্য অনেক উপাদান পাই না । আরো বিভিন্ন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কারণ এইধরনের পুষ্টি-উপাদানের ঘাটতির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে । খারাপ খাদ্য নির্বাচন, খাদ্যগ্রহণের সময় ঠিক না রাখা, খাদ্যের প্রক্রিয়াকরণ, মাটিতে বিভিন্ন রাসায়নিকের প্রয়োগের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ফল ইত্যাদি বহু কারণে আজ মানুষের সঠিক পুষ্টিতে ফাঁক থেকে যাচ্ছে । আর এই ফাঁকগুলো ভরাট করার জন্যে খাদ্য পরিপূরকগুলি কার্যকর হয়ে দাঁড়াচ্ছে এবং জনপ্রিয়তা অর্জন করছে । তবে মনে রাখতে হবে, খাদ্য পরিপূরক গুলি সম্পূর্ণ খাদ্য খাওয়ার পরে পুষ্টির ফাঁকগুলো ভরাট করার জন্যে গ্রহণ করা যেতে পারে, কিন্তু কোনমতেই এগুলি খাদ্যের পরিবর্ত হতে পারে না ।
সম্পূরকগুলি কেন উপকারী হতে পারে তার মূল কারণ :
(ক) পুষ্টির শূন্যস্থান পূরণ – আধুনিক যুগের খাদ্যগুলিতে প্রায়শ:ই গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন এবং খনিজগুলির অভাব থেকে যায় । ফলে সামগ্রিক পুষ্টিতে ফাক থেকে যায়, আর এই ফাকগুলি ভরাট করার জন্যে পরিপূরকগুলি কার্যকরী হয়ে ওঠে ।
(খ) ঘাটতি প্রতিরোধ – বিভিন্ন ভিটামিনের ঘাটতি হাড়ের সমস্যা থেকে খারাপ ইমিউনিটি পর্যন্ত স্বাস্থ্যক্ষেত্রে গুরুতর সমস্যার জন্যে দায়ী হতে পারে । পরিপূরকগুলির মাধ্যমে নিশ্চিত করা যায় যে আপনি পর্যাপ্ত পুষ্টি পেতে পারেন ।
(গ) সামগ্রিক সুস্থতার জন্য – ওমেগা-৩ এবং প্রোবায়োটিকের মতো বেশ কিছু পরিপূরক স্বাস্থ্যক্ষেত্রে আমাদের অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান করতে পারে । যেমন – জ্ঞানীয় কার্যকরিতার উন্নতি ঘটানো, হার্টের সুস্থতা প্রদান করা এবং হজমক্ষমতা বাড়ানো ইত্যাদি ।
কিন্তু পরিপূরকগুলিকে কখনোই সুষম খাদ্যের বিকল্প হিসাবে
ভাবা উচিত নয় । পরিপূরকগুলি খাদ্যগ্রহণের পরেও পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করে আপনার
সামগ্রিক সুস্থতার জন্যে একটি বিকল্প হাতিয়ার হতে পারে ।
স্বাস্থ্যের জন্য সেরা ৩টি পরিপূরক
১) ভিটামিন ডি : সানশাইন ভিটামিন
শরীরের হাড় শক্তিশালী রাখতে, একটি সুস্থ ইমিউন সিস্টেম এবং
সামগ্রিক শারীরিক কার্যকলাপ বজায় রাখার জন্যে ভিটামিন ডি একটি অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন । স্বাস্থ্যক্ষেত্রে এর অপরিসীম গুরুত্ব থাকা সত্ত্বেও
ভৌগলিক অবস্থানের কারণে, খারাপ খাদ্যাভ্যাস এবং সুর্যের সীমিত এক্সপোজার জনিত
বিভিন্ন কারণে বহু মানুষ ভিটামিন ডি-য়ের অভাবের শিকার হন ।
ভিটামিন ডি-য়ের উৎস :
(ক) সূর্যের আলো ভিটামিন ডি-য়ের সবচেয়ে ভালো প্রাকৃতিক উৎস ।
(খ) চর্বিযুক্ত মাছ (স্যামন, ম্যাকরেল), দুগ্ধজাত পণ্য এবং ডিমের মতো কিছু
খাবারে ভিটামিন ডি পাওয়া যায় ।
(গ) বহু ক্ষেত্রে, শরীরের প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত মাত্রা বজায় রাখার জন্যে
পরিপূরকের প্রয়োজন হয় ।
ভিটামিন ডি-য়ের প্রয়োজনীয়তা :
(ক) হাড়ের স্বাস্থ্য – ভিটামিন ডি আমাদের শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে । যা শক্তিশালী হাড়ের জন্যে এবং অস্টিওপরোসিসের সমস্যা প্রতিরোধের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ।
