হুইট গ্রাস (Triticum aestivum), তার অবিশ্বাস্য প্রাকৃতিক পুষ্টি-উপাদানের সমাহার নিয়ে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে তার অসংখ্য লাভের জন্যে প্রাকৃতিক প্রতিকারের জগতে এক অসামান্য জনপ্রিয়তার অধিকারী । সাধারণত: গম গাছের কচি কান্ডের রস, যা হুইট গ্রাস জুস হিসাবে তার পুষ্টির বৈশিষ্ট্যগুলোর জন্যে প্রাচীন কাল থেকে এক অনন্য ঐতিহ্য বহন করে আসছে । আজ আমরা এই ব্লগ পোস্টে হুইট গ্রাস কি, তার প্রাচীন ঐতিহ্য, এর মধ্যেকার পুষ্টি-উপাদান গুলি সম্পর্কে এবং স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে তাদের বৈশিষ্ট্য, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে হুইট গ্রাস ভালো কেন এবং হুইট গ্রাস জুসের ব্যবহারের উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করবো ।
হুইট গ্রাস কি
হুইট গ্রাস হলো সাধারণ গম গাছের অল্প বয়স্ক (৭-১৪ দিন), সদ্য অঙ্কুরিত কচি পাতা কেটে তার থেকে তৈরী করা রস । এই রস ক্লোরোফিল, ভিটামিন, খনিজ দ্রব্য, অ্যামাইনো অ্যাসিড, এনজাইম এবং বিভিন্ন ফাইটোকেমিক্যালস বা জৈব যৌগের সমাহারে সমৃদ্ধ এক অসাধারণ খাদ্য পরিপূরক । তার অসামান্য পুষ্টি-উপাদানে সমৃদ্ধতার কারণে অনেকেই একে “সুপারফুড” শ্রেনীতে বিবেচনা করে থাকেন ।
হুইট গ্রাসের ঐতিহ্য
যদিও হুইট গ্রাসের জনপ্রিয়তা এবং বর্তমান সময়ে এর ব্যবহারের প্রবণতা দেখে মনে
হতে পারে যে এটি বোধহয় আধুনিক মানুষের প্রাকৃতিক স্বাস্থ্য প্রতিকারের অনুসন্ধানের
ফসল, কিন্তু তা নয় । আসলে এর ঐতিহ্য এবং ব্যবহারের শুরু আজ থেকে হাজার হাজার বছর
আগেকার সময়ে । প্রাচীন মিশরীয়রা শরীরকে পুনরুজ্জীবিত এবং পুনরুদ্ধার করার ক্ষমতার
জন্যে এটিকে ব্যবহার করতো । তারা হুইট গ্রাসের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে এর ক্ষমতা এবং
ঔষধিয় গুণাবলীর জন্যে এটিকে বিশেষভাবে শ্রদ্ধা করতো বলে তথ্য পাওয়া যা্য় ।
একইভাবে, মেসোপটেমিয়া এবং গ্রীসের মতো প্রাচীন সভ্যতায়ও খাদ্যতালিকাগত এবং ঔষধিয়
উপাদান হিসাবে হুইট গ্রাসের ব্যবহার হতো বলে অনুসন্ধানে জানতে পারা যায় ।
আর হুইট গ্রাসের জনপ্রিয়তার তরঙ্গ ধীরে ধীরে শিখরে উঠতে থাকে যখন ১৯৩০ সালে কৃষি রসায়নবিদ চার্লস এফ. স্নাবেল এর সম্পর্কে গবেষণা করেন । তার গবেষণায় তিনি প্রমাণ করেন যে, হুইট গ্রাস প্রানীদের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে । এটিকে একটি সুপারফুড হিসাবে এর সুবিধার কথা তিনি মানুষের মধ্যে প্রচার করা শুরু করেন । মি: অ্যান উইগমোর, একজন লিথুমিয়ান অধিবাসী এবং পুষ্টিবিদ, ১৯৭০ য়ের দশকে হুইট গ্রাস সম্পর্কিত স্নাবেলের গবেষণার কাজকে আরো এগিয়ে নিয়ে যান এবং হুইট গ্রাসের ডিটক্স পদ্ধতির বিকাশ সম্পর্কিত গবেষণা করে হুইট গ্রাসকে জনপ্রিয়তার দিকে আরো এগিয়ে নিয়ে যান । বর্তমানে এটি তার অবিসংবাদিত ডি-টক্সিফাইং গুণ এবং অন্যান্য গুণাবলীর জন্যে সারা বিশ্বে খাদ্য-পরিপূরক হিসাবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এবং আরো জনপ্রিয় হয়ে চলেছে ।
হুইট গ্রাসের পুষ্টি-উপাদান সমূহ
হ্ইট গ্রাসে প্রচুর জানা-অজানা পুষ্টি-উপাদান থাকে, যারা
সমষ্টিগতভাবে সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্যে এটিকে একটি অসাধারণ করে তুলেছে । এখানে
