আদার
১০টি অসাধারণ উপকারিতা এবং কাদের এড়িয়ে চলা উচিত
আদা একটি সু-স্বাদু মশলা হিসাবে অত্যন্ত, যা বহু শতাব্দী ধরে শুধু রন্ধনশিল্পে নয় বহু ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাতেও ব্যবহৃত হয়ে আসছে । আদার বিভিন্ন স্বাস্থ্য-উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও এটা বলতে হবে যে, এর বহু ক্ষেত্রই এখনো পর্যন্ত আমাদের কাছে অজানা । এই ব্লগ পোস্টে আমরা জানার চেষ্টা করবো - আদার ১০টি অসাধারণ ব্যবহার, কার ক্ষেত্রে আদা ব্যবহার এড়িয়ে চলা উচিত এবং কেন ? তাছাড়াও আদা সম্পর্কে বেশ কিছু জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী সম্পর্কে উত্তর খুজে নেওয়ার চেষ্টা করবো । আশা করবো যারা স্বাস্থ্য সম্পর্কে উৎসাহী এবং কৌতূ্হলী তাদের এই ব্লগ পোস্টটি তাদের মনের কৌতূহল দূর করতে সাহায্য করবে ।
আদার ১০টি বিজ্ঞান-সমর্থিত উপকারিতা
আদা (বিজ্ঞানসম্মত নাম -জিঙ্গিবার অফিসিনাল) শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসায়
ব্যবহৃত হয়ে আসছে । আধুনিক বিজ্ঞানও বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে এর বিভিন্ন
উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য-উপকারিতা খুঁজে বার করেছে এবং সমর্থন করেছে । গবেষণার
মাধ্যমে জানা গেছে যে, আদার বিভিন্ন সক্রিয় যৌগ, যেমন- জিঞ্জারল এবং শোগাওল প্রভৃতি বমি বমি ভাব কমানো থেকে হার্টের
স্বাস্থ্যের উন্নতি বিবিধ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে । আমরা এখানে
স্বাস্থ্যক্ষেত্রে আদার সেরা ১০টি উপকারিতা আলোচনা করলাম –
১) বমি বমি ভাব
এবং গতিময়তার কারণে অসুস্থতা – আদা গর্ভাবস্থার কারণে, কেমোথেরাপির প্রতিক্রিয়ায় এবং
গতিময়তার কারণে অসুস্থতা বোধ এবং বমি বমি ভাব
মোকাবিলা করার জন্য বিখ্যাত । গবেষণায় দেখা গেছে যে, আদার সক্রিয় যৌগ জিঞ্জারল পেট
খালি করার প্রক্রিয়াকে দ্রুত করার জন্য এবং মস্তিষ্কে বমি বমি ভাব সৃষ্টিকারী সঙ্কেত
গুলিকে বন্ধ করার জন্যে কাজ করে । আমেরিকান বোর্ড অফ ফ্যামিলি মেডিসিনের জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্রে জানা গেছে
যে, গবেষণায় আদা গর্ভবতী মহিলাদের এবং কেমোথেরাপি রোগীদের ক্ষেত্রে বমি বমি ভাব
কমাতে কার্যকর ছিলো । সুতরাং বলা যেতেই পারে যে, তন্দ্রা বা আচ্ছন্ন ভাবের মতো
পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ছাড়াই আদা বমি বমি ভাবের বিরোধী হিসাবে দারুণ কাজ করতে পারে ।
ব্যবহারের পদ্ধতি এবং উপায় – বমি
বমি ভাব উপশমের জন্য আদাযুক্ত চা, বাজার জাত ক্যান্ডিযুক্ত আদা বা আদার পরিপূরক
ব্যবহার করা যেতে পারে ।
২) প্রদাহ এবং পেশীর ব্যথা কমায় –
ক্রীড়াবিদ এবং ফিটনেস উৎসাহীদের মধ্যে যারা ওয়ার্ক-আউটের পরে ব্যথা অনুভব করেন,
তারা আদার প্রদাহ-বিরোধী এবং ব্যথানাশক ক্ষমতার থেকে উপকৃত হতে পারেন । ২০১০ সালের
একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রতিদিন আদার ব্যবহারের ফলে ব্যয়ামের পরের পেশীর
ব্যথা প্রায় ২৫% পর্যন্ত কমানো যায় । লক্ষ্য করে দেখা গেছে যে, পেটের জ্বালাপোড়ার
মতো এবং অন্যান্য পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ছাড়াই আদার প্রভাব প্রায় নন-স্টেরয়েডাল
অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগ (NSAIDs)–এর মতোই । আর এর নিয়মিত ব্যবহারের
