রাতে ঘুমানোর সময় পায়ের পেশীতে টান ধরা বা মাসল্ ক্র্যাম্প হওয়া, প্রায়শ:ই একটি সাধারণ সমস্যা, যা অনেকেরই ঘুম ব্যাহত করে । এই আকস্মিক, অনিচ্ছাকৃত পেশীতে টান ধরার ঘটনাটি সাধারণত: কাফ্ মাসলগুলিকে প্রভাবিত করে এবং কোন রকম পূর্বলক্ষণ ছাড়াই ঘটে থাকে বা ঘটতে পারে এবং অস্বস্তি ও হতাশার সৃষ্টি করে । এমনকি পরেরদিনও হালকা ব্যথা অনুভব হতে পারে । যদিও সাধারণভাবে এই ধরনের মাসল্ ক্র্যাম্পগুলি ক্ষতিকারক হয় না, তবে এরা ব্যক্তির ঘুমের মান এবং দীর্ঘকালীন ক্ষেত্রে সামগ্রিক সুস্থতার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে । এই ব্লগ পোস্টে আমরা রাতে পেশীতে টান ধরার কারণগুলি কি এবং কেন ঘটে, রাতে পেশীতে টান দিয়ে কি রোগের সূত্রপাত হতে পারে, কিসের অভাবে রাতে পায়ের পেশীতে টন ধরে, কিভাবে আমরা রাতে পায়ের পেশীতে টান ধরা বন্ধ করতে পারি, পায়ের পেশীতে টান ধরার জন্য আমাদের কিভাবে রাতে ঘুমানো উচিত ইত্যাদি বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করবো । যদি পোস্টটি পড়ে ভালো লাগে বা পোস্টে দেওয়া তথ্যগুলিকে আপনার কার্যকরী বলে মনে হয়, তাহলে অনুগ্রহ করে শেয়ার করবেন যাতে এই সমস্যার মোকাবিলা করে অন্যান্য মানুষ যারা এই সমস্যায় ভুগছেন তারা যেন রাতের ঘুম উপভোগ করতে পরেন ।
রাত্রিকালীন পেশী ক্র্যাম্প কী এবং কেন ঘটে?
যখন একটি পেশী (সাধারণত: পায়ের) হঠাৎ শক্ত হয়ে ওঠ এবং যার ফলে ব্যথার সৃষ্টি হয়, তখন সাধারণত: আমরা তাকে পায়ের পেশীতে টান ধরা বা পায়ের মাসল্ ক্র্যাম্প বলে থাকি । যখন আমরা ঘুমিয়ে থাকি বা বিশ্রাম করি তখন হঠাৎ পায়ের কাফ মাসলগুলিতে এটা বেশি হয় । এমনকি ঘুমন্ত অবস্থায় ব্যথার জন্যে উঠে বসে হালকা ম্যাসাজ করার পরে এটি আগের অবস্থায় ফিরে যায়, কিন্তু ঘুম ব্যাহত হয় এবং কিছু সময় অবধি খুব হালকা ব্যথা থেকে যায় ।
সাধারণ ভাবে রাতে পায়ের পেশীতে টান ধরার কারণগুলি :
১) ডি-হাইড্রেশন – যখন আমাদের শরীরে জলের অভাব দেখা দেয় তখন শরীরে ইলেক্ট্রোলইটের ভারসাম্য ব্যাহত হয়, যার ফলে রাতে পায়ের পেশীতে টান ধরতে পারে ।
২) খারাপ রক্ত সঞ্চালন – অনেক ক্ষেত্রে ঘুমের সময় খারাপ রক্তপ্রবাহের কারণে পায়ের পেশীতে খিচুনি ধরতে পারে । শরীরের অন্যান্য অন্তর্নিহিত কারণে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হলেও এটি ঘটতে পারে ।
৩) পেশীর ক্লান্তির কারণে – দিনের বেলা অতিরিক্ত পরিশ্রম করার ফলস্বরূপ আমাদের পেশীগুলিতে বিশ্রামের সময় অর্থাৎ রাতে ঘুমানোর সময় পেশীগুলি তাদের ক্লান্তি পুনরুদ্ধার করতে থাকে, সেই সময় কখনো কখনো পেশীগুলিতে টান বা ক্র্যাম্প ধরতে পারে ।
