Advertisement 90 x 728

প্রোটিন কলা শেক রেসিপি : সুস্বাদু উপায়ে ফিটনেস ও শক্তি অর্জন

প্রোটিন কলা শেকের সঙ্গে শুরু হোক আপনার দিন ! সহজ রেসিপি, অবিশ্বাস্য পুষ্টিগুণ, শক্তি বৃদ্ধি ও পেশী গঠনের এই পানীয় সম্পর্কে জানুন সবকিছু। জেনে নিন কেন এটি আপনার ফিটনেস রুটিনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়া উচিত এবং কীভাবে বানাবেন ঘরেই।

ঘরোয়া প্রোটিন কলা শেক রেসিপি

প্রোটিন কলা শেক : সুস্বাদু উপায়ে ফিটনেস ও শক্তি অর্জন

হ্যালো বন্ধুরা ! আমার ব্লগের রেসিপি বিভাগে আপনাদের স্বাগত ! আজ আমরা আলোচনা করতে চলেছি এমন একটি পানীয় নিয়ে, যা শুধুমাত্র আপনার জিভে জল আনার মতো স্বাদই এনে দেবে না, উপরন্তু আপনার শরীরে এনে দেবে পুষ্টির ভান্ডার আর সঙ্গে অফুরন্ত শক্তি । হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন আমরা কথা বলতে চলেছি প্রোটিন আর কলা দিয়ে তৈরী এক অসাধারণ শেকের বিষয়ে । এই ব্লগ পোস্টের মধ্যে এই শেক বানানোর সহজ পদ্ধতি থেকে শুরু করে, তার গুণাগুণ এবং আপনার মনে আসা বিভিন্ন রকম সম্ভাব্য প্রশ্নের উত্তর – সবকিছুই আলোচনা করবো । আশা করবো, এই পোস্টটি পড়ার পরে আপনি এই শেকটিকে আপনার দৈনিক জীবনের একটি অংশ করে নিতে পারবেন ।

কলা কেন? প্রোটিনের সঙ্গে নিখুঁত এই জুটি বাঁধার রহস্য

আমরা অনেকেই নিয়মিত প্রোটিন শেক খেয়ে থাকি, কিন্তু সেটিতে কলা যোগ করার পিছনে কি কোনও বিশেষ কারণ আছে? আসলে কলা শুধুমাত্র স্বাদের জন্যেই যোগ করা হয় না, এটি প্রোটিন শেককে পুষ্টির একটি পাওয়ার হাউসে পরিণত করে তোলে ।

কলার পুষ্টি বৈশিষ্ট্য :

একটি মাঝারি আকারের পাকা কলায় আপনি যা যা পেতে পারেন -

  • শর্করা : প্রাকৃতিক গ্লুকোজ, ফ্রুকটোজ এবং সুক্রোজ, যা অত্যন্ত দ্রুত শক্তি সরবরাহ করতে পারে ।
  • ফাইবার উপাদান : এই পুষ্টি উপাদানটি আমাদের হজম ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে ।
  • পটাশিয়াম : রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষা এবং পেশীর কর্মক্ষমতা বাড়াতে পটাশিয়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় ।
  • ভিটামিন বি- : এই ভিটামিনটি মস্তিষ্কের উন্নতি, ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং শরীরে রক্ত কণিকার পরিমাণ বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে ।  
  • ভিটামিন সি : শরীরের কোলাজেন বৃদ্ধির পাশাপাশি এটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট হিসাবেও কাজ করে এবং সেইসঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি বাড়াতে ভূমিকা নেয় ।
  • অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট : এর মধ্যে ডোপামিন ও ক্যাটেচিনের মতো অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে, যারা যারা কোষের মধ্যেকার অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের প্রকোপ থেকে কোষকে বাঁচাতে ভূমিকা নেয় ।

প্রোটিনের সঙ্গে কলা যোগ করার সুবিধা :

১) দ্রুত শক্তি : ওয়ার্কআউটের আগে বা পরে এই শেক খেলে কলার প্রাকৃতিক শর্করা দ্রুত শক্তি জোগায় এবং প্রোটিন পেশী মেরামত করে।

২) স্বাদ গঠন : কলা শেকটিকে ক্রিমি এবং প্রাকৃতিক মিষ্টি স্বাদ প্রদান করে, যার জন্যে মিষ্টি স্বাদ আনার জন্যে অতিরিক্ত চিনি যোগ না করলেও চলে ।

৩) সুষম পুষ্টি : এটি শেকটিকে শুধু প্রোটিন নয়, বরং কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার উপাদান, ভিটামিন ও মিনারেলের একটি আদর্শ সংমিশ্রণ তৈরি করে তোলে ।