হুইট গ্রাসে পাওয়া যায় এরকম কয়েকটি পুষ্টি-উপাদানের চার্টসহ তাদের ভূমিকা সম্পর্কে
সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো -
গমের ঘাসের রসের পুষ্টি তালিকা (প্রতি ১ আউন্স বা ৩০ মিলি.তে)
নিউট্রিয়েন্ট |
পরিমাণ (প্রতি ১ আউন্স বা ৩০ মি.লি-য়ে) |
% দৈনিক মূল্য (DV) |
কার্যকারিতা বা বিশেষ নোট |
ক্যালোরি |
৩০
ক্যালোরি |
- |
হুইট
গ্রাসের জুসে খুব কম ক্যালোরি থাকে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্যে প্রয়োজনীয় । ফলে, অতিরিক্ত ক্যালোরি ছাড়াই পুষ্টি-উপাদানের সম্ভার হিসাবে এটিকে একটি দারুণ বিকল্প হিসাবে তুলে ধরে । |
প্রোটিন |
১ গ্রাম |
২% |
যদিও হুইট গ্রাস প্রোটিনের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস নয়, তবুও এতে কিছু প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো অ্যাসিডের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়, যা পেশী মেরামতি এবং তাদের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে । আর হরমোন এবং এনজাইম তৈরীর জন্যেও এটি গুরুত্বপূর্ণ । |
ভিটামিন এ |
১০,০০০ আই.ইউ |
২০০% |
এই ধরনের ভিটামিন সুস্থ দৃষ্টি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখতে শরীরে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । তাছাড়াও এটি ত্বক সুস্থ রাখতে এবং অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট হিসাবে কাজ করে, যা কোষগুলিকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের হাত থেকে রক্ষা করে । |
ভিটামিন সি |
১০
মিলিগ্রাম |
১৭% |
ভিটামিন সি তার রোগ প্রতিরোধকারী ক্ষমতায় ভূমিকার জন্যে পরিচিত । ভিটামিন সি কোলাজেন উৎপাদনে জন্যে অপরিহার্য, যা ত্বকের সুস্থতা এবং ক্ষত নিরাময়ের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ । তাছা্ও এটি অক্সিড্যান্ট হিসাবে কাজ করে এবং শরীরের মধ্যেকার ফ্রি-র্যাডিক্যালসগুলিকে নিরপেক্ষ করতে সহায়তা করে । |
ভিটামিন ই |
০.৫ মিলিগ্রাম |
৩% |
এই ভিটামিন একটি ফ্যাট-দ্রবণীয় অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট হিসাবে শরীরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । ভিটামিন-ই কোষের ঝিল্লিকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের হাত থেকে রক্ষা করে এবং ইমিউন সিস্টেমকে তার ফাংশন করতে সহায়তা করে । ভিটামিন-ই কোষের আর্দ্রতা এবং স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । |
আয়রন |
০.৫ মিলিগ্রাম |
৩% |
হুইট গ্রাস উদ্ভিদ ভিত্তিক আয়রন সরবরাহ করে, যা নিরামিষভোজীদের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । আয়রন হিমোগ্লোবিনের উৎপাদনের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ, যা শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকা শক্তির মাত্রা এবং জীবনীশক্তির জন্যে অপরিহার্য উপাদান । |
ক্যালসিয়াম |
১০
মিলিগ্রাম |
১% |
এই খনিজ উপাদানটি শক্তিশালী হাড় এবং দাঁতের জন্যে অপরিহার্য । ক্যালসিয়াম শরীরের পেশী ফাংশন এবং স্নায়ুর সংকেত আদান-প্রদানেও গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা নেয় । হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখা এবং অস্টিওপোরোসিসেরে সমস্যা প্রতিরোধে শরীরের ক্যালসিয়ামের পর্যাপ্ত পরিমাণে বজায় থাকা আবশ্যক । |