৪) শোয়ার অবস্থান – নির্দিষ্ট অবস্থানে শুয়ে না ঘুমালে বা নির্দিষ্টভাবে শুয়ে না ঘুমালে শোওয়ার দোষজনিত কারণে কখনো কখনো ঘুমানোর সময় পায়ের পেশীতে ক্র্যাম্প হতে পারে ।
৫) বয়সজনিত কারণে – স্বাভাবিক পেশী এবং স্নায়ু পরিবর্তনের কারণে বাড়ন্ত তরুণ, প্রাপ্তবয়স্ক বা বয়স্কদের ক্ষেত্রে রাতে পায়ের পেশীতে টান ধরার প্রবণতা বেশি দেখা যায় ।
৬) পুষ্টি-উপাদানের ঘাটতির কারণে – শরীরে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম বা ক্যালসিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদানগুলির ঘাটতির কারণে ঘুমানোর সময়ে পায়ের পেশীতে টান ধরতে পারে ।
৭) ওষুধের প্রভাব – কিছু কিছু শ্রেণীর ওষুধের প্রভাবে, বিশেষত: মূত্রবর্ধক শ্রেণীর ওষুধের (যেমন - স্ট্যাটিন) প্রভাব রাতে পায়ের পেশী ক্র্যাম্পের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে ।
পেশী ক্র্যাম্প দিয়ে কি রোগের সূত্রপাত হতে পারে ?
যদিও সাধারণভাবে পায়ের পেশীর ক্র্যাম্প প্রায়শ:ই নিরীহ বলে ধরা হয়, তবে কখনো কখনো তারা শরীরের অন্তর্নিহিত কোন সমস্যার সঙ্কেত দেয় এবং চিকিৎসার প্রয়োজনের ইঙ্গিত দেয় । পায়ের পেশীর ক্র্যাম্পের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে এইরকম কিছু সম্ভাব্য অন্তর্নিহিত সমস্যার কথা এখানে আলোচনা করা হলো –
১) পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ (PAD) – শরীরের মধ্যে এই ধরনের সমস্যা উদ্ভূত হলে ধমনীর সংকীর্নতার কারণে পায়ে রক্তের প্রবাহ কমে যায় । ফলস্বরূপ, অতিরিক্ত কার্যকলাপের সময় বা রাতে ঘুমানোর সময় পায়ের ক্র্যাম্প দেখা দিতে পারে ।
২) ডায়াবেটিস – রক্তে শর্করার উচ্চ মাত্রা ধীরে ধীরে স্নায়ুর ক্ষতি করতে পারে । যার ফলস্বরূপ পায়ের পেশীতে টান ধরা বা ক্র্যাম্প, এমনকি অন্যান্য পেশীরও সমস্যা দেখা দিতে পারে ।
৩) মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস (MS) – শরীরে মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস দেখা দিলে স্নায়ুর ক্ষতির কারণে লক্ষণ হিসাবে পায়ের পেশীর খিচুনি এবং ক্র্যাম্প দেখা দিতে পারে ।
৪) নিউরোপ্যাথি – বিভিন্ন কারণে শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি হলে বা অত্যধিক অ্যালকোহল গ্রহণের ফলে স্নায়ুর ক্ষতি হতে পারে, আর তার দরুণ পায়ের পেশীতে টান ধরতে পারে ।
৫) থাইরয়েড ডিসঅর্ডার – শরীরে হাইপোথাইরয়েডিজম (আন্ডার-অ্যাকটিভ থাইরয়েড) দেওয়ার ফলে রাতে পায়ের পেশী শক্ত হয়ে যাওয়া এবং ক্র্যাম্পের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে ।
কিসের অভাবে রাতে পেশী ক্র্যাম্প হতে পারে ?
আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য-গ্রহণের মাধ্যমে শরীরে প্রধানত: দুই ধরনের পুষ্টি-উপাদান সরবরাহ হয় – ম্যাক্রো-এলিমেন্ট উপাদান (কার্বোহ্ইড্রেট, প্রোটিন ইত্যাদি) এবং মাইক্রো-এলিমেন্ট (ভিটামিন, মিনারেলস ইত্যাদি) । কিন্তু আমাদের খারাপ খাদ্যাভ্যাসের ফলে শরীরে এর যেকোন একটি ধরনের (বিশেষত: মাইক্রো-এলিমেন্ট) উপাদানের ক্রমাগত ঘাটতি হতে থাকে । যদিও শরীরের এদের বিশেষ প্রয়োজন বা গুরুত্ব থেকে যায় । আর এর ফলস্বরূপ প্রাথমিক পর্যায়ে শরীর এই ঘাটতির কথা জানান দিতে থাকে, যার বহি:প্রকাশ হিসাবে রাতে পায়ের পেশীতে টান ধরতে পারে । কিছু গুরুত্বপূর্ন উপাদানের ঘাটতির ফলে এটা হতে পারে, যেমন –
১) পটাশিয়াম – পটাশিয়াম আমাদের শরীরের পেশী সংকোচনকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে । এর ঘাটতির ফলে শরীরে পায়ের পেশীতে রাত্রিকালীন ক্র্যাম্প, দুর্বলতা এবং ক্লান্তি দেখা দিতে পারে ।
২) ম্যাগনেশিয়াম – ম্যাগনেশিয়াম আমাদের শরীরের পেশীর শিথিলকরণে গুরুত্বপণর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে । শরীরে এই উপাদানের ঘাটতির ফল হিসাবে পায়ের পেশীতে খিঁচুনি বা পায়ের পেশী জড়ো হয়ে যাওয়া ঘটতে পারে ।
৩) ক্যালসিয়াম – আমাদের শরীরে সঠিক পেশী ফাংশনের জন্য ক্যালসিয়াম উপাদানের সঠিক উপস্থিতি অত্যন্ত আবশ্যক । শরীরে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কম হলে পায়ের পেশীতে ক্র্যাম্প বা খিঁচুনি দেখা দিতে পারে ।
৪) ভিটামিন ডি – ভিটামিন ডি উপাদানটি আমাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের শোষণ এবং সামগ্রিক পেশী স্বাস্থ্যের জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । এই উপাদানের ঘাটতির ফলে পেসীতে ব্যথা এবং রাতে শোওয়ার সময় পায়ের পেশীতে টান ধরতে পারে ।
সাধারণভাবে আমরা চটজলদি খাবারে, জাঙ্ক ফুডে বা প্রসেসড ফুডে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছি । কিন্তু এই সমস্ত খাবারে এই ধরনের মাইক্রো-এলিমেন্ট উপাদানটি প্রায় থাকে না বা তার গুণাগুণ রক্ষা হয় না বললেই চলে । যার জন্য এই ঘাটতি পূরণ করার জন্যে তাজা ফল, শাক-সবজি, বাদাম, দুগ্ধজাত খাবার এবং ফ্যাটহীন প্রোটিন সমৃদ্ধ সুষম খাদ্য খাওয়া প্রয়োজন ।
আমি কীভাবে রাতে পেশীর খিঁচুনি বন্ধ করতে পারি?
