Header Ads Widget

ননী (মরিন্ডা সিট্রিফোলিয়া) – একটি সম্পূর্ণ খাদ্য পরিপূরক

 

মরিন্ডা সিট্রিফোলিয়া যা সাধারণভাবে ননী নামে পরিচিত । সাধারণ প্রাকৃতিক প্রতিকার এবং সামগ্রিক সুস্থতার ক্ষেত্রে প্রায় সারা বিশ্বে এটি সু-পরিচিত । খাদ্য পরিপূরক রূপে এই গাছের ফল নিয়ে সারা বিশ্বে যেমন আলোচনা হয়, তেমনই এই ফল নিয়ে চলে প্রচুর চর্চা এবং গবেষণা । এই ব্লগ পোস্টে মরিন্ডা সিট্রিফোলিয়া কী এবং তা  ইতিহাস সম্পর্কে, এর মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদানগুলি সম্পর্কে এবং ননী জুস পান করার অগণিত উপকারিতা নিয়ে আমরা আলোচনা করবো ।

ননী কি এবং তার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মরিন্ডা সিট্রিফোলিয়া বা ননী একটি ছোট চিরহরিৎ গাছ যা কফি পরিবারের অন্তর্গত । এই গাছকে বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ এবং ক্যারিবিয়ান অংশে জন্মাতে দেখা যায় । এই গাছে কাঁচায় সবুজ, পাকলে অল্প হলুদ রঙের ডিম্বাকৃতি ফল জন্মায় । যা দেখতে একটু অদ্ভূত এবং স্বাদে তিক্ত্এবং তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ যুক্ত হলেও ফলটি প্রচুর জানা-অজানা পুষ্টি-উপাদানে সমৃদ্ধ । এই ফলের জুস একটি হেল্থ-ড্রিঙ্ক বা খাদ্য-পরিপূরক হিসাবে বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছে ।

ননী প্রায় ২০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের সংস্কৃতির সাথে জড়িত বলে শোনা যায় । প্রাচীন পলিনেশিয়ানরা নাকি খাবার থেকে ওষুধ পর্যন্ত এই  ফলের বিভিন্ন ব্যবহার আবিষ্কার করেছিলেন বলে জানতে পারা যায় তারা ননিকে স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা বজায় রাখার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছিল । ননী তাদের কাছে শুধুমাত্র তার নিরাময় বৈশিষ্ট্যর জন্য মূল্যবান ছিল না, তাদের জন্যে এটি সাংস্কৃতিক গুরুত্বও বহন করতো এই ফলটিকে তারা কখনো কখনো তাদের আচার এবং অনুষ্ঠানগুলিতেও ব্যবহার করতো । সময়ের সাথে সাথে বাণিজ্য পথ প্রসারিত হওয়ার ফলে ননী সম্পর্কে ধ্যান-ধারণা এশিয়া এবং আমেরিকা সহ অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে এবং ধীরে ধীরে এটি একটি ভেষজ সুস্থতার প্রতীক হিসাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করে । কুড়ি শতকের শেষের দিক থেকে বিভিন্ন দেশে এর জনপ্রিয়তা প্রবল হতে থাকে, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, যেখানে এটি একটি স্বাস্থ্য সম্পূরক হিসাবে বাজার-জাত পণ্য হিসাবে পাওয়া যেতে শুরু করে ।

মরিন্ডা সিট্রিফোলিয়ার পুষ্টি উপাদান

ননী যে সুপারফুড হিসাবে খ্যাতি পাওয়ার একটি প্রবল দাবিদার তার অন্যতম কারণ হল এর অসাধারণ পুষ্টির প্রোফাইল । ননী ফলটি যে শুধু মাত্র প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ তাই নয়, এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, বিভিন্ন ফাইটোকেমিক্যালস, অ্যামাইনো অ্যাসিড ইত্যাদি । নীচে ননীতে প্রাপ্ত কিছু উপাদান সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো - 