৪) পাচনে সাহায্য : কলার ফাইবার উপাদান প্রোটিনের পাচন প্রক্রিয়াকে মসৃণ করতে সাহায্য করতে পারে।

প্রোটিন কলা শেক বানানোর সম্পূর্ণ রেসিপি

এই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর শেকটি বানানো অত্যন্ত সহজ । মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আপনি এটি তৈরী করে ফেলতে পারেন ।

প্রয়োজনীয় উপকরণ সমূহ (এক জনের জন্য) :

  • একটি (১টি) মাঝারি আকারের পাকা কলা (যত পাকা হবে, শেক তত মিষ্টি ও সুস্বাদু হবে)
  • এক (১)স্কুপ প্রোটিন পাউডার (আপনার পছন্দের ফ্লেভার - চকোলেট, ভ্যানিলা বা ওটমিল স্বাদ ভালো যায়)
  • এক (১) কাপ তরল (দুধ, বাদাম দুধ, ওটস মিল্ক ইত্যাদি)
  • এক (১) টেবিল চামচ চিনাবাদামের মাখন বা অন্য কোনও নাট বাটার (অতিরিক্ত প্রোটিন ও স্বাদের জন্য)
  • অর্ধেক (১/২) চা চামচ মধু বা খেজুর (ঐচ্ছিক, যদি আরও মিষ্টি দরকার হয়)
  • চার থেকে পাঁচ (৪-৫)টি বরফের টুকরো (ঐচ্ছিক, ঠান্ডা শেকের জন্য)

বানানোর পদ্ধতি :

১) প্রস্তুতি : প্রথমে কলার খোসা ছাড়িয়ে ছোট ছোট টুকরো করে নিন। যদি খুব ঠান্ডা শেক পছন্দ করেন, তাহলে কলার টুকরোগুলো ১০-১৫ মিনিট ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে নিতে পারেন ।

২) ব্লেন্ডারে যোগ করা : একটি ব্লেন্ডার জারে প্রথমে তরল (দুধ) নিন। তারপর কলার টুকরো, কিছুটা প্রোটিন পাউডার এবং পিনাট বাটার এবং অল্প পরিমাণ মধু (যদি অতিরিক্ত মিষ্টি স্বাদ চান) যোগ করে নিন ।

৩) ব্লেন্ড করা : সব উপকরণ যোগ করার পর ব্লেন্ডারের ঢাকনা ভালো করে বন্ধ করে দিন। এবার উচ্চ গতিতে ৩০-৪৫ সেকেন্ড ধরে ব্লেন্ড করুন, যতক্ষণ না মিশ্রণটি সম্পূর্ণ মসৃণ ও ফেনাযুক্ত হয়ে যায় ।

৪) পরিবেশন : ব্লেন্ড করা হয়ে গেলে একটি গ্লাসে শেকটি ঢেলে নিন। উপরে কলার কিছু টুকরো বা এক চিমটি দারচিনি গুঁড়ো ছড়িয়ে দিলে দেখতে আরও আকর্ষণীয় হবে। তাজা অবস্থায় এই শেক পরিবেশন করুন এবং উপভোগ করুন !

কুইনোয়া রান্নার রহস্য : কুইনোয়া রান্নার সহজ ও সম্পূর্ণ গাইড 

প্রোটিন কলা শেকের উপকারিতা : কেন আপনার দৈনিক ডায়েটে এটিকে  রাখা উচিত ?

কলা শুধুমাত্র স্বাদের জন্যেই যোগ করা হয় না, এটি প্রোটিন শেককে পুষ্টির একটি পাওয়ার হাউসে পরিণত করে তোলে । প্রোটিনের লাভের সঙ্গে সঙ্গে এটি অন্যান্য পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে এবং প্রোটিন শেকের স্বাদ উন্নত করে তোলে ।

ওয়ার্কআউটের আগে পরে আদর্শ পানীয়

ওয়ার্কআউটের প্রায় ৩০-৪৫ মিনিট আগে এই শেক খেলে কলার কার্বোহাইড্রেট থেকে আপনি তাৎক্ষণিক শক্তি পাবেন। আর ওয়ার্কআউটের পর ১ ঘন্টার মধ্যে এটি খেলে প্রোটিন পেশী পুনর্গঠনে সাহায্য করবে এবং কলার পটাশিয়াম পেশী ক্লান্তি দূর করবে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

উচ্চ ফাইবার উপাদান ও প্রোটিন সমৃদ্ধ এই শেকটি অনেকক্ষণ পেট ভরার অনুভূতি দেয়, যা অস্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্স খাওয়ার প্রবণতা কমায়। এটি একটি পুষ্টিকর且 কম ক্যালোরির স্ন্যাক্স হিসেবে কাজ করতে পারে।

হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো

কলায় থাকা উচ্চ মাত্রার পটাশিয়াম এবং কম সোডিয়াম হৃদযন্ত্রের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কম করতে সাহায্য করে ।

 

প্রায়শ:ই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ’s)

) কোন ধরনের প্রোটিন পাউডার ব্যবহার করা ভালো? 