ম্যাগনেসিয়াম |
১০
মিলিগ্রাম |
২% |
এই খনিজ পদার্থটি শরীরের প্রায় ২৫০টিরও বেশি জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকে । যার মধ্যে রয়েছে পেশী এবং স্নায়ুর কার্যকারিতা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, শক্তি উৎপাদন এবং ইমিউন সিস্টেমের ফাংশনে অংশগ্রহণ ইত্যাদি । |
পটাসিয়াম |
৮০
মিলিগ্রাম |
২% |
পটাশিয়াম শরীরের তরলের ভারসাম্য বজায় রাখে, পেশী সংকোচনে সাহায্য করে, স্নায়ুর সঠিক কার্যকারিতা করার জন্যে গুরুত্বপূর্ণ । এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে স্ট্রোকের ঝুকি কমায় । |
সোডিয়াম |
১
মিলিগ্রাম |
0% |
হুইট গ্রাসে এটি খুবই সামান্য পরিমাণে থাকে এবং অত্যন্ত পরিমিতভাবে গ্রহণ শ্বাস্থ্যের জন্য ভালো । এটি শরীরের তরলের ভারসাম্য এবং স্নায়ুর কার্যকারিতার জন্য অপরিহার্য
। |
ফাইবার |
০.৫ গ্রাম |
২% |
ফাইবার নিয়মিত মলত্যাগের জন্য এবং অন্ত্রের কার্যকারিতা বজায় রাখার জন্যে গুরুত্বপূর্ণ । স্বাস্থ্যকর পরিপাকতন্ত্র বজায় রাখার জন্য ফাইবার একটি গুরুত্বপূর্ণ
উপাদান । |
ফলিক অ্যাসিড |
২০
মাইক্রোগ্রাম |
৫% |
এই বি ভিটামিনটি ডিএনএ সংশ্লেষণ এবং মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয়। এটি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ভ্রূণের বিকাশকে সমর্থন করে । |
বিটা-ক্যারোটিন |
২০০০
আই.ইউ |
- |
একে ভিটামিন
এ-এরই অগ্রদূত
বলা যেতে পারে । বিটা-ক্যারোটিন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, দৃষ্টিশক্তি এবং ত্বকের স্বাস্থ্যকে সমর্থন করে । এটি শরীরে একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবেও কাজ করে এবং শরীরকে অক্সিডেটিভ
স্ট্রেসের ক্ষতি
থেকে রক্ষা করে । |
হুইট গ্রাসের বিশেষ বৈশিষ্ট্য
হুইট গ্রাসের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো বহু পুষ্টি-উপাদানের
এক ঘনীভূত সমাহার, যার জন্যে অল্প মাত্রায় এর গ্রহণও শরীরের পক্ষে অত্যন্ত কার্যকর
। হুইট গ্রাসের মাত্র এক শট (প্রায় এক আউন্স বা ৩০ মিলির মতো), বিভিন্ন শাক-সবজি বা
ফল-মূল গ্রহণের সমান হতে পারে । শুধু এর পুষ্টি-উপাদানের ঘনত্বের জন্যেই নয়, এই সমস্ত
পুষ্টি-উপাদান এবং বেশ কিছু ফাইটোকেমিক্যালসের উপস্থিতি একত্রিত হয়ে হুইট গ্রাসকে কিছু
অসাধারণ ভেষজ বৈশিষ্ট্য প্রদান করেছে । যার ফলে এটি একটি শক্তিশালী খাদ্য পরিপুরক হয়ে
উঠেছে । হুইট গ্রাসে বিদ্যমান ক্লোরোফিল এবং অন্যান্য উপাদান মিলে একে দিয়েছে এক অনন্য
ডি-টক্সিফাইং বৈশিষ্ট্য, যা লিভারকে বিশুদ্ধ রাখতে, রক্ত পরিষ্কার করতে এবং শরীর থেকে
ক্ষতিকারক টক্সিনকে বার করে দিতে সাহায্য করে । হুইট গ্রাসের মধ্যে pH বজায় রাখার এক অসাধারণ বৈশিষ্ট্য দেখা
যায় । গবেষণায় দেখা গেছে যে, শরীরে ক্ষারীয় pH বজায় রাখা দীর্ঘস্থায়ী
রোগের ঝুকি কমাতে পারে । আর হুইট গ্রাসকে খারাপ খাদ্যাভ্যাস, চাপ বা পরিবেশগত
বিষাক্ত পদার্থের কারণে সৃষ্ট শরীরের অম্লতাকে নিরপেক্ষ করে ক্ষারীয় মাত্রা বজায়
রাখে ।