১) ভিটামিন : ননী ভিটামিন-, সি, ই এবং আরো অন্যান্য ভিটামিনে সমৃদ্ধ, যারা ইমিউন ফাংশন, ত্বকের স্বাস্থ্য এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট গুলিকে সুরক্ষা দেওয়ার মতো কাজে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় । এতে নিয়াসিন এবং ফোলেট সহ বেশ কয়েকটি বি ভিটামিনও প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়, যারা শক্তি এবং বিপাকক্ষমতার বৃদ্ধিতে সাহায্য করে

২) খনিজ : ননীতে পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং আয়রনের মতো প্রয়োজনীয় খনিজগুলি  প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় ।এই খনিজ পদার্থগুলি হাড়ের স্বাস্থ্য থেকে পেশী সংকোচন পর্যন্ত বিভিন্ন শারীরিক ক্রিয়াকলাপ বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে

) অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট : ননীতে বিভিন্ন ধরনের বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ পাওয়া যায়, বিশেষ করে ইরিডয়েড, যা তাদের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টগুলি অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে, ফলে দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমে যায় ।

৪) ফাইবার : যদিও ননী জুসে অন্যান্য ফলের মতো প্রচুর ফাইবার নাও থাকতে পারে, কিন্তু তা সত্ত্বেও এটি অন্যান্য উপাদানের সাহায্যে ইনটেস্টাইনের কাজকে বাড়াতে এবং তাকে সুস্থ রাখতে দারুণভাবে সাহায্য করে এবং সামগ্রিকভাবে হজমের উন্নতি ঘটায় ।

) জেরোনাইন : ননীর মধ্যে পাওয়া যায় এরকম একটি বিশেষ উপাদান হলো জেরোনাইন । জেরোনাইন হল একটি ক্ষারীয় উপাদান, যা সেলুলার ফাংশন নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলে মনে করা হয় এটি শরীরের প্রোটিনকে সক্রিয় করতে সাহায্য করে, কোষ মেরামত এবং কোষের পুনর্জন্ম সহ বিভিন্ন ধরনের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে । জেরোনাইন সেলুলার ফাংশনের উন্নতি ঘটিয়ে এবং কোষীয় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করে সামগ্রিক সুস্থতায় এক ব্যাপক পরিবর্তন এনে দিতে সক্ষম ।

) ইরিডয়েডস (Iridoids: ননীর মধ্যে পাওয়া বিশেষ উপাদানগুলির মধ্যে একটি হলো ইরিডয়েডস । এটি হলো এক ধরনের উদ্ভিজ্জ যৌগ, যা তাদের প্রদাহবিরোধী এবং অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট বৈশিষ্ট্যের জন্যে পরিচিত । এই যৌগগুলি অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে, প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভূমিকা নেয় । কিন্তু উল্লেখযোগ্য হলো ইরিডয়েড রক্ত সঞ্চালনের উন্নতি ঘটাতে এবং ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করতে পারে ।

) বিটা-সিটোস্টেরল : এটি একটি উদ্ভিজ্জ স্টেরল, যা ননীতে পাওয়া যায় । এই ধরনের স্টেরল শরীরের LDL (খারাপ কোলেস্টেরল)য়ের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, যার ফলে হার্ট ভালো থাকে এবং হার্টের কার্যক্ষমতার উন্নতি ঘটে ।

) প্রোজেরোনাইন : প্রোজেরোনাইন হল জেরোনিনের একটি অগ্র রূপ, যা ননী ফলের মধ্যে পাওয়া যায় । এটি শরীরের প্রয়োজন অনুসারে জেরোনাইন উৎপাদন করার ক্ষমতাকে সাহায্য করে বলে মনে করা হয়, যার ফল হিসাবে কোষের স্বাস্থ্য এবং তাদের ফাংশনে ভূমিকা নেয় ।