ফলে কঠিন ওয়ার্ক-আউটের পরে পেশীর নমনীয়তা এবং পেশী পুনরুদ্ধারেও সহায়তা করে ।
ব্যবহারের পদ্ধতি এবং উপায় – কঠিন
ওয়ার্কআউটের পরে স্মুদিতে বা স্যুপে তাজা আদা যোগ করে বা আদার পরিপূরক ক্যাপসুল
গ্রহণ করতে পারেন ।
৩) হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায় – আদার
প্রাকৃতিক যৌগগুলি হজমকারী এমজাইমগুলিকে উদ্দীপিত করে এবং খাদ্যকে দক্ষতার সাথে
ভেঙে ফেলতে সাহায্য করে । এটি পেট খালি করার প্রক্রিয়ার সময় কম করতে সাহায্য করে
এবং পেট ফাঁপা এবং পেটের অস্বস্তি কমাতেও ভূমিকা নেয় । তাছাড়াও, আদার সক্রিয়
যৌগগুলি অন্ত্রের নালীকে শিথিল করে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় এবং অন্ত্রের জ্বালপোড়া
সিনড্রোম (IBS)–য়ের লক্ষণগুলির প্রশমনেও সাহায্য করে ।
ব্যবহারের পদ্ধতি এবং উপায় – খাবার
খাওয়ার আগে আদাযুক্ত চা পান করতে পারেন অথবা হজমের এনজাইমগুলোকে উদ্দীপিত করার
জন্যে এক টুকরো কাঁচা আদা চিবিয়ে খেতে পারেন ।
৪) রক্তে শর্করার মাত্রা কমায় – নতুন
নতুন গবেষণায় জানা গেছে যে, আদা ইনসুলিন সংবেদনশীলতার সাথে যুক্ত, যা এটিকে টাইপ-২
ডায়াবেটিস পরিচালনার জন্যে এটিকে সহযোগী হিসাবে পরিচিতি দান করেছে । “ডায়াবেটিস
এবং মেটাবলিজম” নামক একটি জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা পত্রে দেখা গেছে যে, প্রতিদিন
২ গ্রাম আদার গুঁড়ো খাওয়ার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে ।
আর অতিরিক্তভাবে আদা রক্তে HbA1c য়ের মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে
পারে, যার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রার দীর্ঘমেয়াদী নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে ।
ব্যবহারের পদ্ধতি এবং উপায় – আপনার
সারাদিনের খাবারে অথবা সকালে খালি পেটে আদা ভেজানো জল পান করতে পারেন বা আদার
পরিপূরক গ্রহণ করতে পারেন ।
৫) শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের
বিরুদ্ধে লড়াই করে – আদার অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য এবং তার উষ্ণতা বৃদ্ধির
গুণের জন্য এটি সর্দি-কাশি, ফ্লু এবং গলা ব্যথার জন্যে এটি জনপ্রিয় প্রতিকার
হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে । এর বৈশিষ্টাবলীর জন্যে এটি শ্লেষ্মাকে ভেঙে শ্বাসনালীর
প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে । সাইনাসের কনজেশন এবং অবিরাম কাশি থেকে উপশমেও এটিকে
কার্যকরী ঘরোয়া প্রতিকার হয়ে উঠতে দেখা যায় ।
ব্যবহারের পদ্ধতি এবং উপায় –
ঈষদুষ্ণ জলে মধু এবং লেবুর রস সহযোগে একটি প্রশান্তিদায়ক পানীয় হিসাবে এটিকে পান
করতে পারেন অথবা আদাযুক্ত চা পান করতে পারেন ।
৬) পিরিয়ডসের ব্যথা কমায় – আদার
সক্রিয় প্রাকৃতিক যৌগগুলি
প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনের উৎপাদনে বাধা প্রদান করে, যা পিরিয়ডসের সময় ব্যথা
এবং প্রদাহের জন্য দায়ী হরমোনের মতো একটি যৌগ । ২০১৫ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে
যে, প্রতিদিন আদা গুঁড়োর (১০০০ মিলিগ্রাম) ব্যবহারের প্রয়োগ, ব্যথানাশক ওষুধ আইবুপ্রোফেনের
মতোই কার্যকরভাবে পিরিয়ডসের ব্যথা কমাতে পারে । সুতরাং এটি ওষুধের
পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া এবং ভবিষ্যতের সম্ভাব্য ঝুঁকি ছাড়াই পিরিয়ডসের ব্যথা কমানোর
একটি কার্যকরী বিকল্প হতে পারে ।