হুইট গ্রাসের এইরকম বিভিন্ন ঔষধিয় বৈশিষ্ট্য দেখা যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো এর মধ্যে বিভিন্ন পুষ্টি-উপাদানের পাশাপাশি প্রচুর জৈব যৌগ বা ফাইটোকেমিক্যালসের উপস্থিতি । হুইট গ্রাসের মধ্যে পাওয়া যায় সেইরকম কিছু ফাইটোকেমিক্যালস বা জৈব যৌগর কথা এখানে চার্টসহ আলোচনা করা হলো –
হুইট গ্রাসে থাকা কিছু ফাইটোকেমিক্যাল (প্রতি ৩০ মিলিতে)
ফাইটোকেমিক্যাল |
পরিমাণ (প্রায়) প্রতি 30 মিলি.তে |
স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে লাভ |
ক্লোরোফিল |
২১
মিলিগ্রাম |
(i) ডিটক্সিফিকেশন : শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। (ii) প্রদাহ বিরোধী : প্রদাহ হ্রাস করে, সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। (iii) ক্ষত নিরাময়
: ত্বক
নিরাময় এবং কোষের পুনর্জন্মে সাহায্য করে। |
ফ্ল্যাভোনয়েডস |
০.২ – ০.৪ মিলিগ্রাম |
(i) অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট বৈশিষ্ট্য
: ফ্রি
র্যাডিক্যালকে নিরপেক্ষ করে, কোষকে অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। (ii) কার্ডিওভাসকুলার ক্ষেত্র : রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে । (iii) অ্যান্টি-ক্যান্সার বৈশিষ্ট্য : টিউমার বৃদ্ধিতে বাধা দেয় এবং নির্দিষ্ট কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। |
ফেনোলিক যৌগ |
০.১ – ০.৩ মিলিগ্রাম |
(i) কোষের সুরক্ষা : অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে কোষকে রক্ষা করে। (ii) কোলেস্টেরল হ্রাস : এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে । (iii) প্রদাহ বিরোধী : সারা শরীরে প্রদাহ কমাতে অবদান রাখে। |
স্যাপোনিনস |
০.০১-০.০৫ মিলিগ্রাম |
(i) কোলেস্টেরল হ্রাস : রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। (ii) ইমিউন সাপোর্ট
: সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ইমিউন সিস্টেমের ক্ষমতা বাড়ায়। (iii) অন্ত্রের স্বাস্থ্য
: অন্ত্রকে সুস্থ রাখতে এবং তার কার্যকারিতায় সাহায্য করে । |
লিগনানস |
০.০১ মিলিগ্রাম |
(i) হরমোনের ভারসাম্য
: হরমোনের
মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে, বিশেষ করে ইস্ট্রোজেন
হরমোনের ক্ষেত্রে । (ii) ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস : স্তন ক্যান্সারের মতো হরমোন-সম্পর্কিত ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। (iii) অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট বৈশিষ্ট্য : অক্সিডেটিভ
স্ট্রেসের ক্ষতি
থেকে কোষকে রক্ষা করে । |
ক্যারোটিনয়েড |
০.৫-১ মিলিগ্রাম |
(i) চোখের স্বাস্থ্য
: দৃষ্টিশক্তিতে সহায়তা করে এবং বয়স-সম্পর্কিত অবক্ষয়
থেকে দৃষ্টিশক্তিকে বজায় রাখতে সাহায্য করে । (ii) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি : শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। (iii) ত্বক সুরক্ষা
:
আলট্রা ভায়োলেট রশ্মির(UV) ক্ষতি থেকে ত্বককে রক্ষা করতে এবং স্বাস্থ্যকর বর্ণকে উন্নত করতে সহায়তা করে। |
গ্লুটাথিয়ন |
০.১ মিলিগ্রাম |
