Header Ads Widget

করলা ও জামুন (জাম) জুস : একটি শক্তিশালী পানীয়

 

করলা এবং জামুনের (জাম) জুস সুদীর্ঘকাল ধরে আয়ুর্বেদিক জগতে এবং প্রাকৃতিক প্রতিকারের জগতে অত্যন্ত সুপরিচিত । বিভিন্ন সমস্যায়, যেমন- রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্যে আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসাবে এদের ব্যবহার করা হয়ে থাকে । করলা আর জাম (Indian Blackberry) পৃথকভাবে তাদের পুষ্টি-বৈশিষ্ট্যের জন্যে এমনিই পরিচিত, আর যখন এদের দু’জনকে একত্র করে একটি পানীয় তৈরী করা হয়, তখন একটি শক্তিশালী হেলথ টনিক হিসাবে এটি কাজ করে । এই ব্লগ পোস্টে আমরা করলা ও জাম জুসের ব্যাপারে জানার চেষ্টা করবো – করলা আর জমের জুস কি, এর পুষ্টিগুণ, করলা ও জামের জুস পান করার উপকারিতা এবং এটি পান করার সময় কি কি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত ।

করলা আর জামের জুস কি

করলা-জামের জুস হলো একটি ঐতিহ্যবাহী আয়ুর্বেদিক টনিক, যা করলা আর জামের নির্যাস বা রস থেকে তৈরী হয় । এই টনিক তার ওষধিয় গুণাবলীর জন্যে খুবই বিখ্যাত এবং বিভিন্ন কোম্পানী এই টনিককে বোতলজাত করে বিক্রি করে । বিভিন্ন ওষুধের দোকানেও এটিকে দেখতে পাওয়া যায় । বড় বড় শপিং মলে, যারা হেলথ টনিক রাখে, সেখানে বা অনলাইন স্টোরগুলিতে বা অনলাইন ওষুধের অ্যাপগুলিতেও এখন এটিকে দেখা যাচ্ছে । করলার তিক্ত আর জামের কষা ও মিষ্টি স্বাদের মিশ্রণে এটি একটি অদ্ভুত স্বাদযুক্ত করে তোলে । এই প্রাকৃতিক টনিকটি রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ, হজম ক্ষমতার উন্নতি, লিভারকে ডি-টক্সিফাই করা এবং সামগ্রিক সুস্থতার জন্যে বিখ্যাত ।

করলা-জাম জুসের পুষ্টিগুণ

করলা আর জাম পৃথকভাবে উভয়েই প্রচুর পুষ্টি-উপাদানে ভরপুর এবং এবং একত্রিতভাবে তারা তাদের ঔষধিয় বেশিষ্ট্য গুণাবলীগুলি তাদের মিশ্রিত টনিকে বজায় রাখে । এই শক্তিশালী টনিকটির পুষ্টি-উপাদানগুলিকে পৃথকভাবে আলোচনা করা হলো –

করলার পুষ্টিগুণ 

করলাতে পাওয়া যায় এরকম কিছু পুষ্টি-উপাদানের (অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং ফাইটোকেমিক্যালস সহ)বিস্তারিত বিবরণ সহ একটি চার্ট দেওয়া হলো -

নিউট্রিয়েন্টস

পরিমাণ (প্রতি ১০০ গ্রামে)

উপকারিতা

ক্যালোরি

১৭ কিলো.ক্যালোরি

কম ক্যালোরিযুক্ত, ওজন ব্যবস্থাপনা সমর্থন করে

প্রোটিন

. গ্রাম

টিস্যু মেরামত এবং বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য

কার্বোহাইড্রেট

. গ্রাম

শক্তি প্রদান করে; কম গ্লাইসেমিক সূচক রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে

 ডায়েটারী ফাইবার

. গ্রাম

হজমে সাহায্য করে এবং স্বাস্থ্যকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে

ভিটামিন সি

৮৪ মিলি.গ্রাম

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে

ভিটামিন

৪৭১ আই.ই.উ

দৃষ্টি এবং ত্বকের স্বাস্থ্য সমর্থন করে

ভিটামিন বি

৭২ মিউগ্রাম

কোষ বিভাজন এবং ভ্রূণের বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

পটাসিয়াম

৩১৯ মিলি.গ্রাম

রক্তচাপ এবং তরল ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে

ম্যাগনেসিয়াম

১৮ মিলি.গ্রাম

পেশী ফাংশন এবং শক্তি ৎপানে সাহায্য করে

আয়রন

0.৪ মিলি.গ্রাম

লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদন এবং অক্সিজেন পরিবহনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

ক্যালসিয়াম

১৮ মিলি.গ্রাম

হাড়ের স্বাস্থ্য এবং পেশী ফাংশনের জন্য অপরিহার্য

ফসফরাস

২৪ মিলি.গ্রাম

হাড়ের স্বাস্থ্য এবং শক্তি সঞ্চয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

বিটা-ক্যারোটিন

পরিবর্তিত হয

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা চোখের স্বাস্থ্য এবং ইমিউন ফাংশনকে সমর্থন করে

লাইকোপেন

পরিবর্তিত হয

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য; দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে

ক্লোরোফিল

পরিবর্তিত হয

ডিটক্সিফিকেশন সমর্থন করতে পারে এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রভাব রয়েছে

পলিপেপটাইড

পরিবর্তিত হয

রক্তে শর্করার মাত্রা এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে

ফ্ল্যাভনয়েড

পরিবর্তিত হয

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করে

স্যাপোনিন

পরিবর্তিত হয

কোলেস্টেরল কমাতে পারে এবং ক্যান্সার বিরোধী বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে

ট্রাইটারপেনয়েড

পরিবর্তিত হয

অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টি-ডায়াবেটিক প্রভাবের সাথে যুক্ত


ভিটামিন : করলা ভিটামিন এ, সি, এবং বেশ কয়েকটি বি ভিটামিন, বিশেষ করে বি১, বি২ এবং বি৩ সমৃদ্ধ । উল্লিখিত এই ভিটামিনগুলি ইমিউন ফাংশন, ত্বকের স্বাস্থ্য এবং দৃষ্টিশক্তিকে সমর্থন করে ।

খনিজ : করলা আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাসের মতো প্রচুর প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থে ভরপুর, যা হাড়ের স্বাস্থ্য, পেশীর কার্যকারিতা এবং শরীরে লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় ।

অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস : করলায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে যেমন – ফ্ল্যাভনয়েড, স্যাপোনিনস এবং লাইকোপেন ইত্যাদি, যারা শরীরকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং ফ্রি র‌্যাডিক্যালগুলিকে নিরপেক্ষ করে শরীরকে ক্ষতির থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে ।

ফাইবার : করলায় ভালো পরিমাণে ফাইবার পাওয়া যায়, যা হজমে সাহায্য করে, অন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে ।

ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস : করলায় বেশ কয়েকটি সক্রিয় জৈব যৌগ রয়েছে যেমন – ক্লোরোফিল, ট্রাইটারপেনয়েড এবং পলিপেপটাইড-পি, যাদের মধ্যে অ্যান্টি-ডায়াবেটিক, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য দেখতে পাওয়া যায় ।

জামুন বা জামের (Indian Blackberry) পুষ্টিগুণ

এখানে জামুন বা জামে (Indian Blackberry) পাওয়া যায় এরকম কিছু পুষ্টি-উপাদানের (অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং ফাইটোকেমিক্যালস সহ)বিস্তারিত বিবরণ সহ একটি চার্ট দেওয়া হলো -

নিউট্রিয়েন্টস

পরিমাণ (প্রতি ১০০ গ্রামে)

উপকারিতা

ক্যালোরি

৬০ কিলোক্যালোরি

কম ক্যালোরি ফল, ওজন নিয়ন্ত্রণ সমর্থন করে

প্রোটিন

. গ্রাম

টিস্যু মেরামত এবং বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য

কার্বোহাইড্রেট

১৪. গ্রাম

শক্তি প্রদান করে; কম গ্লাইসেমিক সূচক রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে

ডায়েটারী ফাইবার

০৩ গ্রাম

হজমে সাহায্য করে এবং স্বাস্থ্যকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে

ভিটামিন সি

১৮ মিলি.গ্রাম

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট হিসেবে কাজ করে

ভিটামিন

৫৪ আই..ইউ

দৃষ্টি এবং ত্বকের স্বাস্থ্য সমর্থন করে

ভিটামিন বি / ফোলেট

১৮ মিউ.গ্রাম

কোষ বিভাজন এবং ভ্রূণের বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

পটাসিয়াম

১১৯ মিলি.গ্রাম

রক্তচাপ এবং তরল ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে

ক্যালসিয়াম

১৮ মিলি.গ্রাম

হাড়ের স্বাস্থ্য এবং পেশী ফাংশনের জন্য অপরিহার্য

আয়রন

. মিলি.গ্রাম

লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদন এবং অক্সিজেন পরিবহনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

ফসফরাস

১১ মিলি.গ্রাম

হাড়ের স্বাস্থ্য এবং শক্তি সঞ্চয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

অ্যান্টোসায়ানিন

পরিবর্তিত হয়

অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, যা প্রদাহ এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে

ট্যানিন

পরিবর্তিত হয়

অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট প্রভাব থাকতে পারে

ফ্ল্যাভনয়েড

পরিবর্তিত হয়

অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করে

গ্যালিক অ্যাসিড

পরিবর্তিত হয়

অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে


ভিটামিন : জামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, এ এবং বেশ কয়েকটি বি-ভিটামিন থাকে । ভিটামিন সি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, অন্যদিকে ভিটামিন-এ চোখের জন্যে বা দৃষ্টিশক্তির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।

খনিজ পদার্থ : জাম আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাস ইত্যাদি খনিজ পদার্থের একটি ভাল উৎস । যারা সুস্থ হাড়, দাঁত, লোহিত রক্তকণিকা উপাদনের মতো কাজ এবং পেশী বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ।

অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টস : জামের মধ্যে অ্যান্টোসায়ানিন, ফ্ল্যাভনয়েড, গ্যালিক অ্যাসিড এবং ট্যানিনের মতো অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকে, যারা অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করার পাশাপশি, প্রদাহ কমাতে এবং কোষের ক্ষতির প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে ।

ফাইবার : করলার মতো, জামেও প্রচুর ডায়েটারী ফাইবার থাকে, যা হজমের উন্নতি, অন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়ানো এবং রক্তে শর্করাকে নিয়ন্ত্রণ করার কাজে সহায়তা করে ।

করলা-জামের জুসের উপকারিতা

করলা এবং জামের সংমিশ্রণ একটি শক্তিশালী টনিক বা হেলথ-ড্রিঙ্কস তৈরি করে, যা  স্বাস্থ্যক্ষেত্রে প্রচুর সুবিধা প্রদান করে । এখানে করলা-জামের জুসের পানীয় পান করার কিছু উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো –

১) ডায়াবেটিসের সমস্যায় সাহায্য করে করলা-জামের জুসের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে প্রাথমিক সুবিধা হল ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করার ক্ষমতা । এদের মধ্যে জাম শর্করার বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং রক্তপ্রবাহে চিনির শোষণকে ধীর করে দেয় । জামের মধ্যে্এমন কিছু জৈব যৌগ থাকে, যারা স্টার্চকে শক্তিতে রুপান্তরিত করতে সাহায্য করে এবং শরীরের অতিরিক্ত শর্করার জমা হওয়াকে প্রতিরোধ করে । অন্যদিকে করলায় থাকে পলিপেপটাইড-পির মতো বায়ো-অ্যাকটিভ যৌগ, যা ইনসুলিনের অনুকরণ করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে । এই যৌগগুলি শরীরে গ্লুকোজের ব্যবহার বাড়ায় এবং ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা কমায় এবং এটিকে টাইপ 2 ডায়াবেটিস পরিচালনার জন্য একটি কার্যকর প্রাকৃতিক প্রতিকার করে তোলে ।