ব্যবহারের পদ্ধতি এবং উপায় – আদার
গুঁড়ো (১০০০ মিলিগ্রাম) ঈষদুষ্ণ জলে মিশিয়ে অথবা চায়ে মিশিয়ে পান করতে পারেন অথবা
পরিপূরক গ্রহণ করতে পারেন ।
৭) হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি
ঘটায় – আদা কার্যকরীভাবে এল.ডি.এল কোলেস্টেরল এবং রক্তচাপ কমিয়ে হৃদরোগের ঝুকি
কমাতে পারে । এর প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য রক্তনালীগুলিকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের থেকে
রক্ষা করতে পারে । আদার ব্যবহার রক্ত সঞ্চালনকে উন্নত করে তুলতে পারে এবং রক্ত তরল
রাখতে সাহায্য করে, যার ফলস্বরূপ হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায় ।
সুতরাং এর ব্যবহার সামগ্রিকভাবে হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানো এবং হৃদরোগের
ঝুঁকি এড়াতে সাহায্য করতে পারে ।
ব্যবহারের পদ্ধতি এবং উপায় – হার্টের
স্বাস্থ্য এবং সামগ্রিকভাবে হার্টের উন্নতির জন্য নিয়মিত আদা মিশ্রিত জল পান করতে
পারেন অথবা আপনার খাবারে আদার গুঁড়ো যোগ করতে পারেন বা আদার পরিপূরক গ্রহণ করতে
পারেন ।
৮) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় –
অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টে ভরপুর হওয়ার জন্য আদা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে
তোলার ক্ষমতা রাখে । আদার সক্রিয় জৈব যৌগ জিঞ্জেরল রোগজীবাণূর বিরুদ্ধে লড়াই করতে
পারে এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমায় । আদার নিয়মিত
ব্যবহার বিভিন্ন মরশুমি অসুস্থতা সহ সর্দি, বিভিন্ন ফ্লু এবং অন্যান্য সংক্রমণের
প্রতিরোধে সহায়তা করে । তাছাড়া এটি প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, যা রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতার কার্যকারিতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে ।
ব্যবহারের পদ্ধতি এবং উপায় – আদার
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সুবিধা নেওয়ার জন্য দৈনিক খাদ্যতালিকায় আদাযুক্ত চা,
স্যুপ বা অন্যান্য রান্নায় আদার ব্যবহার এবং পরিপূরক গ্রহণ করতে পারেন ।
৯) মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত
করে – মস্তিষ্কের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের একটি মূল কারণ ।
কিন্তু আদার মধ্যে থাকা সক্রিয় জৈব যৌগ জিঞ্জেরল মস্তিষ্কের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস
মোকাবিলায় সাহায্য করতে পারে । এছাড়া বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, আদা
স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে, মস্তিষ্কের প্রতিক্রিয়াকে উন্নত করতে এবং অ্যালঝাইমার
থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে । আদায় উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টগুলি মস্তিষ্কের
প্রদাহকে বাধা দেওয়া থেকে শুরু করে মস্তিষ্কের সামগ্রিক উন্নতিতে সাহায্য করে ।
ব্যবহারের পদ্ধতি এবং উপায় – দৈনিক
খাদ্য-তালিকায় বিভিন্ন ভাবে যেমন- চায়ের সঙ্গে, স্যুপ বা অন্যান্য রান্নায় আদা যোগ
করার সঙ্গে সঙ্গে আদার পরিপূরক গ্রহণ করতে পারেন ।
১০) ওজন কমাতে সাহায্য করে – আদা
শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে, ক্ষিদে কমাতে এবং হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটাতে
সাহায্য করে, যা সম্মিলিতভাবে ওজন ব্যবস্থাপনায় কার্যকর অবদান রাখতে পারে । ২০১৯
সালের একটি মেটা-বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, আদা শরীরের ওজন এবং কোমর থেকে নিতম্বের
অনুপাত উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে । তাছাড়া আদা শরীরের থার্মোজেনেসিস প্রক্রিয়ার
উন্নতি ঘটাতে পারে, যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শরীর ক্যালোরি পোড়ানোর জন্য তাপ উৎপন্ন
করে, যা দ্রুত্ওজন কমাতে সহায়তা করতে পারে ।
ব্যবহারের পদ্ধতি এবং উপায় – খাবার
খাওয়ার আগে আদাযুক্ত চা পান করুন যাতে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে, ক্ষিদে কমানো যায়
এবং ওজন ব্যবস্থাপনার উন্নতি ঘটানো যায় ।
আদার স্বাস্থ্য উপকারিতা : সারাংশ চার্ট
উপকারিতা |
বৈজ্ঞানিক ফলাফল |
প্রস্তাবিত ব্যবহার |
বমি বমি ভাবের
উপশম |
গর্ভাবস্থা এবং কেমোথেরাপির জন্য বমি বমি ভাবের জন্য কার্যকর (JABFM) |
আদা চা,
পরিপিূরক ক্যাপসুল |
পেশীর ব্যথা উপশম |
এর ব্যবহারের ফলে ব্যায়ামের দরুণ ব্যথা প্রায় ২৫% অবধি
হ্রাস পায় |
তাজা আদা,
পরিপিূরক ক্যাপসুল |
হজমে সাহায্য
করে |
হজমের জন্য
দায়ী এনজাইমগুলিকে উদ্দীপিত করে, IBS উপশম করে |
আদা চা, কাঁচা
আদা, পরিপূরক ক্যাপসুল |
রক্তে শর্করা
কমায় |
HbA1c য়ের মাত্রা এবং রক্তে শর্করার মাত্রা কমায় (ডায়াবেটিস
এন্ড মেটাবলিজম জার্নাল) |
আদা গুঁড়ো,
আদা চা, পরিপূরক ক্যাপসুল |
শ্বাসযন্তের
সংক্রমণ কমায় |
এর উপাদানগুলি
শ্লেষ্মা ভেঙে দেয়, সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে |
আদা চা + মধু
+ লেবুর মিশ্রণ, কাঁচা আদা |
পিরিয়ডসের
ব্যথার উপশম |
পিরিয়য়ডসের
ব্যথা উপশমের জন্য ব্যাথানাশক ওষুধ আইবুপ্রোফেনের সঙ্গে তুলনীয় (Iranian Journal of Nursing) |
আদার গুঁড়ো,
অআদা চা, পরিপূরক ক্যাপসুল |
রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা বাড়ায় |
প্রচুর
অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট এবং অ্যান্টি-মাইক্রোনিয়াল সমৃদ্ধ হওয়ার জন্য রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে |
স্যুপ বা
অন্যান্য রান্নায়, আদা চা, পরিপূরক ক্যাপসুল |
হার্টের
স্বাস্থ্যের উন্নতি |
হার্টের রক্তনালীগলিকে রক্ষা করে এবং LDL কোলেস্টেরল
কমায় |
কাঁচা আদা
মিশ্রিত জল, রান্নায় মিশ্রিত করে, পরিপূরক ক্যাপসুল |
মস্তিষ্কের
কার্যকারিতা বাড়ায় |
মস্তিষ্কের
প্রদাহ কমায়, স্মৃতি রক্ষায় সাহায্য করে, অ্যালহাইমার থেকে রক্ষা করে |
কাঁচা আদা,
পরিপূরক ক্যপসুল |
ওজন
নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে |
বিপাক ক্ষমতা
বৃদ্ধি করে, অতিরিক্ত ক্যালোরি পোড়ায়, চর্বি জমা কমায় (Meta-analysis 2019) |
খাবারের আগে
আদা চা, পরিপূরক ক্যাপসুল |
আদা শুধুমাত্র একটি মশলা নয় বরং
এটি একটি শক্তিশালী প্রাকৃতিক প্রতিকার যার অসংখ্য স্বাস্থ্য-উপকারিতা রয়েছে ।
আপনি এটি আপনার দৈনিক রুটিনে খাবারে যোগ করে, চায়ের সাথে মিশিয়ে বা পরিপূরক হিসাবে
যেভাবেই হোক গ্রহণ করতে পারেন এবং এর দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য-উপকারিতার সুবিধা নিতে
পারেন । সবচেয়ে সুবিধার কথা হলো, এটিকে যোগাড় করা খুবই সুবিধে এবং অতি অল্প ব্যয়ের
বিনিমেয় এটিকে পাওয়া যেতে পারে ।
আদা কাদের এড়িয়ে চলা উচিত?