রাতে ঘুমানোর সময় পায়ের পেশীতে খিঁচুনি বন্ধ করার বা কমনোর জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে –
১) নিজেকে সঠিক হাইড্রেটেড রাখুন – শরীরের পেশীগুলিকে সঠিকভাবে হাইড্রেটেড রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা দরকার । যদি বেশি ঘাম ঝরে বা ব্যয়াম করে থাকেন বা অতিরিক্ত পরিশ্রম হয়ে থাকে, তাহলে ইলেক্ট্রোলাইটস সমৃদ্ধ খাবার খান ।
২) ঘুমানোর আগে হালকা ম্যাসাজ করুন – ঘুমানোর আগে পা প্রসারিত করে দুটি পা এবং কাফ মাসলগুলি হালকা ম্যাসাজ করে নিতে পারেন । বিশেষত: কাফ মাসলগুলি এবং হ্যামস্ট্রিংয়ের মতো ক্র্যাম্প প্রবণ অঞ্চলগুলির দিকে বিশেষ খেয়াল দিন ।
৩) পুষ্টি-উপাদানের ঘাটতি মেটান – স্বাস্থ্য সম্মত খাবার খান এবং পুষ্টি-উপাদানগুলির যাতে ঘাটতি না হয় সেইরকম খাবার খান । যে সমস্ত পুষ্টি-উপাদানগুলি পায়ের পেশীতে টান ধরার সমস্যার কারণ হতে পারে, তাদের ঘাটতি মেটাতে পারে এইরকম খাবারগুলি বেছে নিন । পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (যেমন- কলা, কমলা), ম্যাগনেশিয়াম (বাদাম, পালংশাক) এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (দুধ,পনীর) ইত্যাদি খাবারগুলি নিজের খাবারে অবশ্যই যুক্ত করুন ।
৪) ঘুমের সময় শোওয়ার অবস্থান ঠিক রাখুন – নিচের দিকে পা রেখে বা কুঁকড়ে, দুমড়ে শোওয়ার বদলে সোজা, প্রসারিত হয়ে পা দুটি সামান্য উচুতে রেখে শোওয়ার অভ্যাস করুন । এর জন্যে হালকা বালিশের সাহায্য নিতে পারেন ।
৫) গরম ঠান্ডা সেঁক ব্যবহার করুন – ঠান্ডা প্যাক পেশীর ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে পারে আবার গরম সেঁক টাইট পেশীগুলিকে শিথিল করতে সাহায্য করে । সুতরাং গরম-ঠান্ডা সেঁক ব্যবহার করলে লাভ পেতে পারেন ।
৬) আরামদায়ক জুতো ব্যবহার করুন – খুব উঁচু হিল বা টাইট বা অত্যন্ত শক্ত জুতোর বা এমন জুতো যা আপনার পায়ের পেশীতে চাপ দেয়, এইরকম জুতোর ব্যবহার এড়িয়ে চলুন ।
৭) উচিত পরিপূরক ব্যবহার করতে পারেন – যদি আপনার মনে হয় যে পুষ্টি-উপাদানের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে, তাহলে কোন পেশাদার নিউট্রিশনিস্ট বা ডায়েটেশিয়ানের সঙ্গে পরামর্শ করে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম বা ক্যালসিয়াম সম্পূরক ব্যবহার করতে পারেন ।
৮) ব্যায়ামের সাহায্য নিন – আপনার পায়ের পেশী শক্তিশালী করতে বা রক্ত সঞ্চালনের উন্নতি ঘটাতে বা পেশী শিথিল রাখার জন্যে নির্দিষ্ট ব্যয়াম করতে পারেন । এর জন্যে নির্দিষ্ট বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে পারেন ।
পেশী ক্র্যাম্প প্রতিরোধের জন্য কীভাবে ঘুমানো উচিত?
