স্পিরুলিনা : একটি আশ্চর্য জলজ শৈবাল

 

স্পিরুলিনা নামটা শুনে কি আপনি চমকে উঠলেন বা আশ্চর্য হলেন ? আপনার মনে কি প্রশ্ন এলো এটা আবার কি? তাহলে জেনে রাখুন, স্পিরুলিনা একটি নীলাভ-সবুজ শৈবাল বিশেষ । মূলত: ল্যাটিন শব্দ Spira থেকে এর নামকরণ হয়েছে । যার মানে হলো সর্পিলাকার বা প্যাঁচানো । আজকের দিনে স্পিরুলিনা সুপারফুড হিসাবে একটি অতি পরিচিত নাম । আসুন আমরা এই ব্লগ পোস্টে স্পিরুলিনা সম্পর্কে কিছু তথ্য যেমন – স্পিরুলিনা কিসের জন্য ভালো, মহিলাদের জন্য স্পিরুলিনার উপকারিতা, ওজন কমানোর জন্যে স্পিরুলিনা, কুকুরের জন্যে স্পিরুলিনার উপকারিতা এবং স্পিরুলিনা বনাম মরিঙ্গার মধ্যে তুলনার মতো বিষয়গুলো তথ্য মারফত জেনে নিই ।  

স্পিরুলিনা কিসের জন্য ভালো ?

স্পিরুলিনা হল একটি নীল-সবুজ শৈবাল এবং এর মধ্যে ঘনীভূত পুষ্টি-উপাদানের জন্যে এক বিস্ময়ের সৃষ্টি করে । আর এর মধ্যে পুষ্টি-উপাদানের এই ঘনীভূত সম্ভারের জন্যেই এটি আজ সমগ্র বিশ্ববাসীর মধ্যে যারা স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন এবং প্রকৃতিক উপায়ে স্বাস্থ্য-রক্ষার কথা ভাবছেন তাদের কাছে এক অন্যতম আকর্যণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে । আর এই পুষ্টি-উপাদানের ঘনীভূত সম্ভারের জন্যে স্পিরুলিনা আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে অসাধারণ কিছু সুবিধা প্রদান করতে পারে, যা আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য-রক্ষা এবং স্বাস্থ্য-উন্নতিতে প্রভূত লাভ দিতে পারে । আসুন আমরা সেইরকম কিছু স্বাস্থ্য-লাভের কথা জেনে নিই ।

১) পুষ্টি-উপাদানে সমৃদ্ধ – স্পিরুলিনা সহজপাচ্য প্রোটিন, বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কিছু ভিটামিন (বি১, বি২, বি৩), আয়রন এবং ম্যাগনেশিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ এবং বেশ কিছু সক্রিয় জৈব যৌগ তথা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টে সমৃদ্ধ । যারা আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য-রক্ষা বা স্বাস্থ্য-উন্নতিতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তারকারী ।

২) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় – স্পিরুলিনার উচ্চ অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট সামগ্রী (বিশেষত: ফাইকোসায়ানিন) এবং অন্যান্য উপাদান সামগ্রী আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলে এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে ।

৩) হার্টের যত্ন নিতে সাহায্য করে – স্পিরুলিনার মধ্যে বিদ্যমান পুষ্টি-উপাদান সামগ্রী খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের (HDL) অনুপাত বাড়ায়, ফলে সামগ্রিক ভাবে হার্ট ভালো থাকে এবং কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেমের কার্যকারিতার উন্নতি ঘটে ।

৪) শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে – স্পিরুলিনার মধ্যে প্রচুর আয়রন এবং বি-ভিটামিনের সহাবস্থান দেখা যায়, যার ফলে যারা অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতায় ভুগছেন বা দুর্বলতা বোধ করছেন, তাদের জন্যে একটি প্রাকৃতিক শক্তি-বৃদ্ধিকারী উপাদান হিসাবে কার্যকরী রূপে কাজ করে শক্তির স্তর বাড়াতে সাহায্য করে ।