(খ) ইমিউন ফাংশন – এই ভিটামিন ইমিউন সিস্টেমের প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, সংক্রমণ এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগ থেকে শরীরকে রক্ষা করতে সহায়তা করা ইত্যাদি কাজে একটি মূল ভূমিকা গ্রহণ করে ।
(গ) মেজাজ নিয়ন্ত্রণ – ভিটামিন ডি মেজাজ নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে যুক্ত । এর নিম্ন মাত্রার ফলে বিষণ্ণতা এবং ঋতুজনিত সংবেদনশীলতা ইত্যাদির সঙ্গে যুক্ত ।
২) ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড
হার্ট এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্যে এবং তাদের কার্যকারিতা এবং সক্ষমতা
বজয় রখার জন্যে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় । এছাড়াও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে এটি বিস্তৃত পরিসরে
বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করে । কিন্তু বেশির ভাগ মানুষই তাদের খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত
পরিমাণে ওমেগা-৩ গ্রহণ করেন না, যার ফল হিসাবে বিস্তৃত সংখ্যক মানুষের মধ্যে
পরিপূরক হিসাবে এর গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা দেখা যায় ।
ওমেগা-৩ য়ের উৎস :
(ক) চর্বিযুক্ত মাছ, যেমন-স্যামন, ম্যাকরেল এবং সার্ডিন ইত্যাদি মাছ ওমেগা-৩
উপাদানে সমৃদ্ধ ।
(খ) ওমেগা-৩ য়ের উদ্ভিদ ভিত্তিক উৎসগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- ফ্লাক্স সীড,
চিয়াবীজ, আখরোট ইত্যাদি ।
(গ) ওমেগা-৩ সম্পূরক, যারা খাদ্যের মাধ্যমে পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করেন না বা
কম গ্রহণ করতে পারেন, তাদের জন্যে এটি একটি বিকল্প হতে পারে ।
ওমেগা-৩ য়ের প্রয়োজনীয়তা :
(ক) হার্টের স্বাস্থ্য – ওমেগা-৩ শরীরের ইনফ্ল্যামেশন কমাতে, রক্তচাপ কমাতে এবং হার্টের রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে । এরা ট্রাইগ্লিসারাইড কমিয়ে এইচ.ডি.এল (ভালো কোলেস্টেরল) বাড়িয়ে তুলে কোলেস্টেরলের মাত্রাকে উন্নত করতে সাহায্য করে ।
(খ) মস্তিষ্কের কার্যকারিতা – ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের সামগ্রিক
স্বাস্থ্য এবং জ্ঞানীয় ফাংশনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । তাছাড়াও ADHD এবং বিষণ্ণতার মতো মানসিক অবস্থার লক্ষণগুলিতেও
এটিকে সাহায্য করতে দেখা যায় ।
(গ) জয়েন্ট এবং চোখের স্বাস্থ্য – ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডকে হাড়ের জয়েন্টগুলিকে ভালো রাখতে, আর্থ্রারাইটিস এবং চোখের শুকনো হয়ে যাওয়ার মতো সিনড্রোমগুলিতে কার্যকরী হতে দেখা যায় ।
৩) প্রোবায়োটিকস : হজম এবং ইমিউনিটির জন্য ভালো ব্যাকটেরিয়া
প্রোবায়োটিক হলো এক ধরনের জীবন্ত ব্যাকটেরিয়া, যা পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে
বহু স্বাস্থ্য-সুবিধা প্রদান করতে পারে । এরা অন্ত্রের স্বাস্থ্য এবং সামগ্রিক