) অ্যামাইনো অ্যাসিড : ননীতে আমাদের শরীরের জন্যে বেশ কয়েকটি প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড পাওয়া যায়, যা আসলে প্রোটিনের বিল্ডিং ব্লক । পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যামাইনো অ্যাসিডের সরবরাহ পেশী মেরামত, হরমোন উৎপাদন এবং বিভিন্ন বিপাকীয় প্রক্রিয়াগুলির সঠিকভাবে সম্পাদন হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে

১০) ফ্ল্যাভনয়েড : ফ্ল্যাভনয়েডগুলি তাদের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্যের জন্যে সু-পরিচিত । ননীতে এই যৌগের উপস্থিতির জন্যে এই ফলের জুস করার জন্যে এটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ থেকে শরীরকে রক্ষা করতে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে উন্নীত করতে সাহায্য করতে সক্ষম হয় ।

১১) স্যাপোনিনস : ননীতে পাওয়া যায় স্যাপোনিন নামের এক ধরনের উদ্ভিজ্জ যৌগ । স্যাপোনিনের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী বৈশিষ্ট্য দেখা যায়, এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে । তাছাড়াও তাদের মধ্যে দেখা যায়  অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রভাব, যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীরকে রক্ষা করতে সহায়তা করতে পারে

১২) অ্যানথ্রাকুইনোনস : ননীর মধ্যে পাওয়া এই যৌগগুলি প্রদাহবিরোধী, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের জন্যে সুপরিচিত । ননীতে অ্যানথ্রাকুইনোনস যৌগগুলি ব্যথা কমাতে, সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে, প্রদাহ কমাতে এবং সামগ্রিক সুস্থতায় সাহায্য করে ।

১৩) লেসিথিন : ননীর মধ্যে লেসিথিন নামক একটি বিশেষ যৌগ পাওয়া যায় । লেসিথিন কোষের ঝিল্লির অখন্ডতা বজায় রাখতে, কোষের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে, মস্তিষ্কের ফাংশন বাড়াতে সাহায্য করে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা বজায় রেখে কার্ডিওভাস্কুলার কার্যকলাপে এবং হার্টকে ভালো রাখতে সাহায্য করে ।

১৪) সাইটোকাইনস : ননীকে নির্দিষ্ট সাইটোকাইনের উৎপাদনকে প্রভাবিত করতে এবং অণুগুলিকে সংকেত পাঠাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে দেখা যায় । এছাড়া সাইটোকাইনের মাত্রা সংশোধন করতে এবং প্রদাহ কমাতেও সাহায্য করে । ফলে সামগ্রিকভাবে ইমিউন সিস্টেমের উপরে ননী ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম ।

১৫) ফ্যাটি অ্যাসিড : ননীতে প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড বিদ্যমান । যারা কোষের ঝিল্লি বজায় রাখতে, কোষকে সুস্থ রাখতে, প্রদাহ কমাতে, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে এবং হার্টকে ভালো রাখতে সাহায্য করে ।

১৬) কোলিন : কোলিন নামক যৌগটি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য এবং কার্যকারিতার জন্য অপরিহার্য নিউরোট্রান্সমিটার সংশ্লেষণ, মেমোরী বাড়াতে এবং কোষের ঝিল্লি গঠনে এই যৌগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ননীর মধ্যে এই যৌগের উপস্থিতি ননীকে একটি বিশেষ গুরুত্ব দান করে ।

১৭) কো-এনজাইম Q10 (CoQ10) : এটি ননীর মধ্যে উপলব্ধ এক বিশেষ ধরনের অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট । যারা কোষে শক্তি উৎপাদনের জন্য অত্যাবশ্যক এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে । এই CoQ10 অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টটি হার্ট ভালো রাখতে এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করতে পারে

১৮) ট্যানিন : ননীর মধ্যে পাওয়া ট্যানিন নামক যৌগটিতে অ্যাস্ট্রিঞ্জেন্ট বৈশিষ্ট্য এবং  অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্যের জন্যে ননী কোন প্যাথোজেনের বৃদ্ধি রোধ করতে শরীরকে সাহায্য করে ।

