আমাদের শরীরে
প্রোটিন সাপ্লিমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে গেলে আগে বুঝতে হবে, আমাদের শরীরের জন্য প্রোটিনের
প্রয়োজনীয়তা কি এবং কতোটা । প্রোটিন হলো মানবদেহের জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
একটি উপাদান । তার প্রধান কারণ হলো, মূলত: প্রোটিন দিয়েই আমাদের শরীরের কোষ,
টিস্যু, এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ইত্যাদি গঠিত হয় । এককথায় বলতে গেলে প্রোটিনই হলো আমাদের
শরীরের মূল কাঠামোগত একক । এছাড়াও আমাদের শরীরের পেশীগুলির গঠনে এবং মেরামতির
জন্যে প্রোটিন একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান । প্রোটিন আমাদের শরীর থেকে নি:সৃত
বিভিন্ন এনজাইম এবং হরমোন তৈরীর জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান । তাছাড়াও
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা অ্যান্টিবডি তৈরীর জন্যে এবং সারাদিন বিভিন্ন
শারীরিক কার্যকলাপ্ এবং সঠিক এনার্জি বজায় রাখার জন্যে প্রোটিন অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় । আর
তাই মানুষের শরীরের বিভিন্ন শারীরিক ক্রিয়াকলাপ সুস্থভাবে বজায় রাখা এবং সামগ্রিক
স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য শরীরে প্রোটিনের দৈনিক চাহিদা পূরণ অত্যন্ত প্রয়োজন ।
আজকের দ্রুত্ এবং গতিময়তার যুগে মানুষ হয়ে পড়েছে ব্যস্ত, বেশিরভাগ মানুষই এমনকি
শিশু, কিশোররাও অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন বাজারের বিভিন্ন চটজলদি খাবারের খাদ্যাভ্যাসে ।
আর এই ধরনের বেশিরভাগ খাবারই প্রধানত: কার্বোহাইড্রেট সরবরাহ করে । যা অতিরিক্ত
হওয়া আমাদের শরীরের জন্য কখনোই ফলদায়ক হয় না । আবার বেশিরভাগ মানুষই কর্মব্যস্ততা
এবং সচেতনতার অভাবে ব্যালেন্স ডায়েট মেনে খাবার খান না বা খেতে পারেন না । আর এই
সমস্ত কারণের মিশ্রিত ফল হিসাবে আমাদের শরীরে প্রোটিনের দৈনন্দিন চাহিদার ঘাটতি
পূরণ হয় না । আর তার ফল ভুগতে হয় মানুষকে, কখনো বেশি বয়সে বা অল্প বয়সে । আর
এইসবের মাঝখানে প্রোটিনের দৈনিক চাহিদা পূরণের একটি সমাধান হলো প্রোটন সাপ্লিমেন্ট
গ্রহণ ।
কিন্তু প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের আগে
আমাদের ভালো করে বুঝে নেওয়া দরকার যে, প্রোটিন আমাদের শরীরে কি কাজ করে অধবা
মানবদেহে প্রোটিনের গুরুত্ব কি অথবা সঠিক পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ না করলে আমাদের
শরীরের কি কি অংশ দুর্বল হয়ে পড়বে বা কোথা থেকে বিপদগুলি ভবিষ্যতে আসতে পারে এবং
কেন । যখন আমরা গুরুত্ব সহকারে এই বিষয়গুলি জেনে যাবো তখন সহজেই বুঝতে পারবো
প্রোটিন সাপ্লিমেন্টের গুরুত্ব কতোখানি ।
মানবদেহে প্রোটিনের কাজ কি
১. পেশী রক্ষণাবেক্ষণ এবং বৃদ্ধি : মানবদেহের
বিভিন্ন অংশের পেশী তৈরী, টিস্যু তৈরী এবং সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামতিতে
প্রোটিন একটি অত্যন্ত আবশ্যকীয় উপাদান । যদি কোন ব্যক্তি শরীরচর্চার জন্যে জিমে
যেতে অভ্যস্ত হন অথবা যদি কেউ সহনশীলতা বাড়ানোর জন্যে বিশেষ কোন ট্রেনিং করেন,
তাহলে সেইসব ক্ষেত্রে তাদের শরীরের তন্তুগুলির উপরে চাপ পড়ে এবং বিভিন্ন ক্ষতির
সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা তৈরী হয় । একমাত্র দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন গ্রহন
এইসব আশঙ্কা থেকে মুক্তি দিতে পারে ।
২. কোষীয় প্রক্রিয়া : মানবদেহের
সারা শরীর জুড়ে থাকে অসংখ্য, অগুণতি কোষ এবং বিভিন্ন টিস্যু । আর এইসব কোষগুলি
সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকে বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়ায় । যার ফল হিসাবে দিনভর আমরা বিভিন্ন
কাজে ব্যস্ত থাকতে পারি বা বিভিন্ন কাজকর্ম করে উঠতে পারি । কখনো কিছু কোষ এবং
টিস্যুগুলি সম্পাদন করে আমাদের বিপাকীয় ক্রিয়া, আবার কখনো তারা একত্রিত হয়ে আমাদের
চলন-গমনের মতো কাজগুলি সম্পন্ন করতে সাহায্য করে । এইসব কাজ ছাড়াও এনজাইম উৎপাদনে
বা হরমোন উৎপাদনেও প্রোটিনের গুরুত্ব অপরিসীম । শরীরের ইমিউন ফাংশণ এবং ডি.এন.এ
সংশ্লেষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াগুলিও শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিনের
উপস্থিতির উপরে নির্ভর করে । আর দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা পূরণ না হলে এইসব গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক ক্রিয়াগুলির ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এবং ধীরে ধীরে
অদৃশ্যভাবে মানবশরীর বড় ক্ষতির দিকে এগিয়ে যায় ।
৩. ওজনের ভারসাম্য বজায় রাখতে : খাদ্য হিসাবে প্রোটিনের গ্রহণ খিদে
মেটাতে এবং তৃপ্তির অনুভূতি পেতে সাহায্য করে । যার ফল হিসাবে আমরা অতিরিক্ত
ক্যালোরি যুক্ত খাবার বা খারাপ কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার খাওয়ার থেকে বিরত হই ।
আর এইসবের সামগ্রিক ফল হিসাবে শরীরের ওজনের ভারসাম্য বজায় রাখা অপেক্ষাকৃত সহজ হয়ে
ওঠে এবং ছিপছিপে, মেদহীন, সুঠাম চেহারার অধিকারী হওয়া সহজ হয় ।
৪. টিস্যু মেরামত এবং ক্ষত নিরাময় : মানুষের সারা শরীর তৈরী হয় অসংখ্য কোষ, টিস্যু, মাংসপেশী দিয়ে, আর যাদের গঠনগত প্রধান উপাদান হলো প্রোটিন । তাই সারা শরীর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই সমস্ত কোষ, টিস্যু এবং পেশীগুলোর মেরামতি, ক্ষয়পূরণ এবং বিশেষত: কোষের পুনর্জন্মের জন্যও প্রোটিন একটি অত্যন্ত আবশ্যক উপাদান । যেকোন কারণে কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা টিস্যুগুলির মেরামতির প্রয়োজন হলে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিনের সরবরাহ থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন, কারণ প্রোটিন এই কাজগুলো করতে শরীরকে সাহায্য করে বা বলা ভালো এগুলি করতে শরীরের প্রচুর পরিমাণে প্রোটিনের প্রয়োজন হয় । সুতরাং কোন কারণে শারীরিক আঘাত হলে বা শরীরে কোন অস্ত্রোপচার হলে শরীরের প্রোটিনের চাহিদা বেড়ে যায় এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিনের সরবরাহ থাকলে এইসব ক্ষেত্রে নিরাময়ের সুবিধা হয় ।
৫. হরমোন এবং এনজাইম উৎপাদন : মানবদেহের শরীরে সারাক্ষণ নানারকমের শারীরবৃত্তীয় কাজকর্ম চলে