সুস্থতার ক্ষেত্রে বহু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে ।
প্রোবায়োটিকের উৎস :
(ক) দই, কেফির, কিমচি, স্যুরক্রট এবং মিশোর মতো খাবারে প্রচুর পরিমাণে
প্রোবায়োটিক পাওয়া যায় ।
(খ) এছাড়া বাজারে প্রোবায়োটিক পরিপূরক ক্যাপসুল, ট্যাবলেট এবং পাউডার আকারে
পাওয়া যায় ।
প্রোবায়োটিকের প্রয়োজনীয়তা :
(ক) অন্ত্রের স্বাস্থ্য – প্রোবায়োটিকগুলি অন্ত্রের মাইক্রোবায়ামকে সমর্থন করে স্বাস্থ্যকর অন্ত্র পেতে সাহায্য করে । এছাড়া পুষ্টি-উপাদানগুলির শোষণে, পেট ফাঁপা, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ডায়রিয়ার মতো গ্যাস্ট্রো-ইনটেস্টিনাল সমস্যাগুলিকে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে ।
(খ) ইমিউন সিস্টেমকে সহায়তা – ইমিউনিটি সিস্টেমের সঙ্গে অন্ত্রের মাইক্রোবায়াম প্রত্যক্ষভাবে জড়িত । কারণ, ইমিউনিটি সিস্টেমের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অন্ত্রে থাকে ।
(গ) মানসিক স্বাস্থ্য – গবেষণায় দেখা গেছে যে মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে অন্ত্রের স্বাস্থ্যের একটি শক্তিশালী সংযোগ রয়েছে । সেই হিসাবে পরোক্ষভাবে উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতার মতো লক্ষণগুলির হ্রাসে প্রোবায়োটিকগুলি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারে ।
পরিপূরকগুলি সম্পর্কে দ্রুত রেফারেন্সের জন্য চার্ট
পরিপূরক |
সুবিধা |
উৎস |
ভিটামিন ডি |
শক্তিশালী হাড়, ইমিউন ফাংশন, মেজাজ নিয়ন্ত্রণ |
সূর্যালোক, চর্বিযুক্ত মাছ, পরিপূরক |
ওমেগা-৩ |
হার্টের স্বাস্থ্য, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা, প্রদাহ হ্রাস |
চর্বিযুক্ত মাছ, তিসি বীজ, পরিপূরক |
প্রোবায়োটিক |
হজমের উন্নতি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, মানসিক স্বাস্থ্য |
দই, কেফির, ইয়োগার্ট, কিমচি, মিসো, পরিপূরক |
সম্ভাব্য ঝুঁকি এবং পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া
যদিও এইসব পরিপূরকগুলি স্বাস্থ্য-ক্ষেত্রে অত্যন্ত উপকারী হতে পারে, তবুও এদের সম্ভাব্য পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া এবং ঝুঁকিগুলির সম্পর্কে জেনে সচেতনতার সঙ্গে সঠিকভাবে এগুলিকে ব্যবহার করা উচিত –
(ক) ভিটামিন ডি : পরিপূরক হিসাবে এটির অতিরিক্ত সেবন করলে বিষাক্ততার দিকে পরিচালিত হতে পারে । যার ফলে বমি বমি ভাব এবং মারাত্মক অবস্থায় কিডনীর সমস্যার মতো উপসর্গ তৈরী করতে পারে । শারীরিক অবস্থা এবং প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী সঠিক ডোজ নেওয়া উচিত ।
(খ) ওমেগা-৩ : পরিপূরক হিসাবে অতিরিক্ত মাত্রায় সেবনের ফলে রক্ত পাতলা করতে পারে । বিশেষ করে রক্ত পাতলাকারী ওষুধ সেবনকারীদের জন্যে রক্তপাত ঘটলে জমাট বাঁধার ক্ষেত্রে প্রবল সমস্যা তৈরী করতে পারে । বিশেষ অবস্থাগুলির নিরীক্ষণ করার পরে ডোজ নির্ণয় করা উচিত ।
(গ) প্রোবায়োটিক : পরিপূরক হিসাবে এটি গ্রহণ করার সময়ে কিছু মানুষ হজম সংক্রান্ত বা পেটসংক্রান্ত কিছু অস্বস্তি অনুভব করতে পারেন । যেমন – পেট ফাঁপা, পেট ভারী বোধ করা, পেট ফোলা ভাব ইত্যাদি ।