১৯) সেলেনো-অ্যামিনো অ্যাসিড : ননীর মধ্যে পাওয়া যায়, সেলেনো-অ্যামিনো অ্যাসিড । যে যৌগগুলি কোষকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের হাত থেকে রক্ষা করতে, সঠিকভাবে থাইরয়েড ফাংশন করতে এবং বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে ।

২০) ফেনোলিক যৌগ : ননীর মধ্যে থাকা ফেনোলিক যৌগগুলি ফ্রি-র‌্যাডিক্যালসগুলিকে নিরপেক্ষ করতে, হার্টকে ভালো রাখতে এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করে দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে ।

পুষ্টি-উপাদানগুলির এই সমৃদ্ধ এবং একত্রিত ভান্ডারের জন্যে ননী জুস সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং প্রাকৃতিক উপায়ে স্বাস্থ্যরক্ষার অনুসন্ধানকারীদের কাছে আগ্রহ এবং ঔৎসুক্যের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ।

ননী জুস পানের উপকারিতা

ননী জুসের মধ্যে বিভিন্ন পুষ্টি-উপাদানের উপস্থিতির পরেই স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জন্মায় ননী জুস পানের উপকারিতা কি জানবার জন্যে । যদিও ননী জুস পানের উপকারিতা বহূ ব্যাখ্যামূলক এবং বিস্তৃত, কিন্তু তবুও আমরা যথাসম্ভব সংক্ষেপে আলোচনা করার প্রয়াস করছি ।

) ইমিউন সিস্টেম সাপোর্ট : ননী জুস তার ইমিউন-বুস্টিং এবং ইমিউন-সাপোর্ট  বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিতননীতে উচ্চ মাত্রার ভিটামিন সি সহ অন্যান্য ভিটামিনের উপস্থিতি এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের প্রাচুর্যতার জন্যে এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, শরীরকে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে ।

) প্রদাহ-বিরোধী প্রভাব : শরীরের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ  আর্থ্রাইটিস, হৃদরোগের সমস্যা, অ্যাসিডিটির সমস্যা সহ অসংখ্য স্বাস্থ্য সমস্যার সাথে যুক্ত ননীর মধ্যে স্কোপোলেটিন, ইরিডয়েড এবং জেরোনাইনের মতো যৌগগুলি শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং শরীরের জয়েন্টগুলির্ এবং টিস্যুগুলির উন্নতি ঘটায় ।

) পরিপাক ব্যবস্থার উন্নতি : ননীর ফাইবার, অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টসমূহ এবং অন্যান্য যৌগগুলি লিভারের কার্যকারিতা বাড়ায়, অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়, নিয়মিত মলত্যাগে সাহায্য করে । যার ফলস্বরূপ, ননী জুস পান করার ফল হিসাবে সামগ্রিকভাবে পরিপাক ব্যবস্থার উন্নতি ঘটে ।

) এনার্জি এবং স্ট্যামিনা বৃদ্ধি : ননীর মধ্যে ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট এবং অ্যামাইনো অ্যাসিডের সংমিশ্রণের ফলে শরীরে শক্তির মাত্রা বাড়াতে এবং সহনশীলতা বাড়ানোর জন্যে ননীকে সাহায্য করে ।

) ত্বকের স্বাস্থ্য : ননীর মধ্যে ভিটামিন-ই এবং বিভিন্ন অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টের উপস্থিতি ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা, যেমন – ত্বকের বর্ণ পরিষ্কার করা, ক্ষতের নিরাময় করা, UV রশ্মির হাত থেকে ত্বককে রক্ষা করা, ব্রণ-ফুসকুড়ি কমানো ইত্যাদি সমস্যার সমাধানে সাহায্য করে ।