২) হজমের উন্নতি ঘটায় করলা এবং জাম উভয়েই ডায়েটারী ফাইবার দ্বারা সমৃদ্ধ । যা হজমের উন্নতিতে সাহায্য করে এবং অন্ত্রের কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে । কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায়, বদহজমের সমস্যা এবং গ্যাস্ট্রো-ইনটেস্টিনালের সমস্যায় করলা ঐতিহ্যগতভাবে সাহায্য করে, কারণ এটি পিত্ত উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে এবং লিভারের কার্যকারিতা বাড়িয়ে তোলে ।

৩) লিভার ডি-টক্সিফিকেশনে সাহায্য করে করলা-জামের জুস একটি প্রাকৃতিক ডি-টক্সিফায়ার এবং প্রাকৃতিক লিভার ক্লিনজার হিসাবে কাজ করে এবং উভয়ের মধ্যেই  অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্যগুলি লিভার থেকে টক্সিন বার করে দিতে এবং লিভারের কার্যকারিতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে । তাছাড়া, করলা শরীরের পিত্ত নি:সরণকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে, যা ফ্যাটকে ভাঙতে এবং শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বার করে দিতে সাহায্য করে ।

৪) ইমিউনিটি বাড়ায় করলা-জামের জুসের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকে, বিশেষত: ভিটামিন-সি এবং ভিটামিন-এ, যারা ইমিউনিটি সিস্টেমকে বাড়াতে সাহায্য করে । ভিটামিন-সি একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট হিসাবে কাজ করে, যা ফ্রি-র‌্যাডিক্যালসগুলিকে নিরপেক্ষ করতে সাহায্য করে, শরীরের কোষগুলির মধ্যে অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের পরিমাণ কমায় । এছাড়া তাদের মধ্যে উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল উপাদানগুলি সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে ।

৫) ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে করলা-জামের জুস খুবই কম ক্যালোরিযুক্ত, কিন্তু পুষ্টি-উপাদানে ভরপুর, তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে । এর মধ্যে থাকা ফাইবার এবং অন্যান্য উপাদানগুলি লিভার ও অন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে, ফ্যাটকে ভাঙতে সাহায্য করে এবং পেট ভর্তির অনুভব প্রদান করে, ফলে সামগ্রিকভাবে ওজন নিয়ন্ত্রণে যা সহায়ক হয় ।

৬) ত্বকের উন্নতি ঘটায় করলা-জামের জুসের ডি-টক্সিফাইং বৈশিষ্ট্য ত্বকের উন্নতির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয় । এর মধ্যে থাকা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট এবং ভিটামিনগুলি ত্বকের কোষের মধ্যে অক্সিডেটিভ স্ট্রেসজনিত ক্ষতির হার কমায়, পরিবেশগত কারণ এবং দূষণ থেকে ত্বককে রক্ষা করতে সাহায্য করে । এর অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদানগুলি ব্রণ, ফুসকুড়ি, একজিমা ইত্যাদির উৎপাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে । তাছাড়া এর রক্তকে বিশুদ্ধ করা এবং ডি-টক্সিফাইং গুণের জন্যে ত্বকের টেক্সচার ঠিক রাখা, টোনিংয়ের ক্ষেত্রে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয় ।

করলা-জামের জুস পান করার সতর্কতা

যদিও করলা-জামের জুস পান করার ফলে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে প্রচুর লাভ পাওয়া যায় । তবুও কিছু ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করে এটি শুরু করা উচিত । বিশেষত: যদি কারোর কোন বিশেষ স্বাস্থ্যগত সমস্যা (ডায়াবেটিস, রক্তচাপ, কিডনী, অন্ত্র সম্পর্কিত) থাকে বা তার জন্যে নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ করেন ।

১) অত্যধিক সেবন করলা-জামের শক্তিশালী টনিকটি অতিরিক্ত পান করলে কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে পেটের সমস্যা, যেমন – ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটে ব্যথা বা জ্বালা অনুভূতি হতে পারে । সুতরাং পরিমিত পরিমাণে এটিকে গ্রহণ শুরু করা উচিত এবং ধীরে ধীরে পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী পরিমাণ বাড়ানো উচিত ।