৫) ডি-টক্সিফাই করতে সাহায্য করে – স্পিরুলিনার মধ্যে বিদ্যমান সক্রিয় ক্লোরোফিল আমাদের শরীর থেকে ভারী ধাতু এবং টক্সিনগুলিকে ডি-টক্সিফাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিষ্কার করতে সহায়ক হয় । ফলে, বিভিন্ন দীর্ঘকালীন শারীরিক সমস্যা থেকে দূরে থাকা যায় এবং শরীরকে সামগ্রিকভাবে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে ।

মহিলাদের জন্য স্পিরুলিনার উপকারিতা

নিজেদের স্বাস্থ্য-রক্ষা এবং সুদূরপ্রসারী স্বাস্থ্য-অসুবিধা এড়াতে চাওয়া মহিলাদের জন্যে স্পিরুলিনা স্বাস্থ্য-ক্ষেত্রে অসংখ্য সুবিধা প্রদান করতে পারে । তার মধ্যে কিছু এখানে আলোচনা করা হলো –

১) পুষ্টি-উপাদানে সমৃদ্ধ – স্পিরুলিনাতে পাওয়া প্রোটিনের মধ্যে প্রয়োজণীয় নয়টি অ্যামইনো অ্যাসিডই বিদ্যমান থাকে, যা এটিকে একটি সম্পূর্ণ প্রোটিনের উৎস হিসাবে তুলে ধরে ।

স্পিরুলিনায় প্রচুর পরিমাণে বি-ভিটামিন (বিশেষত: বি১২) উপস্থিত থাকে । তাছাড়াও এটিতে থাকে আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম এবং ম্যাঙ্গানীজের মতো খনিজ পদার্থ ।

স্পিরুলিনাতে ফাইকোসায়ানিন এবং বিটা-ক্যারোটিনের মতো শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় ।

২) হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা এবং পিরিয়ডের ক্ষেত্রে – স্পিরুলিনা তার পুষ্টি-উপাদানের সমৃদ্ধতার কারণে মহিলাদের ক্ষেত্রে হরমোনের হরমোনের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় । যা মহিলাদের ক্ষেত্রে জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় ।

পিরিয়ডের দরুণ রক্তের ক্ষয়ের কারণ মহিলাদের জন্যে একটি উদ্বেগের বিষয় । স্পিরুলিনার আয়রন উপাদানের প্রাচুর্যের জন্যে আয়রনের ঘাটতি মোকাবিলায় এটি দারুণভাবে সাহায্য করতে পারে ।

তাছাড়াও স্পিরুলিনা মহিলাদের ক্ষেত্রে মেনোপজ জনিত সমস্যা বা তার লক্ষণগুলিকে, যেমন – মেজাজের পরিবর্তন, প্রদাহ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করার ক্ষমতা রাখে ।

৩) ক্লান্তির সমস্যা কমায় বা শক্তি বাড়ায় – প্রায়শ:ই মহিলারা তাদের ব্যস্ত সময়সূচী, হরমোনের ওঠানামা বা পুষ্টির ফাঁকের কারণে ক্লান্তি বা দুর্বলতা বোধ করেন । স্পিরুলিনার পুষ্টি-উপাদানের ঘনত্ব, বিশেষ করে এর বি-ভিটামিনগুলি, আয়রন এবং প্রোটিন মহিলাদের ক্ষেত্রে শক্তির মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে । বিশেষত: যেসব মহিলার রক্তাল্পতার লক্ষণ আছে বা যার পিরিয়ডের মাত্রা খুব বেশি তাদের ক্ষেত্রে স্পিরুলিনার উচ্চ আয়রনের মাত্রা বিশেষ উপকারী হতে পারে ।

৪) ত্বকের উন্নতি ঘটায় – স্পিরুলিনা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট এবং প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ, যারা ত্বকের ফ্রি-র‌্যাডিক্যালগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং বার্ধক্যজনিত লক্ষণগুলি যেমন- বলিরেখা এবং বয়সজনিত দাগগুলিকে কমাতে সাহায্য করে এবং ত্বকের স্বাস্থ্যের সামগ্রিক উন্নতি ঘটায় । 

৫) ইমিউন সিস্টেমের উন্নতি ঘটায় – স্পিরুলিনার পুষ্টি-উপাদানগুলির ঘনত্ব এবং তার শ্বেত রক্তকণিকার উৎপাদন বৃদ্ধি করার গুণের জন্যে এটি সাধারণ ভাবে ইমিউন সিস্টেমের উন্নতি ঘটায় ।