) মেজাজ নিয়ন্ত্রণে : ননীর মধ্যে অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্ট গুণ, নিউরো-ট্রান্সমিটারের ফাংশনকে সাপোর্ট করার গুণ, কোলিনের মতো যৌগের উপস্থিতির জন্যে, মস্তিষ্কের ফাংশন বাড়ানোর গুণ ইত্যাদির কারণে এবং বিভিন্ন হরমোনকে নিয়ন্ত্রণ করার গুণের জন্যে ননী জুসের পান করার ফলে মেজাজ নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে ।

৭) হার্টের স্বাস্থ্য : ননী জুস পানের ফলে শরীরে রক্ত সঞ্চালনের উন্নতি ঘটে । এর মধ্যে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টের উপস্থিতি বিটা-সিটোস্টেরলের উসি্থিতির জন্যে এটি  কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে ।ফলস্বরূপ, সমগ্র কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেমের উন্নতি ঘটে ।

) ওজন ব্যবস্থাপনা : ননী বিপাকীয় ব্যবস্থার উন্নতি ঘটায় এবং শরীরে খারাপ চর্বি জমতে বাধা দেয় । এর মধ্যে থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিডের জন্যে উদরপূরণের অনুভূতি রাখে এবং সঙ্গে কোষীয় ফাংশনের উন্নতি ঘটানোর ক্ষমতা রাখে । এই সবকিছুর ফলস্বরূপ, ননী শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে ।

) ডিটক্সিফিকেশন : ননী জুস শরীরের ডিটক্সিফিকেশনে সাহায্য করে । এটি লিভারের কার্যকারিতাকে বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে এবং ডিটক্সিফিকেশনে সাহায্য করে সামগ্রিক সুস্থতায় সাহায্য করে ।

১০) সংক্রমণ রোধে সাহায্য করে : ননী জুসের মধ্যে থাকা প্রচুর ভিটামিন, অ্যামাইনো অ্যাসিড এবং সর্বোপরি তার অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্যের জন্যে ননী ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক সহ বহু প্যাথোজেনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে ।

ননী তার সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং তার বিভিন্ন পুষ্টি-উপাদানের সম্ভার নিয়ে আজ মানুষের কাছে একটি চিত্তাকর্ষক ফল হয়ে দাঁড়িয়েছে । আর তাই আজ বাজারে ননীর জুস থেকে শুরু করে ননীজাত বিভিন্ন পণ্য এসে উপস্থিত হয়েছে তাদের বিভিন্ন উপকারিতা বা কার্যকারিতার সম্ভাবনা নিয়ে । প্রাকৃতিক উপায়ে স্বাস্থ্যের খেয়াল যারা রাখতে চান, ননী আজ হয়ে উঠেছে তাদের কাছে একটি অত্যন্ত সুপরিচিত এবং গ্রহণযোগ্য উপায় । কিন্তু আমাদের পরামর্শ হবে ইন্টারনেটের তথ্যের ভিত্তিতে বা শধুমাত্র লোকমুখে শুনে নয়, ভালো ফল পাওয়ার জন্যে ননী ব্যবহারের আগে একবার কোন ডায়েটেশিয়ান বা নিউট্রিশনিস্ট বা পেশাদার কোন স্বাস্থ্য-পরামর্শদাতার পরামর্শ নিয়ে এবং তার তত্ত্বাবধানে এটির ব্যবহার শুরু করা উচিত ।

আশা করি এই ব্লগ পোস্টটি পড়ে ননী বা মরিন্ডা সিট্রিফোলিয়া সম্পর্কে কিছুটা সচেতনতা আনতে সক্ষম হবে এবং আপনাকে সুস্থ থাকতে সুস্থভাবে বাঁচতে সহায়ক হবে পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ এবং যদি আপনি বিষয়টিকে পছন্দ করেন, অনুগ্রহ করে অন্যদের সচেতন করে তোলার জন্যে তাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করার জন্য শেয়ার করার অনুরোধ জানাই ।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