। আর সেইসব শরীরবৃত্তীয় কার্যকলাপে বিভিন্ন হরমোন এবং এনজাইমের বিভিন্ন রকম উল্লেখযোগ্য ভূমিকা থাকে । আর শরীর নিজেই
এই সমস্ত হরমোন এবং এনজাইম তৈরী করে, কিন্তু এইসব হরমোন এবং এনজাইমগুলির গঠনগত মূল
উপাদান হলো প্রোটিন । সুতরাং শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিনের সরবরাহ পরোক্ষভাবে
বিভিন্ন শারীরৃত্তীয় কার্যকলাপে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে । তাছাড়াও
মানবদেহের সার্বিক বৃদ্ধি বা বিকাশের ক্ষেত্রেও এটি একটি উল্লেখযোগ্য উপাদান ।
প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তার তারতম্যের কারণসমূহ
বিভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রোটিনের
চাহিদা বিভিন্ন । একজন ব্যক্তির জন্য নির্দিষ্ট প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা বিভিন্ন
কারণের উপর নির্ভর করে, যার মধ্যে রয়েছে :
শরীরের ওজন এবং গঠন : সাধারণত, উচ্চতর শরীরের ওজন বা পেশী ভরের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে তাদের বিপাকীয় চাহিদাগুলিকে সমর্থন করতে এবং পেশী ভর বজায় রাখতে বেশি প্রোটিনের প্রয়োজন হয় ।
বয়স এবং বৃদ্ধি : শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের দ্রুত বৃদ্ধি এবং বিকাশের সময়কালের কারণে প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় তাদের শরীরের ওজনের তুলনায় তাদের শরীরে দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা বেশি হয় ।
ক্রিয়াকলাপ অনুযায়ী : ক্রীড়াবিদ এবং সেই সমস্ত ব্যক্তিরা যারা নিয়মিত শারীরিক ক্রিয়াকলাপে নিযুক্ত থাকে, বিশেষত শক্তি প্রশিক্ষণ বা সহনশীলতার ব্যায়াম যারা বেশি করেন, তাদের পেশী মেরামত এবং বৃদ্ধিকে সহায়তা করার জন্য বেশি প্রোটিনের প্রয়োজন হতে পারে ।
গর্ভাবস্থা এবং স্তন্যপানের ক্ষেত্রে : মহিলাদের গর্ভাবস্থা এবং স্তন্যপান করানোর সময়, ভ্রূণের বৃদ্ধি, মাতৃ টিস্যু প্রসারণ এবং দুধ উৎপাদনের জন্য প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পায়, ফলে সেইসময় গুলিতে মহিলাদের স্বাভাবিকের থেকে বেশি প্রোটিনের প্রয়োজন হয় ।
স্বাস্থ্য রক্ষায় : কিছু চিকিৎসার ক্ষেত্রে, যেমন - আঘাত, ক্ষতের নিরামবে, সার্জারি, দীর্ঘস্থায়ী রোগ বা সংক্রমণ, টিস্যু মেরামতির জন্য, ইমিউন ফাংশন এবং বিপাকীয় প্রক্রিয়াগুলিকে সহায়তা করার জন্য
প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পেতে পারে ।
সঠিক প্রোটিন পরিপূরক নির্বাচন করা
সমস্ত প্রোটিন পরিপূরকগুলি সমানভাবে
তৈরী হয় না বা তাদের উৎসও সমান হয় না এবং কিছু প্রোটিন পরিপূরক সবার জন্য উপযুক্ত
নাও হতে পারে । একটি প্রোটিন পরিপূরক নির্বাচন করার সময়ে, প্রোটিনের উৎস, তার
মধ্যে যোগ করা উপাদান এবং স্বতন্ত্র স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করা প্রয়োজন । এখানে
আমরা কিছু জনপ্রিয় প্রোটিনে পরিপূরক এবং তাদের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি সম্পর্কে
সংক্ষেপে আলোচনা করলাম ।