২) অ্যালার্জির সমস্যা অতি অল্প সংখ্যক মানুষ করলা-জাম জুস পান করার পরে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে । যদি আগে থেকেই কারো তেতো খাবারের উপরে অ্যালার্জির সমস্যা থাকে, তাহলে তার ক্ষেত্রে এই জুস পান করার চেয়ে এড়িয়ে যাওয়াই ভালো হবে ।

৩) গর্ভবতী এবং শিশুকে স্তন্যদানকারী মহিলা কোন গর্ভবতী মহিলা বা শিশুকে স্তন্যদানকারী মহিলার ক্ষেত্রে এই জুসটিকে এড়িয়ে যাওয়াই ভালো । কারণ, করলার মধ্যে জরায়ুর সংকোচনকে উদ্দীপিত করার প্রবণতা দেখা যায় এবং গর্ভাবস্থায় এটি আরো বিভিন্ন জতিলতার কারণ হয়ে উঠতে পারে । আর স্তন্যপানরত শিশুদের ক্ষেত্রে এই পানীয়ের প্রভাব সম্পর্কে এখনো পর্যন্ত কোন পরীক্ষালব্ধ নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি । তাই এইসব ক্ষেত্রে পানীয়টিকে এড়িয়ে যাওয়াই ভালো ।

৪) ডায়াবেটিস থাকলে – যদি আগে থেকেই কোন ব্যক্তি ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভোগেন, তাহলে অবশ্যই কোন পেশাদার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী বা কোন পেশাদার ডায়েটেশিয়ানের পরামর্শ অনুযায়ী বা তার তত্ত্বাবধানে এই পানীয়র পান শুরু করা উচিত । কারণ, এই পানীয়ের মধ্যে হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তে শর্করার মাত্রা কম) পরিস্থিতির তৈরী করার প্রবণতা থাকার জন্যে, যিনি ডায়াবেটিসের ওষুধের পাশাপাশি এটা পান শুরু করছেন, তার ক্ষেত্রে নিরাপদ না-ও হতে পারে ।

করলা-জামের জুস রক্তে শর্করার মাত্রা কমানো, হজমের উন্নতি, লিভারকে ডি-টক্সিফাই করা ইত্যাদির মতো স্বাস্থ্যক্ষেত্রে প্রচুর সুবিধা দিতে পারার মতো সক্ষম একটি প্রাকৃতিক প্রতিকার । কারণ, করলা-জাম একত্রিত হয়ে এই জুসকে একটি শক্তিশালী রূপ দান করে । এই পানীয়ের মধ্যে ভিটামিন, খনিজ দ্রব্য, ডায়েটারী ফাইবার, অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, ফাইটোকেমিক্যালস, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরী, মাইক্রোবিয়াল উপাদান গুলি একত্রিত আকারে একে একটি জনপ্রিয় শক্তিশালী হেলথ টনিক হিসাবে পরিচিতি দান করেছে ।

সবশেষে মনে রাখতে হবে অন্যান্য খাদ্য-পরিপূরক গ্রহণের মতোই এটিও গ্রহণের আগে কোন কোন পেশাদার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী বা কোন পেশাদার ডায়েটেশিয়ানের সঙ্গে  পরামর্শ করে নেওয়া উচিত । কারণ, তিনি আমাদের স্বাস্থ্য-পরিস্থিতি অনুযায়ী এবং সুস্থতার অন্যান্য দিকগুলো এবং কোন বিশেষ স্বাস্থ্য-পরিস্থিতি থাকলে সেই অনুযায়ী, সঠিক ফল পেতে আমাদের ডোজ নির্ধারণ থেকে শুরু করে অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে পারবেন । আমাদের এই ব্লগ পোস্টটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে এবং পোস্টে দেওয়া তথ্য যদি আপনার কার্যকরী বলে মনে হয়, তাহলে অন্যদের শেয়ার করার অনুরোধ রইলো ।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