কোন পরিপূরক শুরু করার আগে কোন
পেশাদার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী বা পেশাদার ডায়েটেশিয়ানের সঙ্গে পরামর্শ করা
উচিত । তিনি আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্য, আপনার শরীরের বিশেষ অবস্থাগুলি পর্যবেক্ষণ
করে ডোজ নির্ণয় করে দেওয়ার পরে সেই ডোজ অনুসরণ করার চেষ্টা করলে আপনি পরিপূরকগুলির
সঠিক সুবিধা লাভ করতে পারেন ।
কিভাবে আপনার জন্য সঠিক পরিপূরক নির্বাচন করবেন
আপনার জন্য সঠিক পরিপূরক
নির্বাচন করার বিষয়টি স্বাস্থ্যক্ষেত্রে আপনার লক্ষ্য, আপনার জীবনধারা, আপনার
সামগ্রিক স্বাস্থ্য, আপনার অন্তর্নিহিত কোন বিশেষ অবস্থা, আপনার খাদ্যাভ্যাস
ইত্যাদি বিষয়গুলির উপরে নির্ভর করে । এখানে সাধারণ কিছু টিপস দেওয়া হলো –
(ক) পরামর্শ নিন – পরিপূরক গ্রহণের আগে আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সঙ্গে সেই পরিপূরক সম্পর্কিত আলোচনা করুন । বিশেষ করে যদি আপনার কোন অর্ন্তনিহিত সমস্যা বিদ্যমান থাকে তাহলে অবশ্যই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিন ।
(খ) গুণমান যাচাই করুন – কোন পরিপূরক কেনার আগে বা গ্রহণের আগ সেই পরিপূরকের লেবেল যাচাই করুন । কোন তৃতীয় পক্ষের পরীক্ষার শংসাপত্র বা জি.এম.পি-র মতো সার্টিফিকেট সহ নামী ব্র্যান্ডের পরিপূরক নির্বাচন করুন । আপনার স্বাস্থ্যের নিরিখে মূল্য নয়, গুণমান যাচাই করুন ।
(গ) প্রয়োজনীয়তা বুঝুন – আপনার স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে আপনার লক্ষ্য, খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার উপর ভিত্তি করে কোন ধরনের পুষ্টির ঘাটতি সবচেয়ে বেশি চিহ্নিত করার চেষ্টা করুন এবং পরিপূরক নির্বাচন করুন । প্রয়োজনে কোন পেশাদারের সাহায্য নিন ।
(ঘ) উপাদান যাচাই করুন – কোন পরিপূরক কেনার আগে পণ্যের গায়ের লেবেল যাচাই করুন । পণ্যটিতে আপনার প্রয়োজনীয় উপাদানটি কতো মাত্রায় আছে, অপ্রয়োজনীয় ফিলার বা কোন অতিরিক্ত কৃত্রিম উপাদান আছে কিনা তা যাচাই করে নিন ।
প্রায়শ:ই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQs)
১) জনসংখ্যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাধারণ ভিটামিনের ঘাটতিগুলি কি কি ?
উত্তর): বর্তমান জীবনের উদ্বেগময় ব্যস্ত জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাস এবং সুর্যের
সীমিত এক্সপোজারের কারণে জনসংখ্যার বিশাল অংশের মধ্যে ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি১২
এবং আয়রনের ঘাটতি সবচেয়ে সাধারণ হয়ে উঠেছে ।
২) আমি কি এই সম্পূরকগুলি একসাথে নিতে পারি ?
উত্তর): ভিটামিন ডি, ওমেগা-৩ এবং প্রোবায়োটিক একসাথে গ্রহণ করা সাধারণত:
নিরাপদ এবং একটি সিনারজিস্টিক সুবিধা প্রদান করতে পারে । তবে আপনার অন্তর্নিহিত
অবস্থার যাচাই করে ডোজ নির্ধারণ করা এবং ব্যক্তিগত পরামর্শের জন্য কোন পেশাদার
স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী বা পেশাদার ডায়েটেশিয়ানের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত
বলে আমি মনে করি ।
৩) ওমেগা-৩ য়ের জন্য সেরা খাদ্য উৎস কি ?