৬) ওজন নিয়ন্ত্রণে – স্পিরুলিনায় বিদ্যমান উচ্চমানের প্রোটিন এবং পুষ্টি-উপাদানের ঘনত্বের কারণে এটি উদর পূর্তির অনুভূতি দিয়ে ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে । অন্যদিকে এর প্রোটিনের উচ্চমানের অ্যামাইনো অ্যাসিডগুলি পেশী বৃদ্ধি এবং পেশীর সক্রিয়তা পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে, যা সক্রিয় মহিলাদের জন্য উপকারী হয়ে উঠতে পারে ।

৭) হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় – বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, মহিলাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে অস্টিওপরোসিসের প্রবণতা দেখা যায় । শক্তিশালী হাড় বজায় রাখার জন্যে দুটি খনিজ উপাদানের সরবরাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । আর স্পিরুলিনায় সেই দুটি খনিজ উপাদান, অর্থাৎ ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের উপিস্থিতি লক্ষ্য করা যায় । সুতরাং যেকোন মহিলার ক্ষেত্রে হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্যে স্পিরুলিনা অত্যন্ত কার্যকরী হয়ে উঠতে পারে ।

৮) গর্ভাবস্থা এবং প্রসবোত্তর পরিস্থিতিতে – স্পিরুলিনার উচ্চ প্রোটিন উপাদান এবং অন্যান্য পুষ্টি-উপাদানের ঘনত্ব গর্ভবতী মহিার ক্ষেত্রে বা প্রসবোত্তর পরিস্থিতিতে স্তন্যপান করানো মহিলাদের ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত মূল্যবান খাদ্য-সম্পূর হয়ে উঠতে পারে । তবে এইসব ক্ষেত্রগুলিতে স্পিরুলিনা প্রয়োগের আগে অবশ্যই একজন পেশাদার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী বা পেশাদার ডায়েটেশিয়ানের পরামর্শ নেওয়া উচিত । 

 ওজন কমানোর জন্য স্পিরুলিনা

যদি কেউ ওজন কমানোর জন্যে বা ওজন নিয়ন্ত্রণের কথা ভাবেন, তাহলে কম ক্যালোরি যুক্ত, একটি পুষ্টি-উপাদান ঘন খাদ্য সম্পূরক হিসাবে স্পিরুলিনা অবশ্যই তাকে সাহায্য করতে পারে ।

১) পুষ্টির ঘনত্ব : স্পিরুলিনা কম ক্যালোরিযুক্ত উচ্চ মানের প্রোটিন সরবরাহ করে । সুতরাং ওজন কমানো বা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য স্পিরুলিনা দারুণভাবে সাহায্য করতে পারে বা ডায়েটে এর সংযোজনকে মূল্যবান করে তোলে ।

২) ক্ষুধা দমন : এর প্রোটিনের উচ্চমানের অ্যামাইনো অ্যাসিডগুলি পেশী বৃদ্ধি এবং পেশীর সক্রিয়তা পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে । তাছাড়া স্পিরুলিনা উদরপূর্তির অনুভব করিয়ে ক্ষুধা দমন করতে, ক্যালোরি গ্রহণ কমাতে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে।

৩) মেটাবলিজম বৃদ্ধি : স্পিরুলিনার পুষ্টি-উপাদানের ঘনত্ব শরীরের মেটাবলিক ফাংশনকে উন্নত করতে সাহায্য করে । ফলে, শরীরের ক্যালোরি বার্নিংয়ের সাথে সাথে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের চর্বির পরিমাণকেও কমাতে সাহায্য করে ।

কুকুরের জন্য স্পিরুলিনা

স্পিরুলিনা উপকারিতা কিন্তু শুধু মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, আমাদের বাড়ির পোষ্য বা লোমশ বন্ধুরাও এর সাহায্য পেতে পারে । আর এর জন্য বর্তমানে কুকুরের জন্য পাওয়া খাদ্য সম্পূরক গুলির মধ্যে স্পিরুলিনা সংযোজিত বিভিন্ন খাদ্য সম্পূরক পাওয়া যাচ্ছে ।