১. হোয়ে প্রোটিন : দুধ থেকে প্রাপ্ত হোয়ে প্রোটিন হলো প্রোটিন পরিপূরকগুলির মধ্যে সবচেয়ে ব্যবহৃত এবং ভালোভাবে গবেষণা করা প্রকারগুলির মধ্যে অন্যতম । এই ধরনের প্রোটিনে সমস্ত প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে এবং এটি শরীর দ্বারা দ্রুত শোষিত হতে পারে । যাই হোক, ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা আছে বা দুগ্ধজাত দ্রব্যে অ্যালার্জি আছে এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই প্রোটিন গ্রহণে অসুবিধা হতে পারে ।
২. কেসিন প্রোটিন : এই ধরনের প্রোটিনও দুধ থেকে উৎপাদিত হয় । কেসিন প্রোটিন হোয়ে
প্রোটিনের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ভাবে ধীরে শোষিত হয় । কিন্তু এটিও পর্যাপ্ত পরিমাণে শরীরে
অ্যামাইনো অ্যাসিডের সরবরাহ করতে সক্ষম । অনেক সময় দ্রুত পেশী মেরামত এবং বৃদ্ধির
জন্য এই প্রোটিনকে অনেকে শোয়ার আগে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন । দুগ্ধজাত দ্রব্যে
অ্যালার্জি আছে বা ল্যাকটো্জ অসহিষ্ণুতার সমস্যা আছে এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই
ধরনের প্রোটিন উপযুক্ত নাও হতে পারে ।
৩. উদ্ভিদ-ভিত্তিক প্রোটিন : নিরামিষাশী
ব্যক্তি বা দুগ্ধজাত দ্রব্যে অ্যালার্জিযুক্ত ব্যক্তিদের জন্যে এই ধরনের প্রোটিন
আদর্শ হতে পারে । উদ্ভিদ ভিত্তিক প্রোটিন পরিপূরকগুলি সাধারণত: সয়াবিন, মটর বা
চালজাতীয় উৎস থেকে উৎপাদিত হতে পারে । এই ধরনের প্রোটিনও সম্পূর্ণ অ্যামাইনো অ্যাসিড
প্রোফাইল সরবরাহ করতে সক্ষম এবং দুগ্ধজাত প্রোটিন বিকল্পগুলির তুলনায় হজম করা
অপেক্ষাকৃত ভাবে সহজ । কিন্তু সয়া প্রোটিনের মতো কিছু প্রোটিনের ক্ষেত্রে
নির্দিষ্ট এবং স্বল্প কিছু মানুষের সংবেদনশীলতা থাকতে পারে ।
এছাড়াও
কোলাজেন প্রোটিনকে একটি প্রোটিন পরিপূরক হিসাবে কেউ কেউ বিবেচনা করেন । কিন্তু মনে
রাখতে হবে যে, কোলাজেন প্রোটিনে অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো অ্যাসিডের মধ্যে বেশ কিছু
অ্যামাইনো অ্যাসিডের অনুপস্থিতি সেখা যায় । ফলে, একে কখনোই প্রোটিনের একটি
সামগ্রিক পরিপূরক হিসাবে বিবেচনা করা ঠিক হবে না ।
ক্ষতিকারক প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট থেকে সতর্ক থাকুন
প্রোটিন পরিপূরকগুলিকে যাথাযথ ভাবে ব্যবহার করলে স্বাসথে্যের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময়েই প্রচুর লাভ প্রদান করতে পারে, তবে সেগুলো ব্যবহারের আগে নির্দিষ্ট ধরনের কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত । এখানে আমরা কিছু সম্পূরকগুলি যথাযথভাবে ব্যবহার করার ফলে স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময় প্রচুর লাভ প্রদান করতে পারে, তবে এগুলো ব্যবহারের আগে নির্দিষ্ট ধরনের কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত । এখানে কিছু বিষয় আলোচনা করা হলো যেগুলি কোন সম্পূরক প্রোটিন ব্যবহারের আগে দেখে নেওয়া দরকার :-
১. অতিরিক্ত সংযোজন : প্রোটিন প্রস্তুতির সময় বেশ কিছু প্রোটিন পরিপূরকে ফিলার/কৃত্রিম মিষ্টি দেহয়া হয় স্বাদের উন্নতির জন্যে, যা প্রোটিনের গুণমানকে কমিয়ে দিতে পারে বা দেয় । শুধু তাই নয়, এইসব অতিরিক্ত উপাদান গুলি শরীর এবং স্বাস্থ্যের উপরে খারাপ প্রভাব ফেলতে সক্ষম এবং দীর্ঘকালীন ব্যবহারের ফলে এগুলি স্বাস্থ্যের জন্যে বিপদ ডেকে আনতে পারে । সুতরাং শুধু স্বাদে মোহিত হয়ে নয়, সত্যিকারের লাভের জন্যে প্রয়োজনে বিস্বাদ প্রোটিন গ্রহণের জন্যে নিজেকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করুন ।