(i) অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য : শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে এবং কোষকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। (ii) সেলুলার স্বাস্থ্য
: সামগ্রিক সেলুলার ফাংশন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অপরিহার্য। (iii) ইমিউন সাপোর্ট
: ইমিউন
সিস্টেমের কার্যকারিতা বাড়ায়। |
স্বাস্থ্যক্ষেত্রে হুইট গ্রাসের উপকারিতা
প্রচুর পুষ্টি-উপাদান, যেমন – কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন,
ভালো ফ্যাট, বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ এবং পাশাপাশি প্রচুর ফাইটোকেমিক্যালস
বা জৈব যৌগগুলির একত্র উপস্থিতির জন্যে হুইট গ্রাস মানব শরীরের স্বাস্থ্য এবং
সুস্থতার ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার ফেলতে পারে । আর সেইজন্যে প্রচুর মানুষ
সুস্থতার জন্যে একে আজ এক প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসাবে সমাদরে গ্রহণ করে নিয়েছেন ।
১) ডায়াবেটিস – হুইট গ্রাসের
মধ্যে উপস্থিত ফাইবার জাতীয় পুষ্টি-উপাদানগুলি রক্ত প্রবাহে শর্করার শোষণের
মাত্রাকে ধীর করতে সাহায্য করে । তাছাড়াও হুইট গ্রাসের অন্যান্য উপাদান সমূহ
ইনসুলিন সংবেদনশীলতার উন্নতি ঘটাতে পারে ।
২) রক্তাল্পতা বা
অ্যানিমিয়া – হুইট গ্রাসের মধ্যেকার আয়রন উপাদান এবং ক্লোরোফিল একত্রে রক্তে লোহিত
রক্তকণিকার উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে । যার ফলে রক্তের অক্সিজেন বহন করার
ক্ষমতা উন্নত হয়, শরীরের শক্তির মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং ক্লান্তিভাবের হ্রাস ঘটে ।
আর এইসবের ফলে অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতায় যারা ভুগছেন, তাদের জন্যে হুইট গ্রাস
একটি ভালো প্রাকৃতিক প্রতিকার হয়ে উঠতে পারে ।
৩)
ডি-টক্সিফিকেশন এবং লিভারের স্বাস্থ্য – হুইট গ্রাসের মধ্যে থাকা ক্লোরোফিলের
সাহায্যে লিভার খুব সহজেই টক্সিনগুলিকে ভেঙে ফেলে শরীর থেকে বার করে দিতে পারে ।
আর এর ফলে লিভারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় এবং লিভার সুস্থ থাকে ।
৪) ক্যান্সারকে
প্রতিরোধ করে – হুইট গ্রাসে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকে, যারা শরীরের
ফ্রি-র্যাডিক্যালগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে এবং তাদের নিরপেক্ষ করতে
সাহায্য করে । শরীরের মধ্যে এই ফ্রি-র্যাডিক্যালগুলির উপস্থিতি কোষের ক্ষতি করতে
পারে এবং ক্যান্সারের বিকাশ ঘটাতে পারে । এছাড়াও হুইট গ্রাস ক্যান্সারের চিকিৎসায়
ব্যবহৃত কেমোথেরাপির উপসর্গগুলি কমাতে সাহায্য করে । যেমন - প্রদাহ, ক্লান্তি,
ক্ষিদে কমে যাওয়া, দুর্বলতা ইত্যাদি ।
৫) pH স্তরের ভারসাম্য বজায় রাখে – শরীরে একটি ব্যালেন্স pH স্তর বজায় রাখা সুস্থতার অন্যতম শর্ত । হুইট গ্রাসের জুসের
মধ্যে একটি ক্ষারীয় প্রভাব ফেলার ক্ষমতা আছে । যার ফলে এটি খারাপ খাদ্য বা খারাপ
খাদ্যাভ্যাস, চাপ এবং বিভিন্ন পরিবেশগত কারণে শরীরে সৃষ্ট অম্লতাকে প্রতিরোধে
সাহায্য করে ।
৬) হজমে সাহায্য
করে – হুইট গ্রাসে থাকা ফাইবার নিয়মিত মলত্যাগে সহায়তা করে । কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা
দূর করতে এবং অন্ত্রকে সামগ্রিকভাবে সুস্থ রাখে । তাছাড়া এর ক্ষারীয় বৈশিষ্ট্যর