যদিও আদা সাধারণভাবে নিরাপদ, তা সত্ত্বেও কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে এটির
ব্যবহারের জন্য কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত –
কাদের এড়িয়ে চলা উচিত |
এড়িয়ে চলার কারণ |
যেসব ব্যক্তি রক্ত পাতলাকারী কোন উপাদান গ্রহণ করে |
আদার মধ্যে প্রাকৃতিক রক্ত পাতলাকারী বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান যারা রক্ত
পাতলাকারী ওষুধের প্রভাব বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং অতিরিক্ত রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে
দিতে পারে |
কোন অস্ত্রোপচারের আগে |
প্রাকৃতিক রক্ত পাতলাকারী বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকার কারণে অস্ত্রোপচারের সময়
অতিরিক্ত রক্তপাত এড়াতে অন্তত: ২ সপ্তাহ আগে থেকে আদা খাওয়া বন্ধ করুন |
পিত্তথলির সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিরা |
আদার উপাদানগুলি পিত্ত উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে, যা পিত্তথলির পাথরকে আরো
বাড়িয়ে তুলতে পারে |
নিম্ন রক্তচাপযুক্ত ব্যক্তিরা |
নিম্ন রক্তচাপযুক্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত আদা খাওয়ার ফলে মাথা ঘোরার
মতো মারাত্মক উপসর্গ দেখা দিতে পারে |
গর্ভবতী মহিলারা (বিশেষত: গর্ভাবস্থার শেষের দিকে) |
আদার প্রাকৃতিক উপাদানগুলি উচ্চ মাত্রায় জরায়ু সংকোচনের কারণ ঘটাতে পারে ।
যা গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে মারাত্মক ঝুকির কারণ হতে পারে |
আদার অ্যালার্জিযুক্ত ব্যক্তিরা |
যদিও দুর্লভ, তবে লক্ষণগুলির মাধ্য সাধারণত: ফুসকুড়ি, শরীরে ফোলাভাব বা
শ্বাসকষ্টের লক্ষণ দেখা যায় |
প্রায়শ:ই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)
১) আমি কি রোজ আদা খেতে পারি ?
উত্তর): দৈনিক ৩-৪ গ্রাম (প্রায় ১ টেবিল চামচ) তাজা আদা খাওয়া সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে নিরাপদ । তবে এই পরিমাণের বেশি আদা খেলে অম্বল বা হজমে অস্বস্তির কারণ হতে পারে । পরিমিত পরিমাণে নিয়মিত আদা সেবন হজমের উন্নতি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে এবং সামগ্রিক সুস্থতার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে ।
২) আদা কি কোন ওষুধের সাথে মিথস্ক্রিয়া
করতে পারে ?
উত্তর): আদার মধ্যে রক্ত প্রাকৃতিক
পাতলাকারী উপাদান থাকে, যার জন্যে রক্ত পাতলাকারী, ডায়াবেটিসের ওষুধ এবং রক্তচাপের
ওষুধের সাথে এটি মিথস্ক্রিয়া করতে পারে । যদি আপনি এই ধরনের কোন ওষুধ গ্রহণ করেন,
তাহলে দৈনিকভাবে আপনার রুটিনে আদা যোগ করার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে একবার
পরামর্শ করে নেওয়া উচিত । যাতে তিনি আপনার গ্রহণের পরিমাপ নির্দিষ্ট করে দিতে
পারেন বা বিশেষ কোন পরামর্শ দিতে পারেন ।
৩) মহিলাদের গর্ভাবস্থায় আদা খাওয়া কি
নিরাপদ ?