উত্তর): চর্বিযুক্ত মাছ (যেমন-স্যামন, ম্যাকরেল, সার্ডিন ইত্যদি), ফ্লাক্স
সীড, চিয়া সীড, আখরোট ইত্যাদি হলো ওমেগা-৩ য়ের সেরা প্রাকৃতিক খাদ্য উৎস ।
৪) আমার প্রোবায়োটিক সম্পূরক প্রয়োজন কিনা তা আমি কি করে বুঝতে পারি ?
উত্তর): যদি আপনি ঘন ঘন বিভিন্ন ধরনের হজমের সমস্যায় ভুগতে থাকেন, যেমন- পেট
ফোলা ভাব, গ্যাস হওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা বা ডায়রিয়া হওয়া ইত্যাদি, তাহলে আপনি
প্রোবায়োটিকের সাহায্য নিতে পারেন । তবে আমার মতে, ব্যক্তিগত পরামর্শের জন্য কোন
পেশাদার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী বা পেশাদার ডায়েটেশিয়ানের সঙ্গে পরামর্শ করে
নেওয়া উচিত ।
৫) কোন গর্ভবতী মহিলা বা বুকের দুধ খাওয়ানো মহিলাদের জন্য সম্পূরকগুলি কি নিরাপদ ?
উত্তর): কিছু ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি এবং ওমেগা-৩, গর্ভবতী মহিলা বা বুকের দুধ
খাওয়ানো মহিলাদের জন্য নিরাপদ হতে পারে । তবে এই ধরনের অবস্থায় মহিলাদের শরীরে
অনেক বিশেষ অবস্থার সৃষ্টি হয় । বহু হরমোন প্রতিক্রিয়াশীল অবস্থায় থাকে । তাই আমার
মতে, এই অবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত কোন পরিপূরক গ্রহণ নিরাপদ নাও হতে পারে
। এই বিশেষ অবস্থাগুলিতে সর্বদা ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা উচিত ।
৬) পরিপূরক থেকে ফলাফল দেখতে কতোক্ষণ লাগতে পারে ?
উত্তর): ব্যক্তিবিশেষে বা তার সামগ্রিক স্বাস্থ্য অবস্থা, তার খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রার ধরন, তার অন্তর্নিহিত অবস্থা, পরিপূরকের গুণমান, ওষুধ বা পরিপূরকের প্রতি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আনুগত্য ইত্যাদি বিষয়গুলির উপরে ফলাফল নির্ভর করে । সাধারণভাবে, হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন ডি-য়ের উপকারিতা কয়েক সপ্তাহ সময় নিতে পারে, আবার হৃদরোগের ক্ষেত্রে ওমেগা-৩ য়ের প্রভাব কয়েক মাস অবধি সময় নিতে পারে । তবে মনে রাখতে হবে, পরিপূরক পুষ্টির ঘাটতি মেটানোর জন্য, এটিকে ওষুধ হিসাবে না দেখলেই ভালো ।
স্বাস্থ্যের জন্য সেরা ৩টি সম্পূরক - ভিটামিন ডি, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং
প্রোবায়োটিকস আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করতে পারে । বিশেষ করে তখন, যখন ব্যস্ততার কারণে, বাধ্যতামূলক
পক্রিয়াজাত বা বাজার থেকে কেনা খাবারে অভ্যস্ত হতে হয় এবং উদ্বেগময় জীবনযাত্রার
কারণে পুষ্টির ঘাটতি হয় । এই সম্পূরকগুলির অসংখ্য স্বাস্থ্য-সুবিধার জন্য এগুলিকে
তখন প্রতিদিনকার স্বাস্থ্য রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে । কোন স্বাস্থ্যসেবা
পেশাদারের সঙ্গে পরামর্শ করে তার পরামর্শ অনুসারে নির্ধারিত ডোজে এই সম্পূরকগুলির
কোন একটি বা দু’টি বা সবক’টি এবং একটি সুষম খাদ্য বজায় রেখে আপনি আপনার
জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারেন । তবে মনে রাখবেন, পরিপূরকগুলি নিয়মিত ব্যয়াম,
সঠিক ঘুম, স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা এবং স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে ব্যবহার করলে
আপনি এদের সর্বোচ্চ লাভ পেতে পারেন ।
0 মন্তব্যসমূহ