ঘুমনোর জন্যে বিছানায় আমাদের শোওয়ার অবস্থান রাতে রাতে পায়ের পেশীর খিঁচুনি প্রতিরোধে একটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারে । কারণ, শোওয়ার দোষের দরুন আমাদের ঘুমানোর সময় পায়ের পেশীতে টান ধরা বা খিঁচুনীর জন্যে একটি বড় প্রভাবকারী কারণ । এখানে কিছু বিষয় আলোচনা করা হলো –
১) পা সোজা করে ঘুমোন – বিছানায় পা সোজা প্রসারিত করে ঘুমোন । পা কুঁকড়ে, দুমড়ে শোওয়া এড়িয়ে চলুন ।
২) পা-কে আরাম দিন – পায়ের নীচে সামান্য উচু বালিশ দিয়ে শোওয়ার অভ্যাস করুন । এতে আপনার পা বাড়তি আরাম পায়, সামান্য উচু থাকার জন্যে রক্ত সঞ্চালনের উন্নতি ঘটে এবং ক্র্যাম্পিংয়ের ঝুঁকি কমে ।
৩) যথাযথ বিছানা বেছে নিন – শোওয়ার জন্যে সঠিক বিছানা বেছে নিন । এমন বিছানা বেছে নিন যে আপনার পেশীর চাপ রোধ করতে পর্যাপ্ত সহায়তা করে ।
৪) শো্ওয়ার আগে পেশী শিথিল করুন – সারাদিনের পরিশ্রম এবং ক্লান্তির দরুণ পেশীর টান কমাতে গভীর শ্বাস, প্রাণায়াম, ধ্যান ইত্যাদি শিথিলকরণ কৌশলগুলি রপ্ত করে পেশী শিথিল করে নিন ।
পেশী টান প্রতিরোধের কিছু দ্রুত সমাধান
কারণ |
সমাধান |
ডি-হা্ইড্রেশন |
প্রয়োজন অনুযায়ী জল পান করুন, ইলেক্ট্রোলাইটস সমৃদ্ধ খাবার খান |
খারাপ রক্তসঞ্চালন |
পা প্রসারিত করে শোওয়ার চেষ্টা করুন, ঘুমের সময় রক্তসঞ্চালন উন্নত করার জন্য পায়ের নীচে বালিশ দিয়ে শুতে পারেন |
পুষ্টি-উপাদানের ঘাটতি |
পটাসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান |
পেশীর ক্লান্তি |
শোওয়ার আগে সম্ভাব্য অঞ্চলগুলি বা সাধারণত: প্রভাবিত জায়গাগুলি হালকা করে ম্যাসাজ করে নিতে পারেন |
শোওয়ার অবস্থান |
পা কুঁকড়ে, দুমড়ে শোওয়া এড়াতে বালিশ ব্যবহার করুন |
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (F.A.Q) : রাত্রিকালীন পায়ে ক্র্যাম্প
১) রাতে পায়ে ক্র্যাম্পের কারণ কী ?
উ:- ডি-হাইড্রেশন,
খারাপ রক্ত সঞ্চালন, পেশীর ক্লান্তি, খারাপ শোওয়ার ভঙ্গিমা, বার্ধক্য অথবা
পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম বা ক্যালসিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ পু্ষ্টি-উপাদানের ঘাটতির
কারণে ঘুমানোর সময় পেশীতে টান ধরতে বা ক্র্যাম্প হতে পারে । কিছু ওষুধ এবং
ডায়াবেটিস বা পেরিফেরাল ধমনীর (PAD) মতো কিছু অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্যের কারণেও এটি দেখা দিতে
পারে ।
২) কোন ঘাটতি রাতের বেলায় পেশী ক্র্যাম্প হতে পারে ?
উ:- পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি হল রাতের বেলার পেশী ক্র্যাম্পের সাধারণ কারণ। এই পুষ্টিগুলি সঠিক পেশী ফাংশন এবং শিথিলকরণের জন্য প্রয়োজনীয়। এই পুষ্টির অভাব অনৈচ্ছিক পেশী সংকোচন প্রতিরোধ করার জন্য শরীরের ক্ষমতা ব্যাহত করে।
৩) ঘুমানোর সময় আমি কিভাবে পায়ে ক্র্যাম্প প্রতিরোধ করতে পারি ?
উ:- হাইড্রেটেড থাকা, প্রয়োজনীয় পুষ্টি সমৃদ্ধ সুষম খাদ্য গ্রহণ, শোবার আগে পেশী প্রসারিত করা বা ম্যাসেজ করা, সঠিক ঘুমের ভঙ্গি বজায় রাখা, সহায়ক বালিশ ব্যবহার করা এবং দিনের বেলা অতিরিক্ত আঁটসাঁট জুতা বা হাই হিল পরিহার করে রাতের বেলা পায়ের ক্র্যাম্প প্রতিরোধ করুন।
৪) রাত্রিকালীন পায়ে ক্র্যাম্প কি একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা নির্দেশ করতে পারে ?