২. অত্যধিক প্রোটিন গ্রহণ : সাধারণভাবে
খাদ্যের মাধ্যমেই হোক অথবা পরিপূরক হিসাবেই হোক, অত্যধিক পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণের
অভ্যাস শরীরের জন্যে খারাপ হতে পারে । কারণ রোজ প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণের
অভ্যাস করলে তা বিপাকের জন্যে কিডনীর উপরে অতিরিক্ত চাপ ফেলতে পারে এবং কিডনীর
ক্ষতি করতে পারে । সুতরাং দৈনিক প্রোটিন গ্রহণের নির্দেশিকা মেনে চলা, শরীরের ওজন
অনুযায়ী কোন ডায়েটেশিয়ান বা মেডিসিন এক্সপার্টৈর তত্ত্বাবধানে এবং তার নির্দেশ
অনুযায়ী প্রোটিন গ্রহণ করা্ উচিত ।
৩. দূষিত বা অনিরাপদ পণ্য : বাজার চলতি প্রোটিন
পরিপূরক গুলিকে উৎপাদনের সময়ে বেশি উৎপাদনের লোভে বা খরচ কম করার তাগিদে
কোম্পানীগুলি সবসময় কড়া গুণমান নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে যায় না । যাতে তারা
অপেক্ষাকৃত কম দামে বাজারে প্রোটিন পরিপূরক সরবরাহ করতে পারে এবং বেশি বিক্রির
মাধ্যমে বেশি মুনাফা অর্জন করতে পারে । ফলে, সেই সমস্ত প্রোটিন পরিপূরকগুলির মধ্যে
ভারী ধাতু, বিভিন্ন কীটনাশক পদার্থ বা বেশ কিছু মাইক্রোবিয়াল উপাদান মিশ্রিত থেকে
যেতে পারে এবং সেগুলি আমাদের শরীরে প্রবেশ করে শরীরের ক্ষতির সম্ভাবনা থেকে যায় ।
সর্বোপরি এই ধরনের পরিপূরকগুলি ক্রমাগত দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে স্বাস্থ্যের জন্য
চরম ক্ষতি ডেকে আনতে পারে । তাই মূল্য নয়, পন্যের গুণমান এবং প্রস্তুতির ব্যাপারে
স্বচ্ছতাকে অগ্রাধিকার দেয় এইরকম কোম্পানীর পন্য পরিপূরক হিসাবে বেছে নেওয়া উচিত ।
প্রোটিনের জন্য প্রস্তাবিত খাদ্য মান (RDA) সাধারণত
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য শরীরের ওজনের প্রতি কিলোগ্রামে প্রায় 0.8 গ্রাম, বিশেষ
বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত প্রোটিনের চাহিদা পরিবর্তিত হতেও পারে। প্রতিদিনের
প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতাকে ধরে রাখার
জন্যে প্রতিদিন সুষম খাদ্য গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ,
যাতে উপযুক্ত প্রোটিনের উৎস গুলিকে
ব্যবহার করা উচিত । প্রোটিনের অভাব হলে প্রোটিন পরিপূরকগুলি প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে একটি কার্যকর
উপায় হতে পারে । কিন্তু সেগুলি ব্যবহারের আগে বুদ্ধিমত্তার সাথে সেগুলিকে নির্বাচন
করা এবং গুণমানের অগ্রাধিকার দেওয়া একটি অপরিহার্য বিষয় । আর তার জন্যে প্রয়োজন
হলে কোন নিউট্রিশন বিশেষজ্ঞ বা ডায়েটেশিয়ানের পরামর্শ নেওয়া উচিত । প্রয়োজনে তার পরামর্শ
অনুযায়ী তার করে দেওয়া খাদ্য চার্ট অনুসরণ করা উচিত । কারণ মনে রাখতে হবে কোন কোন
ক্ষেত্রে কোন একজন ব্যক্তির বয়স, পেশা, জীবনপ্রণালী, খাদ্যতালিকাগত পছন্দ-অপছন্দ,
সহিষ্ণুতা-অসহিষ্ণুতা ইত্যাদি বিভিন্ন
দিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে ।
0 মন্তব্যসমূহ