জন্যে অ্যাসিড রিফ্লাক্স, বদহজম এবং অন্যান্য গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল সমস্যার ঝুকি
কমায় ।
৭) হার্টকে ভালো
রাখে – হুইট গ্রাসের পটাশিয়াম রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত করে এবং এর মধ্যে থাকা
ফাইবার এল.ডি.এল (খারাপ কোলেস্টেরল) কমাতে সাহায্য করে । সুতরাং বলা যেতে পারে যে,
হুইট গ্রাসের নিয়মিত সেবনের ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো যায় ।
৮) দীর্ঘস্থায়ী
প্রদাহ – মূলত: হুইট গ্রাসের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টগুলি এবং ফ্রি-র্যাডিক্যালকে
নিরপেক্ষ করার ক্ষমতা শরীরের দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ বা ইনফ্ল্যামেশন কমাতে সাহায্য
করে ।
৯) ত্বকের অবস্থার
উন্নতি ঘটায় - হুইট গ্রাসের ডি-টক্সিফাইং গুণ এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ
ত্বকের অবস্থার উন্নতি ঘটায় । ব্রণর সমস্যায়, একজিমার সমস্যায় এবং ক্ষত নিরাময়ে
সাহায্য করে । এর অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টগুলি এবং ভিটামিনগুলি ত্বককে দূষণ এবং
অতিবেগুনী রশ্মির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে ।
১০) চুল ভালো রাখে
– হুইট গ্রাস প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, ফাইটোকেমিক্যালস এবং খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ হওয়ার
কারণে চুলের বিভিন্ন সমস্যায় সাহায্য করতে পারে । এটি চুল পড়ার সমস্যা কমিয়ে
শক্তিশালী, উজ্জ্বল চুল পেতে সাহায্য করে ।
১১) ইমিউনিটি
ক্ষমতা বাড়ায় – হুইট গ্রাসে উপস্থিত ভিটামিন এবং বিভিন্ন
অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টগুলি শরীরকে আরো কার্যকরভাবে সংক্রমণ এবং অসুস্থতার বিরুদ্ধে
লড়াই করতে শরীরকে সহায়তা করে ।
১২)
শক্তিবৃদ্ধিতে সাহায্য করে – হুইট গ্রাসের পুষ্টি-উপাদানের ঘনত্ব এবং এর
ডি-টক্সিফাইং গুণের জন্যে লিভার এবং পাচনতন্ত্র ভালো থাকে । ফলে শরীরের শক্তির
মাত্রা বৃদ্ধি পায় ।
১৩) ওজন
নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে – হুইট গ্রাসে ক্যালোরির পরিমাণ কিন্তু পুষ্টি-উপাদানের
ঘনত্ব বেশি । আর এর ক্ষারীয় বৈশিষ্ট্যের জন্যে এবং শরীরের pH স্তরের ভারসাম্য বজায় রাখার গুণের জন্যে এটি ফ্যাট কমাতে
সহায়তা করে ।
১৪) সামগ্রিক স্বাস্থ্যক্ষেত্রে – হুইট গ্রাস প্রচুর ভিটামিন, খনিজ দ্রব্য, অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট এবং ফাইটোকেমিক্যালস দ্বারা ভরপুর পুষ্টি-উপাদানে সমৃদ্ধ । ফলে এটি ডি-টক্সিফাইং পদ্ধতির মাধ্যমে লিভারকে কার্যকরী করে তোলে, হার্ট ভালো রাখে, pH স্তরের ভারসাম্য বজায় রাখে, রক্তাল্পতা দৃর করতে সাহায্য করে, শরীরের শক্তির মাত্রা বাড়ায়, প্রদাহ কমাতে ভূমিকা নেয়, সংক্রমণ রোধে সহায়তা করে এবং ফ্রি-র্যাডিক্যালগুলিকে নিরপেক্ষ করে দীর্ঘস্থায়ী রোগ (ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, রক্তচাপের সমস্যা, হৃদরোগ ইত্যাদি) প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে, ফলে সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে ।
ব্যবহারের জন্য সতর্কতা