উত্তর): গর্ভাবস্থায় মর্নিং সিকনেসের
উপশমের জন্য অল্প পরিমাণে (প্রতিদিন ১ গ্রামের বেশি নয়) আদা খাওয়া নিরাপদ হতে পারে
। তবে গর্ভাবস্থার তৃতীয় মাস থেকে এটিকে এড়িয়ে যাওয়াই ভালো, কারণ এটি অকাল প্রসবের
ঝুঁকি বাড়াতে পারে । তবে সর্বদা আদা ব্যবহারের আগে একবার আপনার ডাক্তারের সাথে
পরামর্শ করে নেওয়া উচিত, কারণ যদি গর্ভাবস্থায় আপনার কোন বিশেষ সমস্যা বা জটিলতা
থাকে, তাহলে তিনি আপনাকে সবচেয়ে সেরা পরামর্শ দিতে পারেন ।
৪) আদা কি রক্তচাপ কমাতে পারে ?
উত্তর): আদার উপাদানগুলির মধ্যে রক্তচাপ
কমানোর বৈশিষ্ট্য রয়েছে । এটির নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে গ্রহণের ফলে রক্ত সঞ্চালন
বৃদ্ধি এবং হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতিও ঘটাতে পারে । তবে কেউ যদি
অ্যান্টি-হাইপারটেনসিভ ওষুধ গ্রহণ করেন তাহলে মাথা ঘোরা বা হাইপোটেনশন প্রতিরোধ
করার জন্য আপনার আদা গ্রহণের মাত্রা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন । এর জন্য
আপনি কোন পেশাদার ডায়েটেশিয়ানের সাথে পরামর্শ করে নিতে পারেন ।
৫) আদার অ্যালার্জিগুলির লক্ষণগুলি কি কি
?
উত্তর): আদা গ্রহণের ফলে অ্যালার্জি হওয়া
একটি বিরল ঘটনা । তবুও এটি হলে ত্বকে জ্বালা, চুলকানি, ফুসকুড়ি বেরোনো, ফোলাভাব বা
পেটে ব্যথার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে । যদি কেউ এই লক্ষণগুলি অনুভব করেন তাহলে
আদার ব্যবহার বন্ধ করুন এবং একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন । গুরুতর ক্ষেত্রে,
শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে, তাই আগে থেকে চিকিৎসার প্রয়োজন ।
৬) তাজা না গুঁড়ো, কোন আদাটি ভালো ?
উত্তর): তাজা আদায় এর প্রধান জিঞ্জেরলের
পরিমাণ বেশি থাকে, যা এটিকে বেশি শক্তিশালী হিসাবে গ্রহণ করার সুবিধা দেয় ।
অন্যদিকে গুঁড়ো আদা রান্না করার জন্য সুবিধাজনক । উভয়ই আদার স্বাস্থ্য-উপকারিতা
প্রদান করে, সামান্য কম-বেশি । আপনি আপনার পছন্দ, সুবিধা এবং চাহিদার উপর ভিত্তি
করে বেছে নিতে পারেন ।
আদা বিভিন্ন স্বাস্থ্য-উপকারিতার একটি পাওয়ার-হাউস । বমি বমি ভাবের সমস্যা থেকে হার্ট ভালো রাখা পর্যন্ত এর বিস্তার সুদূর । যদিও বেশিরভাগ মানুষ সাধারণভাবে রান্নায় বা অন্যভাবে নিরাপদে উপভোগ করেন, তবে নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যগত অবস্থার মানুষের ক্ষেত্রে এটিকে খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার আগে পরিমিততা এবং সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । প্রয়োজনে আপনি কোন পেশাদার ডায়েটেশিয়ান বা পেশাদার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে পরামর্শ করে এটিকে দৈনিক খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে এর বিশেষ স্বাস্থ্য-উপকারিতাগুলি লাভ করতে পারেন ।
যদি পোস্টটি পড়ে আপনার ভালো লেগে থাকে বা কার্যকরী মনে হয়, তাহলে সচেতনতা
বৃদ্ধির জন্য অন্যদের শেয়ার করবেন ।
0 মন্তব্যসমূহ