উ:- যদিও বেশিরভাগ পায়ের ক্র্যাম্পগুলি ক্ষতিকারক নয়, ক্রমাগত বা গুরুতর ক্র্যাম্পগুলি পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ (PAD), ডায়াবেটিস, থাইরয়েড ডিজঅর্ডার, নিউরোপ্যাথি বা একাধিক স্ক্লেরোসিসের মতো অন্তর্নিহিত সমস্যাগুলি নির্দেশ করতে পারে। যদি ক্র্যাম্পগুলি ঘন ঘন হয় বা অন্যান্য উপসর্গগুলির সাথে যুক্ত হয় তবে একজন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারের সাথে পরামর্শ করুন।
৫) রাতের বেলা পায়ের ক্র্যাম্পের জন্য দ্রুত প্রতিকার কি ?
উ:- তাৎক্ষণিক প্রতিকারগুলির মধ্যে রয়েছে প্রভাবিত পেশীগুলিকে প্রসারিত করা এবং আলতো করে ম্যাসেজ করা, একটি উষ্ণ বা ঠান্ডা কম্প্রেস প্রয়োগ করা এবং সম্ভাব্য ডিহাইড্রেশন মোকাবেলায় জল পান করা। ঘুমের সময় পা সামান্য উঁচু করা রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে এবং ক্র্যাম্পিং কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
৬) পায়ে ক্র্যাম্পের জন্য কখন আমার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত ?
উ:- যদি পায়ে ক্র্যাম্প ঘন ঘন হয়, একটি বর্ধিত সময়ের জন্য স্থায়ী হয়, বা ফোলা, লালভাব, বা অন্যান্য সম্পর্কিত লক্ষণগুলির সাথে থাকে তাহলে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন৷ এটি আরও গুরুতর স্বাস্থ্যের অবস্থা নির্দেশ করতে পারে যার জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন।
রাতে ঘুমানোর সময় হঠাৎ পায়ে টান ধরা বা খিঁচুনি ধরা, নিশ্চিন্ত ঘুমের জন্য একটি উপদ্রবের কারণ হতে পারে । তবে সাধারণ কিছু কিছু জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে এই সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে । শরীরকে সঠিক হাইড্রেটেড রাখা, সুষম খাদ্যগ্রহণ, শো্ওয়ার অবস্থান ঠিক করা, প্রয়োজনে সম্পূরকের সাহায্য নেওয়া ইত্যাদি অভ্যাসগুলির মাধ্যমে এই সমস্যাকে এড়িয়ে যাওয়া যেতে পারে । কিন্তু এইসমস্ত অভ্যাসগুলির পরেও যদি ক্রমাগত এটি দেখা দিতে থাকে, তাহলে হতে পারে আপনার শরীর তার অন্তর্নিহিত কোন সমস্যার কথা জানান দেওয়ার নে্যে আপনাকে সঙ্কেত পাঠাচ্ছে । তাই দেরী না করে কোন পেশাদার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাহায্য নেওয়া উচিত এবং তাকে সমস্ত কিছু জানানো উচিত । সর্বোপরি মনে রাখতে হবে, একটি ভালো ঘুম আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্যে অপরিহার্য, তাই পেশীতে টান ধরার মতো বিষয়গুলি যাতে আপনার ঘুম বিঘ্নিত করতে না পারে, সেটা্ই আমাদের প্রচেষ্টা । ব্লগ পোস্টটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে অন্যকে শেয়ার করে ভালোভাবে ঘুমাতে সাহায্য করুন । আর এই সংক্রান্ত কোন বিশেষ প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করে জানান, আমরা চেষ্টা করবো আপনাকে সাহায্য করতে ।
0 মন্তব্যসমূহ