যদিও হুইট গ্রাস জুস পান করার ফলে আমরা স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বহু
লাভ পেতে পারি, তবুও মনে রাখতে হবে যে, সংখ্যায় অতি নগণ্য হলেও কিছু মানুষের ক্ষেত্রে
এটি বিরূপ প্রতিক্রিয়া করতে পারে এবং কিছু ক্ষেত্রে এটি বিশেষ বিবেচনার পরেই গ্রহণ
করা উচিত ।
১) অ্যালার্জি : সংখ্যায় অত্যন্ত নগণ্য হলেও, কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে
হুইট গ্রাসের জুস গ্রহণের পরে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে বা বিরূপ প্রতিক্রিয়া
দেখা দিতে পারে । সেইজন্যে অল্প পরিমাণ ডোজ দিয়ে শুরু করা এবং উপসর্গের লক্ষণ দেখা
দিচ্ছে কিনা দেখে ডোজ বাড়ানো উচিত ।
২) ওষুধের মিথস্ক্রিয়া : যদি কোন ব্যক্তি নিয়মিত ওষুধ খান, রক্তচাপের জন্যে, হার্টের
জন্যে বা কিডনীর জন্যে তাহলে অবশ্যই কোন পেশাদার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী বা পেশাদার
ডায়েটেশিয়ানের সঙ্গে বিশদ আলোচনা করে হুইট গ্রাস পান শুরু করা উচিত ।
৩) গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মহিলা : কোন গর্ভবতী বা শিশুকে
স্তন্যদানকারী মহিলার ক্ষেত্রে অবশ্যই কোন পেশাদার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী বা পেশাদার
ডায়েটেশিয়ানের সঙ্গে বিশদ আলোচনা করে হুইট গ্রাস পান শুরু করা উচিত । কারণ, হুইট গ্রাসের
মধ্যে ইস্ট্রোজেন হরমোনের উপরে প্রভাব ফেলার ক্ষমতা আছে ।
৪) উচ্চ-গুণমানের পণ্য : যদি বাজারজাত হুইট গ্রাস কিনে পান খেতে
চান, তাহলে অবশ্যই গুণমান বিবেচনা করে পছন্দ করুন । আর যদি বাড়িতে বানানোর চেষ্টা করেন
তাহলে সর্বদা উচ্চমানের জৈব ঘাস বেছে নিন ।
হুইট গ্রাস তার ক্লোরোফিল, ভিটামিন, খনিজ দ্রব্য, অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট এবং ফাইটোকেমিক্যালস দ্বারা সমৃদ্ধ পুষ্টির এক পাওয়ার হাউস । এটি আমাদের শরীরকে ডি-টক্সিফাই করতে, লিভারের কার্যকারিতাকে উন্নত করতে, শরীরের pH স্তরের ভারসাম্য বজায় রাখার গুণ নিয়ে, হার্টকে ভালো রাখার ক্ষমতা নিয়ে, শরীরের প্রদাহ কমানোর গুণ নিয়ে, শক্তির মাত্রা বৃদ্ধি করার ক্ষমতা নিয়ে এবং ফ্রি-র্যাডিক্যালসকে মুক্ত রাখার প্রবণতা নিয়ে শরীরকে দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমিয়ে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে । ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যায়, অ্যানিমিয়ার সমস্যায়, লিভারের এবং অন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যায় প্রভাব ফেলে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতার ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান করে । তার বহুবিধ উপকারিতা এবং অসামান্য পুষ্টি-উপাদানের সম্ভারের জন্যে আজ সারা বিশ্বের বহু মানুষ এটিকে একটি সুপারফুড হিসাবে এবং তাদের অন্যতম খাদ্য-পরিপূরক হিসাবে সমাদরে গ্রহণ করেছে । তথাপি এটি ব্যবহারের পুর্বে আমরা পরামর্শ দেবো এর সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়ার জন্যে কোন পেশাদার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী বা কোন পেশাদার ডায়েটেশিয়ানের তত্ত্বাবধানে এটিকে গ্রহণ করবেন ।
0 মন্তব্যসমূহ