উত্তর ) : কোন ধরনের প্রোটিন পাউডার ব্যবহার করবেন এটা বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে, যেমন – আপনার স্বাস্থ্যগত চাহিদা, ব্যক্তিগত পছন্দ, কোন অ্যালার্জির সমস্যা আছে কিনা ইত্যাদি । যদিও দেখা যায় হোয়ে প্রোটিন তাড়াতাড়ি শোষিত হয় এবং ওয়ার্কআউটের পরে আদর্শ । কেসিন প্রোটিন অপেক্ষাকৃত ধীরে শোষিত হয়, তাই এটি রাতে খেতে পারেন । পি-প্রোটিন, সয়া প্রোটিন ইত্যাদি উদ্ভিদ-ভিত্তিক প্রোটিন ভেগানদের জন্যে ভালো বিকল্প হতে পারে ।

) আমি ল্যাক্টোজ অসহিষ্ণু, কি ধরনের দুধ ব্যবহার করব? 

উত্তর ) : আপনি সহজেই গরুর দুধের বদলে বাদাম দুধ (আমন্ড মিল্ক), ওট মিল্ক, সয়া মিল্ক বা নারকেলের দুধ ব্যবহার করতে পারেন। এগুলোতেও শেক খুবই সুস্বাদু হবে।

) এই শেক কি ওজন বাড়াতে সাহায্য করে? 

উত্তর ) : হ্যাঁ, এটি ওজন বাড়ানোর (বুল্কিং) জন্য একটি কার্যকরী উপায়, বিশেষ করে যদি আপনি বেশি ক্যালোরির লক্ষ্য নিয়ে থাকেন। তখন একটু বেশি কলা, ওটস, বা একটু বেশি নাট বাটার যোগ করতে পারেন। আবার, ওজন কমানোর জন্যেও এটি ভালো, শেকে শুধু ক্যালোরির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

) শেকটি কতক্ষণ পর্যন্ত ফ্রিজে রাখা যাবে? 

উত্তর ) : এই শেকটি তাজা অবস্থায় পান করাই সবচেয়ে ভালো। তবে প্রয়োজন হলে এয়ারটাইট কন্টেইনারে রেখে ২৪ ঘন্টার মধ্যে পান করা যেতে পারে। এর বেশি সময় রাখলে কলার রং বাদামি হয়ে যেতে পারে এবং পুষ্টিগুণ কিছুটা কমে যেতে পারে।

) কলা ছাড়া অন্য কোন ফল দিয়ে প্রোটিন শেক বানানো যাবে? 

উত্তর ) : অবশ্যই! বেরি (স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি), আম, বা পিচের মতো ফল দিয়েও চমৎকার প্রোটিন শেক বানানো যায়। তবে কলার মতো ক্রিমি টেক্সচার পেতে চাইলে আভোকাডো বা গ্রিক দই ব্যবহার করতে পারেন।

) শিশুদের জন্য এই শেক কি নিরাপদ

উত্তর ) : সাধারণভাবে, এটি শিশুদের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর। তবে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যে শিশুর কলা বা অন্যান্য উপকরণে অ্যালার্জি নেই। প্রোটিন পাউডার ব্যবহারের আগে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ তাদের দেহে প্রোটিনের চাহিদা আলাদা।

 

সব শেষে .....

প্রোটিন কলা শেক কেবল একটি পানীয় নয়, এটি আপনার দৈনন্দিন ব্যস্ত জীবনযাপনে একটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস। এটি বানানো সহজ, খরচও কম, কিন্তু এর উপকারিতা অনেক বেশি। ফিটনেসের লক্ষ্য যাই হোক না কেন—ওজন কমানো, পেশী গঠন, বা শুধুই সুস্থ থাকা—এই শেকটি আপনাকে সঠিক পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। তাহলে আর দেরি কেন? আজই বানিয়ে ফেলুন এই মজাদার ও স্বাস্থ্যকর প্রোটিন কলা শেক, এবং আপনার ফিটনেস যাত্রাকে করে তুলুন আরো উপভোগ্য ।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