১) ইমিউন ফাংশন বাড়ায় :  একটি খাদ্য সম্পূরক হিসাবে স্পিরুলিনা ভিটামিন এ এবং সি সহ উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খনিজ দ্রব্য সরবরাহ করে । আর এইসব পুষ্টি্-উপাদাগুলির কারণে এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী বৈশিষ্ট্যের জন্য স্পিুলিনা সু-পরিচিত ।

২) হজমের উন্নতি ঘটায় : স্পিরুলিনা ক্লোরোফিল এবং পাচক এনজাইমগুলির সরবরাহকারী হিসাবে একটি ভালো উৎস হয়ে উঠতে পারে । যারা অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতির সাথে সাথে পুষ্টি-উপাদানের শোষণে সাহায্য করতে পারে । ফুলে যাওয়া বা ডায়রিয়ার মতো হজম সংক্রান্ত সমস্যায় আক্রান্ত কুকুরদের জন্য এটি বিশেষভাবে সহায়ক হতে পারে ।

৩) ত্বকের উন্নতি ঘটায় : স্পিরুলিনায় ভিটামিন, খনিজ এবং ফ্যাটি অ্যাসিডের সমৃদ্ধ সমন্বয় কুকুরের ত্বক এবং তার লোমশ আবরণের উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে । ফলে, অ্যালার্জি বা ত্বকের সংবেদনশীলতায় ভোগা কুকুরের জন্য সাহায্য করে এবং এর চুলকানি কমাতে, ত্বকের শুষ্ক ভাব কমাতে এবং একটি নরম লোমশ শরীর পেতে সাহায্য করে ।

৪) শক্তির মাত্রা বাড়ায় : একটি সক্রিয় বা বয়স্ক কুকুরের জন্য সম্পূরক হিসাবে স্পিরুলিনা জীবনীশক্তির প্রয়োজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারে । স্পিরুলিনার উচ্চ মানের প্রোটিন সামগ্রী্ এর পেশী ভর বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং প্রাকৃতিকভাবে শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারে ।

৫) ডিটক্সিফিকেশন : স্পিরুলিনার মধ্যে বিদ্যমান সক্রিয় ক্লোরোকিল থাকে, যার ফলে এর মধ্যে ডিটক্সিফাইং বৈশিষ্ট্য দেখতে পাওয়া যায়, যা আমাদের আদরের কুকুরের শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে এবং তাকে সামগ্রিকভাবে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে ।

কিন্তু অবশ্যই আপনার কুকুরের ডায়েটে স্পিরুলিনা যোগ করার আগে, এটি আপনার পোষা প্রাণীর নির্দিষ্ট চাহিদার জন্য নিরাপদ এবং উপযুক্ত কিনা জানতে তার জন্যে সঠিক ডোজ নির্ধারণ করতে একজন পশুচিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া অপরিহার্য ।

স্পিরুলিনা বনাম মরিঙ্গা 

মোরিঙ্গা, যাকে প্রায়শ:ই "ড্রামস্টিক ট্রি" বা "অলৌকিক গাছ" বলা হয়ে থাকে এবং স্পিরুলিনার মতোই এটিও তার পুষ্টি-উপাদানে সমৃদ্ধতার জন্যে সুপরিচিত । মোরিঙ্গার মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে ভিটামিন এ, সি, ই এবং ক্যালসিয়াম এবং পটাশিয়াম থাকে । তার সঙ্গে মোরিঙ্গায় আইসোথিওসায়ানেট নামক বিশেষ সক্রিয় জৈব যৌগ থাকে, যা প্রদাহ কমাতে এবং বাত বা দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা কমানোর জন্য দারুণ কাজ করে । তাছাড়া মোরিঙ্গা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, ত্বক উজ্জ্বল রাখতে এবং চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে, হজমে সহায়তা করে এবং অন্ত্রের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে । কিন্তু সুপারফুড হিসাবে স্পিরুলিনার কিছু বিশেষত্ব আছে, আবার মোরিঙ্গার ক্ষেত্রেও কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে । আসুন, আমরা কিছু তথ্যের মাধ্যমে দেখে নিই এদের দু’জনের মধ্যে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই হলে কি দাঁড়ায় :-

 স্পিরুলিনা বনাম মরিঙ্গা

বিভাগ	স্পিরুলিনা	মোরিঙ্গা
উৎস	নীলাভ-সবুজ রঙের শ্যাওলা, লবণাক্ত জলে বা মিষ্টি জলে পাওয়া যায়	মোরিঙ্গা ওলিফেরা নামক গাছের পাতা, বীজ এবং শুটিকে এর উৎস বলা যেতে পারে
চেহারা	ঘন সবুজ রঙের, গুঁড়ো, ট্যাবলেট বা ক্যাপসুলের আকারে পাওয়া যেতে পারে	সামান্য হালকা সবুজ রঙের, গুঁড়ো, ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল আকারে উপলব্ধ
পুষ্টি-উপাদানের বৈশিষ্ট্য	(i) উচ্চ পরিমান প্রোটিন দ্বারা সমৃদ্ধ (প্রায় ৬০-৭০% পর্যন্ত) (ii) ভিটামিন বি সমৃদ্ধ, বিশেষ করে ভিটামিন বি-১২ প্রচুর পরিমাণে থাকে (iii) আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ দ্বারা সমৃদ্ধ (iv) ফাইকোসায়ানিন নামক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়	(i) ভিটামিন এ, সি , ই -দ্বারা সমৃদ্ধ। (ii) ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং পটাসিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে (iii) নয়টি প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিডের সব ক’টি পাওয়া যায় (iv) কোয়ারসেটিনের মতো উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট পাওয়া যায়
ক্যালোরি (প্রতি ১০ গ্রামে)	২৯ কিলোক্যালোরি	৩০ কিলোক্যালোরি
প্রোটিন (প্রতি ১০ গ্রামে)	৫.৭  গ্রাম	২.৮ গ্রাম
আয়রন	২ মিলি.গ্রাম	৩ মিলি.গ্রাম
অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট বৈশিষ্ট্য	ফাইকোসায়ানিন এবং ক্লোরোফিল অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট হিসাবে ডিটক্সিফিকেশন এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য প্রদান করে	কোয়ারসেটিন এবং ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড ফ্ল্যাভোনয়েড এবং ফেনোলিক যৌগের সুবিধা প্রদান করে
ফ্যাট কন্টেন্ট	খুবই কম পরিমাণে বিদ্যমান, প্রাথমিকভাবে পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়	খুবই কম, অত্যন্ত নগণ্য পরিমাণে ফ্যাট পাওয়া যায়
ফাইবার কন্টেন্ট	পরিমাণে কম পাওয়া যায়  (প্রতি ১০ গ্রামে প্রায় ০.৩ গ্রাম)	মাঝারি পরিমাণে পাওয়া যায় (প্রতি ১০ গ্রামে প্রায় ২.৫ গ্রাম)
ব্যবহার	(i) স্মুদি, জুস বা জলে মিশ্রিত করা যায় বা স্প্রেডার হিসাবে ব্যবহার করা যায় (ii) এনার্জি বার বা স্ন্যাকসে মেশানো যেতে পারে	(i) স্যুপ, চা, তরকারি এবং স্মুদিতে ব্যবহার করা যায় (ii) বেকড খাবার বা স্যালাডে যোগ করা যেতে পারে
স্বাদ	সামান্য সামুদ্রিক মাছের মত গন্ধযুক্ত, মাটির স্বাদের মতো	সামান্য ঘাসের মতো স্বাদ যুক্ত বা পালং শাকের মতো
প্রাপ্যতা	সহজ প্রাপ্য নয়, সাধারণত: স্বাস্থ্য-পণ্য দ্রব্য দোকানে পাউডার, ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল হিসাবে বিক্রি হয়	সহজলভ্য, বাজারে সবজি হিসাবে বিক্রি হয় এবং পাউডার বা ক্যাপসুল আকারে ব্যাপকভাবে পাওয়া যায়, কখনও কখনও চা হিসাবেও পাওয়া যায়
কাদের জন্য সেরা	(i) ক্রীড়াবিদ এবং বডি বিল্ডার (উচ্চ প্রোটিন হিসাবে) (ii) শরীর ডি-টক্সিফাইংয়ে উৎসাহী (iii) নিরামিষাসীদের ভিটামিন বি-১২ পরিপূরক হিসাবে	(i) সাধারণ স্বাস্থ্য রক্ষণাবেক্ষণে উৎসাহী (ii) ত্বক ও চুলের যত্নতে উৎসাহী (iii) যেসব মানুষ উচ্চ-অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট যুক্ত খাবার খোঁজেন
বিশেষ উপকারিতা	(i) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় (ii) শরীরে বিদ্যমান ভারী ধাতুকে ডিটক্সিফাই করে (iii) কোলেস্টেরল এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখে (iv) চোখ এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য বজায়ে সাহায্য করে	(i) হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় বজায় রাখতে সাহায্য করে (ii) ত্বক এবং চুলের গুণমান উন্নত করে (iii) প্রদাহ এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে ভূমিকা নিতে পারে (iv) হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়

 

মরিঙ্গা বা স্পিরুলিনা কোনটি ভালো ? এই প্রশ্নের উত্তর আসলে আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্য বিষয়ে আমাদের লক্ষ্যের উপরে নির্ভর করে ।  

• যদি কেউ একটি প্রোটিন সমৃদ্ধ, শক্তি-বর্ধক সুপারফুড খোঁজেন, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সঙ্গে সঙ্গে হৃৎপিন্ডের রক্ষণাবেক্ষণ করবে, তাহলে স্পিরুলিনা সঠিক পছন্দ হিসাবে স্পিরলিনাকে বেছে নিতে পারেন ।

• যদি কেউ রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখা, শরীরের প্রদাহ কমাতে এবং ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে চান তাহলে তিনি মোরিঙ্গা বেছে নিতে পারেন ।

আবার, সকালের স্মুদিতে স্পিরুলিনা যোগ করে সন্ধ্যায় মরিঙ্গা চা পান করে আপনার স্বাস্থ্যের জন্যে স্পিরুলিনা এবং মরিঙ্গার উভয়ের সেরা সুবিধা নিতে পারেন ।

কার স্পিরুলিনা নেওয়া উচিত নয়

যদিও স্পিরুলিনা স্বাস্থ্যক্ষেত্রে অসংখ্য উপকারিতা প্রদান করে, কিন্তু তবুও কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তির ক্ষেত্রে এটি ব্যবহারের পূর্বে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত বা সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলা উচিত -

১) অ্যালার্জি - যাদের সামুদ্রিক খাবার বা আয়োডিনের প্রতি অ্যালার্জি রয়েছে তারা স্পিরুলিনা ব্যবহার করলে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া অনুভব করতে পারেন ।

২) অটোইমিউন ডিসঅর্ডার – যেসব ব্যক্তি কোনরকম অটোইমিউন সমস্যায় ভুগছেন, তাদের স্পিরুলিনা ব্যবহার করার আগে অবশ্যই একজন স্বা্স্থ্যসেবা পেশাদারের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত, কারণ এটি শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে উদ্দীপিত করতে পারে ।

৩) ফেনাইলকেটোনুরিয়া (PKU) - স্পিরুলিনায় ফেনাইল্যালানিন নামক অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে, যা ফেনাইলকেটোনুরিয়া (PKU)-য়ের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরী করতে পারে, সুতরাং কোন পেশাদার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর পর্যবেক্ষণের আওতায় থাকা অবস্থায় এটি গ্রহণ করা উচিত ।

স্পিরুলিনা এবং মোরিঙ্গা দুটি সুপারফুডই স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্যে তথা জীবনে সামগ্রিক সুস্থতার জন্যে দারুণ পছন্দসই হতে পারে । কারণ এগুলির পুষ্টি-উপাদানের ঘনত্ব, উপকারিতার বিস্তৃত বিশালতা সুপারফুড হিসাবে সত্যিই অপরিসীম । কিন্তু আপনার ব্যক্তিগত পছন্দ অবশ্যই আপনার বর্তমান স্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কে আপনার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে । আপনার পছন্দ এবং লক্ষ্য অনুযায়ী আপনি বেছে নিন, প্রয়োজনে কোন পেশাদার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী বা পেশাদার ডায়েটেশিয়ানের সাহায্য নিন । যদি আমাদের দেওয়া তথ্য আপনার উপকারে আসে বা ভালো লেগে থাকে তাহলে পোস্টটি শেয়ার করার অনুরোধ রইলো ।

সুস্থ থাকুন, অনুপ্রাণিত থাকুন, অন্যকে সুস্থ থাকার জন্যে সাহায্য করুন ।